মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » বাল্য বিবাহ ও ভিক্ষাবৃত্তি মুক্ত আদর্শ ইউনিয়নের কথা”
বাল্য বিবাহ ও ভিক্ষাবৃত্তি মুক্ত আদর্শ ইউনিয়নের কথা”
দিবাকর সরকার, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার একটি ইউনিয়ন ডালবুগঞ্জ। এ ইউনিয়ন সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাল্যবিয়ে বন্ধ ও ভিক্ষুকমুক্ত ইউনিয়ন হিসেবে।
কলাপাড়া উপজেলা তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা যায় প্রায় ছয় হাজার চার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ ইউনিয়নে গ্রাম ১৫টি। জনসংখ্যা ১০ হাজার ৫৬ ( ২০১২ সালের ৯ জুলাই এর তথ্য)। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেশ স্বাধীন পরবর্তী এ ডালবুগঞ্জ অবহেলিত থাকলেও গত চার বছরে গোটা ইউনিয়ন উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় এসেছে। উপজেলার প্রথম ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে “ভিক্ষুক মুক্ত ইউনিয়ন” হিসেবে। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, ও বয়স্ক নারীদের ভিজিএফ, ভিজিডি, বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের প্রতি ঈদে শাড়ি, লুঙ্গি বিতরণ করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় শুধু মাত্র ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গত চার বছরে ৩০ টি গভীর নলক‚প বসানো হয়েছে। এছাড়া ডালবুগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমে সাড়ে ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে ইটের রাস্তার লিংক রোড, এক লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে গংকের খাল খনন, ছোনখোলা বাঁধ ঘাট এলাকায় পাবলিক টয়লেট নির্মান, ৩৩জন বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলাকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন বিতরণ, রসুলপুর গ্রামে চাষাবাদ সুবিধার জন্য কৃষক সমিতিকে সেচ মেশিন প্রদান, দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মনসাতলী বিলের মধ্যে কালভার্ট নির্মান করে কৃষকদের পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা, এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে পূর্ব ডালবুগঞ্জ গ্রামে পানি নিস্কাশনের জন্য বক্স কালভার্ট নির্মান, ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ডালবুগঞ্জ চেীধুরী বাড়ি হতে বক্স কালভার্ট পর্যন্ত বিএফএস করা হয়েছে। এছাড়া স্বনামধণ্য ডালবুগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার সুবিধার জন্য এক লাখ টাকা ব্যয়ে টিন শেড শ্রেনিকক্ষ মেরামত করাসহ বিদ্যালয় হতে পুকুর পাড় পর্যন্ত এক লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ইটের রাস্তা করা হয়েছে। এক লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে নুরপুর দাখিল মাদ্রাসার বিধ্বস্ত শ্রেণিকক্ষ পুনঃনির্মাণসহ ডালবুগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিক, রমজানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসবাবাপত্র সরবরাহ ও একাধিক খাল ও পুকুর খনন করা হয়েছে। গ্রামের কৃষকদের বর্ষাকালীন পানি নিস্কাশন ও শুস্ক মৌসুমে সেচের পানি সুবিধার জন্য এ খাল খনন করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীনের পর এই ডালবুগঞ্জ তৎকালীন খাপড়াভাঙ্গা ইউনিয়নের সাথে থাকলেও ২০১০ সালে এ ইউনিয়ন ভাগ করে মহিপুর ইউনিয়ন ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন করা হয়। প্রথম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এম বি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন। তাঁর সময়ে ইউনিয়নে প্রথম উন্নয়ন পরিকল্পনার কাজ শুরু হলেও ২০১৩ সালের প্রথম নির্বাচনে আঃ সালাম সিকদার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পাল্টে যেতে থাকে গোটা ইউনিয়নের চিত্র।
ডালবুগঞ্জ ইউনিয়র পরিষদ সূত্রে জানা যায় , বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মানের কাজ চলছে। যাতে আগামী বর্ষা মেীসুমে ঝড়, জলোচ্ছাস থেকে রক্ষা পাবে বাঁধ সংলগ্ন পরিবারগুলো।
চার বছর আগের ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের চিত্র বর্ননা করতে গিয়ে ষাটোর্ধ আঃ রহিম মিয়া বলেন,“ আগে তো বর্ষা হইলে হাটতেই পারতাম না। হাডু হোমান (হাটু পর্যন্ত) পানি থাকতো রাস্তায়। খাল মইর্যা
যাওয়ায় বর্ষায় চাষের জমি ডুইব্যা থাকতো পানি নামতো না। অভাব ছিলো গ্রাম জুড়ে। কিন্তু এ্যাহন আর হেইদিন নাই। সব কিছুই পাল্টাইয়া গ্যাছে। সরকারতো কাজ করতেই আছে তার লগে চেয়ারম্যানও।”
ডালবুগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আঃ সালাম সিকদার জানান, তিনি গত চার বছরে এলাকার হতদরিদ্র, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের পুনর্বাসনে কাজ করেছেন। তাদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করেছেন। গ্রামীন জনপদ বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করেছেন। বাঁধ সংস্কার ও রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট ব্রিজের উন্নয়ন করেছেন। বিশুদ্ধ পানি সুবিধার জন্য প্রায় প্রতিটি গ্রামে একাধিক গভীর নলক‚প বসিয়েছেন। তবে এলাকার উন্নয়নে ও সামাজিক পরিবর্তনে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন বাল্যবিয়ে বন্ধ ও ভিক্ষাবৃত্তিকে। এ কাজে তিনি সফল হয়েছেন বলে দাবি করেন।