নওগাঁয় ডাক্তারের ভুলে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ
সুদাম চন্দ্র, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় বেসরকারি ‘ইসলামী ব্যাংক ও কমিউনিটি হাসপাতাল লিমিটেড’ এ সিজারিয়ানের পর প্রসুতি সুইটি বেগম (২৮) নামে এক গৃহবধু মারা যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তার স্বজনরা। শুক্রবার প্রসূতির সিজারিয়ানের পর অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তার ও কর্তৃপক্ষ রাতে অন্যত্র স্থানান্তর করতে বলে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে প্রসূতি সুইটি বেগম মারা যান। রবিবার সন্ধ্যায় নিহতের আত্মীয়স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের উপর ক্ষিপ্ত হলে উত্তেজিত অবস্থা বিরাজ করে। সুইটি বেগম জেলার রাণীনগর উপজেলার আব্দুল হাই রতনের স্ত্রী।
জানা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর’১৭ (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের দয়ালের মোড়ে ‘ইসলামী ব্যাংক ও কমিউনিটি হাসপাতাল লিমিটেড’ এ সিজারের জন্য গৃহবধূ সুইটি বেগমকে ভর্তি করান তার স্বজনরা। পরীক্ষা নিরিক্ষার পর সিজারিয়ানের জন্য দু’ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার প্রসূতির সিজার করেন। এসময় ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
সিজারের পর প্রসূতির শরীরে রক্ত দেয়া হয়। কিন্তু প্রসূতির রক্তপড়া বন্ধ হচ্ছিল না। দুপুরের পর থেকে প্রসূতির অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পেশার (পালস) কমতে শুরু করে এবং বুক ব্যাথা করা ও বমি হয়। এছাড়া শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাত ৯টার দিকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে বলে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত ১১টার দিকে ভর্তি করানো হলে আইসিইউতে চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে প্রসূতি সুইটি বেগম মারা যান।
এসময় সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডাক্তার খরচ ৬ হাজার টাকা, ঔষধ খরচ ৫ হাজার ৮০৯ টাকা এবং হাসপাতাল ও আনুষঙ্গি খরচ ৭ হাজার ১৭৫ টাকা সহ সর্বমোট ১৮ হাজার ৯৮৪ টাকা খরচ হয়েছে বলে রোগীর স্বজনদের জানান ইসলামী ব্যাংক ও কমিউনিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নিহতের ছোট ভাই নাজমুল হক বলেন, ডাক্তাররা প্রায় ৬-৭ ঘন্টা চেষ্টার পর প্রসূতিকে অনত্র স্থানান্তর করতে বলে। তারা পারবেনা আগেই বলতে পারত। রামেকে ভর্তির পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার মোবাইল ফোনে খোঁজ খবর নিতো প্রসূতির বিষয়ে। ডাক্তারের ভুলের কারণে বোনের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও সহকারী অধ্যাপক এবং স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার বলেন, সিজারিয়ানের পূর্বে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করানো হয়। সিজারের পর থেকেই বিষয়টি বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ করেই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। অনেক চেষ্টা করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করানো সম্ভব হচ্ছিল না। রাত ৯টা পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। অন্য রোগীরা যেমন ধকল সহ্য করতে পারত। সে হয়ত সেটা সহ্য করতে পারেনি। আমি যদি বুঝতেই পারতাম রোগীটা এতো দ্রæত খারাপ হয়ে যাবে, তাহলে আগেই তাকে ছেড়ে দিতাম।
তিনি আরো বলেন, আমার সিজারে কোন গন্ডগোল হয়নি। তবে শরীরে রক্ত দেয়ার কারণে হয়তো প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আসলে কি কারণে এসমস্যা হয়েছে তা আমি নিরুপন করতে পারিনি।
নওগাঁ ইসলামী ব্যাংক ও কমিউনিটি হাসপাতাল লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রোগীর স্বজনদের দ্রæত রাজশাহীতে স্থানান্তর করতে বলা হয়। রোগীকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করছিলাম। আর একদিনে হাসপাতালে যেহেতু ১৮ হাজার ৯৮৪ টাকা বিল হয়েছে নিহতের স্বজনদের উপর এটা ছেড়ে দেয়া হয়েছে তারা বিল পরিশোধ করবে কিনা।