বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » চীন ও রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়ন
চীন ও রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়ন
পক্ষকাল ডেস্ক;
১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভগেনি প্রিমাকভ, যিনি ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন, বিশেষ করে এশিয়ায় আমেরিকার শক্তি ও প্রাধান্যের সাথে ভারসাম্য বিধান করতে হলে প্রধান অংশীদার হিসেবে ভারত ও চীনকে প্রয়োজন রাশিয়ার। পোখরান পরমাণু পরীক্ষার পর আমেরিকার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে ভারত সাথে সাথে প্রিমাকভের পরামর্শের সাথে একমত হয়।
এটি ছিল সুবিধা লাভের গ্রুপিং। গ্রুপের প্রতিটি সদস্য তার অবস্থানকে আলাদা আলাদাভাবে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্ক উন্নত করে। রাশিয়া অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝে যায়, অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল চীনের কাছে সে তার প্রাধান্য হারাচ্ছে। একসময় চীনের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করতে বিপুলভাবে ভূমিকা রেখেছিল যে রাশিয়া, এখন সে চীনের কাছে সাইবেরিয়ান গ্যাস বিক্রির ওপর নির্ভর করছে। মস্কো এখন হয়ে পড়েছে বেইজিংয়ের জুনিয়র অংশীদার।
প্রতিরক্ষা ক্রয়ের ব্যাপারে এখনো রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে আছে ভারত। শাখালিন গ্যাসক্ষেত্রের বড় বিনিয়োগকারী ভারত, দেশটি রাশিয়ার পরমাণু প্লান্টের বৃহত্তম ক্রেতা। জর্জিয়া, ইউক্রেন ও সিরিয়ায় রুশ সামরিক হস্তক্ষেপের প্রতি কৌশলে সমর্থন দিয়েছে ভারত, সেক্যুলার আসাদ সরকারের প্রতি রুশ পৃষ্ঠপোষকতাকেও সমর্থন করে ভারত।
বিনিময়ে ভারতের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক পরমাণু অবরোধ প্রত্যাহারের প্রয়াসে সমর্থন দেয় রাশিয়ার। তবে পরমাণু সরবরাহ গ্রুপে (এনএসজি) ভারতের অন্তর্ভুক্তির (চীন যেখানে ভারতের বিরোধিতা করছে) ব্যাপারে রাশিয়ার সমর্থন কমে আসছে বলেই মনে হচ্ছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ চীনের সাথে সুর মেলাচ্ছেন, এনএসজিতে ভারতের সদস্যপদের সাথে পাকিস্তানের সদস্যপদ লাভকে জুড়ে দিয়ে বলেছেন, তা হলেই তারা ভারতের সদস্যপদকে সমর্থন করবেন।
নয়া দিল্লি সফরকালে ল্যাভরভের অনাকাক্সিক্ষত পরামর্শ দিল্লির পর্যবেক্ষকেরা লক্ষ্য করেছেন। রাশিয়ার নিজস্ব ইউরেশিয়ান ট্রান্সপোর্ট করিডোর নির্মাণের কথা জানিয়ে ল্যাভরভ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মির দিয়ে যাওয়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ থেকে ‘উপকৃত’ হওয়ার পথ অনুসন্ধানের জন্য নয়া দিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ল্যাভরভ বলেন, চীনের ভূখণ্ড গত অবিভাজ্যতা লঙ্ঘনের ‘সুনির্দিষ্ট’ সমস্যা থাকলেও ‘রাজনৈতিক মতপার্থক্যের’ কারণে অন্য সবকিছু ত্যাগ করা ভারতের উচিত নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের চার পক্ষীয় জোট গঠন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রাধান্যের বিরুদ্ধে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য এই জোট গঠন করা হচ্ছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়ে থাকে।
চীনা প্রকল্পগুলোর উপকার নিয়ে ল্যাভরভ যখন কথা বলছিলেন, তখন তার চীনা প্রতিপক্ষ ওয়াং ইয়ি দোকলামের সামরিক অচলাবস্থা কিভাবে চীন-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে, সে কথা জানান। ওই উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ভারতের দায়দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে চীন-ভারত সম্পর্কের অগ্রগতি ‘তেমন সন্তোষজনক’ নয়। স্পষ্টভাবেই বলা যায়, দোকলাম ঘটনাটি সীমান্তে চীনা সামরিক বাহিনীর দুর্দমনীয় অবস্থানের ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে। নয়া দিল্লির উচিত হবে বিষয়টি মনে রাখা।
এখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান প্রশ্নে রুশ ও চীনা অবস্থান এক বিন্দুতে মিলে যাচ্ছে। পাকিস্তানে অ্যাটাকিং হেলিকপ্টার পাঠাচ্ছে রাশিয়া। সুবিদিত আফগান সূত্র জানিয়েছে, তালেবানকে অস্ত্র সরবরাহ করছে রাশিয়া। আফগানিস্তানে পাকিস্তানের উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়ন করার জন্য চীনের সাথে কাজ করছে রাশিয়া। এতসব ঘটনা সত্ত্বেও রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক এখনো গুরুত্বপূর্ণ রয়ে গেছে। ফলে মতপার্থক্যগুলো এড়িয়ে না গিয়ে সক্রিয়ভাবে সমাধান করা উচিত।