‘ওদের’ কথা কেউ বলে না
পক্ষকাল ডেস্কঃআজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। সারা বিশ্ব যখন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ দিবসটি উদযাপন করছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তখন আশাব্যঞ্জক নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের জান, মাল, ইজ্জতের কোন নিরাপত্তা নেই। মসজিদে খুন। মন্দিরে খুন। গীর্জায় খুন। পিলখানায় খুন। ক্যান্টনমেন্টে খুন। জেলহাজতে খুন। ডিবি অফিসে খুন। বেডরুমে খুন। এমনকি মায়ের পেটেও শিশু নিরাপদ নয়। পীর-মাশায়েখ, ইমাম- মওলানা থেকে শুরু করে যাজক, পুরোহিত কেউ রেহায় পাচ্ছে না। খুন হচ্ছে সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক, শিক্ষক, ছাত্র। পার্লামেন্ট মেম্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র কেউ রেহায় পাচ্ছে না। কাউকে কেটে ১২ টুকরো, কাউকে টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে, আবার পেট কেটে পাথর বোঝায় করে লাশ ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে নদীতে। যে খাল, বিল, ঝিলে মাছ থাকার কথা সেখানে এখন পাওয়া যায় লাশ। গুম হচ্ছে ভিন্নমতের রাজনীতিকরা। তাদের লাশও পাওয়া যায় না।
চলতি বছর নিখোঁজ হন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, শিক্ষক ড. মুবাশ্বার হাসান সিজার, ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত আহমেদ, সাংবাদিক উৎপল দাস, রাজীনিতক এম এম আমিনুর রহমান ও ছাত্র ইশরাক আহমেদ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে চার সহস্রাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৮৫৫টি হত্যাকাণ্ড। গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন ৫২ জন। বন্দুকযুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৮৩ জন। এছাড়া ৫ বছরে নিখোঁজ হয়েছেন ৫২০ জন।
সবশেষ মঙ্গলবার নিখোঁজ হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। সাংবাদিক উৎপল দাস নিখোঁজের দু’মাস পার হলেও এখনও তার সন্ধান মেলেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুসারে, এ ছয় মাসে প্রতিদিন গড়ে ২৩টির বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। মোট মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ৪ হাজার ২৪০টি। এর মধ্যে ৮৫৫টি হত্যাকাণ্ড। গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন ৫২ জন। বন্দুকযুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৮৩ জন। একই সময়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৯৩ জন। নির্মমতা থেকে বাদ যাচ্ছে না নারী-শিশুও। হত্যার শিকার হয়েছে ১২৯ শিশু। আর নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১২৩ শিশু। বছরের প্রথম ৬ মাসে ৩০৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যৌন নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা, এসিড নিক্ষেপসহ আরও বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৯৯ নারী। এর বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অমানবিক শাস্তির শিকার ১২৭ শিশু শিক্ষার্থী।
এমনকি উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি হুমকির মুখে, দুর্নীতির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, সংসদ কার্যকর নয়, কোটি কোটি মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এবং প্রশাসনেও তীব্র অপব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে।’
বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ দুঃসময় বয়ে চলছে মন্তব্য করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনের পূর্বাপর বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারের কতগুলো শর্ত আছে, যেখানে একজন মানুষ সমাজে স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। সে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। কিন্তু সমাজের সবাই এ সুবিধা পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, একের পর এক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক নিখোঁজ হচ্ছে, তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে- তাদের খুঁজে বের করার মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র এ দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না।