মধু বৃক্ষের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা
দিবাকর সরকার, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ঃ
শীতের সকাল আসে আলসেমী নিয়ে। লেপ মুড়ি দিয়ে থাকা রাতের শেষে জেগে ওঠে শিয়ালীর দল। ওদের কাজ রস সংগ্রহ, মিষ্টি গুড় আহরন। খেজুর রস, গোলের রস আর তালের রস আমাদের এলাকায় পাওয়া যায়। ঋৃতু নির্ভর এই কাজে অনেক শ্রম থাকলেও শিয়ালীর মুখে লেগে থাকে হাসি।
খেজুরের রস মানেই যেন নলেন গুড়। এ গুড়ের তৈরি পায়েস, মোয়া, সন্দেশ এই শীতে খাদ্য রসিকদের জিভে আলাদা তৃপ্তি যোগায়। আর তাই পৌষের শুরুতে খেজুর রস সংগ্রহ করতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও আঁটঘাঁট বেধেঁ গাছ কাটতে শুরু করেছেন গাছিরা। যদিও অতীতের মত খেজুরের রসের সেই সুদিন আর নেই। গোল গাছের গুড়ের কদরও কম নয় এ অঞ্চলে। এ রস দিয়ে সুস্বাদু পায়েস তৈরী করা হয়। গোলের গুড় কৃমিনাশক বলে মনে করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা তবে মানুষ প্রকৃতির যেভাবে বিনাশ ঘটাচ্ছে তাতে এক সময় খেজুর গাছ, তাল গাছ এবং গোলগাছের যে আধিক্য ছিল তা এখন অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া ইটভাটার জ¦ালানিসহ বিভিন্ন কাজে যেভাবে এসব গাছ কেটে বিনাশ করা হচ্ছে তাতে গ্রাম বাংলার রসের ঐতিহ্য হয়তোবা হারিয়ে যাবে।
গোলগাছি রবিন হাওলাদার জানান, গোলগাছ অত্যন্ত লাভজনক, সহজসাধ্য এবং ব্যয়ও খুব কম। এ গাছ এমনিতেই জন্মে। কোন পরিচর্যা করতে হয়না। রস প্রক্রিয়াজাতকরন করে গুড় তৈরী করা হয়। তালের রস প্রসঙ্গে গাছি মো. করিম হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন তিন ধাপে প্রায় চার পাঁচ লিটার রস সংগ্রহ করি। তালের গুড়ের দাম একটু বেশী। খেজুর গাছি মোতালেব আকন বলেন, এবছর শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে প্রায় ২৫টি খেজুর গাছ কেটেছি। এ থেকে প্রতিদিন ২/৩ কলস রস সংগ্রহ করি। তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ৪/৫’শ টাকা আয় হয়।
মহিপুর রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার অলহাজ্ব হারুন অর রশিদ জানান, প্রাকৃতিক উপায়ে জন্মানো খেজুর গাছ এবং গোল গাছের রস খুবই সুস্বাধু। তবে এ সব গাছের কোন পরিসংখ্যান নেই। আর এসব গাছ রোপনের প্রতি লোকজনের তেমন কোন আগ্রহ না থাকায় দিন দিন এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।