শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » ছাত্রলীগের স্কুলে কমিটি বাতিলের নির্দেশ কাদেরের
ছাত্রলীগের স্কুলে কমিটি বাতিলের নির্দেশ কাদেরের
পক্ষকাল সংবাদ ঃ
বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদেরমাধ্যমিক স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নির্দেশ আসার এক মাসের মধ্যেই তা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই ধরনের কমিটির কোনো দরকার আছে বলে মনে করেন না তিনি। এগুলো সমালোচনা বাড়াবে।
কাদের বলেন, ‘সমালোচনা ডেকে আনার দরকার নেই স্কুল কমিটি করে। ছেলে মেয়েদের পিঠের উপর বই-পুস্তকের বোঝা, বাচ্চাগুলোকে দেখলে মনে হয় যেন মরুভূমির পথ বেয়ে চলছে। তারপর আবার রাজনীতির আরেক বোঝা। দরকার নেই এসবের।’
গত ২১ নভেম্বর মাধ্যমিক স্কুলে কমিটি তৈরি করতে সব সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। আর এক মাস পর আজ ২৩ ডিসেম্বর শনিবার ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে কমিটি বাতিলের নির্দেশ দিলেন কাদের।
স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নির্দেশ আসার পরই এ নিয়ে সমালোচনা হয়। শিক্ষার্থীরা কৈশোরেই রাজনীতিতে জড়িয়ে গেলে পড়ালেখায় তাদের মনযোগ থাকবে কি না, এ নিয়ে সংশয়ের কথা জানান বিভিন্ন জন। আবার ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহিংসতার প্রবণতা থাকায়ও এ নিয়ে এক ধরনের ভীতি ছড়িয়েছিল।
আবার স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নয় দিনের মাথায় পিরোজপুরে পিরোজপুরের নাজিরপুরে একটি স্কুলের শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় নাম আসে ওই স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। তখনও ছাত্রলীগের এই উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
যদিও স্কুল ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়ার পর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘স্কুলে কমিটি মোটেও নতুন কিছু নয়। আমাদের গঠনতন্ত্রে স্কুল কমিটি করার বিষয়টি আছে। আমাদের স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদকও আছে।’
তবে ওবায়দুল কাদের মনে করেন স্কুলে কমিটি গঠনের ধারণাটা সঠিক হয়নি। এটা এখন দরকার নাই। তিনি বলেন, ‘কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি থাকবে, থাকতে হবে।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ছাত্রলীগের কারণে আওয়ামী লীগের যেন সমালোচনা না হয়, সেই বিষয়টিও তুলে ধরেন কাদের। ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘কিছু কিছু বিশৃঙ্খলা যা ঘটে সে ব্যাপারে ছাত্রলীগকে সতর্ক থাকতে হবে। এটা নির্বাচনের বছর। যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে। কেউ কেউ অপকর্ম করবে আর সেটার দায় নেবে দল? সেটা হয় না। তাই বলি স্কুল পর্যায়ের কমিটি করার দরকার নেই।’
ছাত্রলীগের গুণগত গভীরতা নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় প্রশ্ন আছে আছে বলেও জানান কাদের।
ছাত্রলীগের সদস্য হলেই অপকর্ম করে যে পার পাওয়া যায় না সেটাও জানিয়ে দেন কাদের। বলেন, ‘অনেক ছাত্রলীগের ছেলে আছে এখন জেলে। কারো কারো যাবজ্জীবন জেল হয়েছে। কারো ফাঁসি পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু বিএনপির আমলে তাদের দলের কোনো নেতাকর্মীর কোনো বিচার হয়েছে?’
‘আমাদের লোকেরা অপকর্ম করে। সেই অপকর্মের ফলও ভোগ করতে হয়। একজন মন্ত্রীর ছেলে হয়ে জেলে, এমপি কারাগারে। আরেক এমপি আদালত থেকে জামিন নিয়ে আছেন। দুই মন্ত্রীকে দুদকের মামলায় কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিতে হয়। বিএনপির আমলে কি এসব কখনো হয়েছে?’ প্রশ্ন রাখেন কাদের।
রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় পরাজয় নিয়ে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনের সমালোচনাও করেন কাদের। বলেন, ‘কত রকমের লেখালেখি। কেউ কেউ জল খেয়ে রাজনীতিক কারণে নেমে পড়েছে আমাদের বিরুদ্ধে।’
কাদের বলেন, ‘কুমিল্লায় আমরা যখন আমরা আগের চেয়ে ৩৫ হাজার ভোট বেশি পেলাম সেটা কিন্তু কেউ লেখেনি। আবার নারায়ণগঞ্জে আমরা দেড় গুণ বেশি ভোট পেয়ে জিতেছি, সেটাও লিখেনি। এখন রংপুরের মেয়র নির্বাচনে আমরা হেরেছি কিন্তু কাউন্সিলরে প্রথম হয়েছি। সেটাও কেউ বলেনি। আমরা হারলাম কোথায়?’
নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপি অনাস্থা প্রকাশের সমালোচনা করে কাদের বলেন, ‘কুমিল্লায় আস্থা ছিল, রংপুরে নেই। কেমনে আপনাদের টেনে তুলবে? আপনারা তো দ্বিতীয়ও হন নাই, হয়ে গেলেন তৃতীয়। তৃতীয়কে টেনে তুলবে কীভাবে? নির্বাচন কমিশনের কি এটা দায়িত্ব? তাহলে তো আগামী নির্বাচনে তিনশত আসনই আপনাদের দিতে হবে।’
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ।