সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » ই-পেপার | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার | সম্পাদক বলছি » শিক্ষাব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য, রমরমা বাণিজ্য
শিক্ষাব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য, রমরমা বাণিজ্য
কমরেডস ভয়েসঃ
লোকটা মজুর। কারওয়ান বাজারে মাল বইতে বইতে রাত কেটে যায় তার, কারণ তখন ট্রাকগুলো আসে সারাদেশ থেকে, মাল খালাস করতে হয়। সেই কাজ সেরে ক্লান্ত দেহে সকালে যারা বাজার করতে আসে, তাদের ফরমায়েশি করে তার আরও কিছু টাকা ওঠে। সকালবেলা ঝাঁকে ঝাঁকে ফুটফুটে ছেলেমেয়েগুলো যখন স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়, সে তখন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। এত কষ্টের রোজগার তার। এর একটা বড় অংশই যায় তার দু’টো ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জন্য।
আপনাকে অফিসে পৌঁছে দেবে যে সিএনজি চালক, সে আপনার ডাকে সাড়া না দিয়ে চলে যাচ্ছিল। আপনি নরম গলায় একটু অনুরোধ করতে সে-ও একটু নরম হলো। বলল, ‘পারব না ভাই, আজ মেয়ের স্কুলে পরীক্ষা, দিয়ে আসতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রিকশা নিয়েছেন। যাবেন শাহবাগ থেকে নীলক্ষেত। কোনো এক কথা প্রসঙ্গে চালকের সাথে একটু ভাব জমে গেল। এ কথা সে কথার মাঝখানে সে হঠাৎ মুখটা উজ্জ্বল করে বলে উঠল, ‘আপনি ভার্সিটির ছাত্র? আমার ছেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।’
অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে বাসার কাজের লোক; ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদার থেকে শুরু করে শিক্ষক ও চাকুরিজীবী টিকে থাকার জন্য দিনরাতের এই অন্তহীন পরিশ্রমের পেছনে তাদের একটা বড় উদ্দীপনা হলো- ছেলেমেয়েগুলো যাতে লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়। তার ছেলেমেয়েদের জীবন যাতে তার মতো কষ্টের না হয়। এজন্য সে তাদের লেখাপড়া শেখায়। সংসারের অনেক কিছু কেটেছেঁটেও সে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াটা করাতে চায়। কিন্তু দেশের শিক্ষাব্যবস্থার গতিপথ কি তাদের স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দিকে যাচ্ছে
পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটাই আজ এক বিরাট ব্যবসার ক্ষেত্র
২০১৮ সালের শুরুতে দেশের এই সাধারণ মানুষের কাছে বার্তাটা খুবই স্পষ্ট। ‘টাকা থাকলে সন্তানদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাবে।’ যত টাকা খরচ করার সামর্থ্য আপনার আছে, আপনি সেই অনুপাতে দেশের অবস্থা সাপেক্ষে আপেক্ষিক অর্থে মানসম্মত শিক্ষা কিনে নিতে পারবেন। আগে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো রেজাল্ট করতে দেখা যেত, তাদেরকে শিক্ষক ও অন্যান্যরা মিলে সহায়তা করতেন। এসব ঘটনা আজ কদাচিৎ, কিছু কিছু ঘটনা পত্রিকায় আসে। এখানে ধাপে ধাপে শিক্ষা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে গেছে এবং প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল করলে আমরা দেখব -
এর মূল ধারাটা বেসরকারি। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর তথ্যানুসারে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯০ শতাংশের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি। তাদের ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৯.৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯৫.৩৯ শতাংশ, কলেজসমূহের প্রায় ৯৩ শতাংশই চলছে বেসরকারি ধারায়। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৩৮টি, অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯২টি। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ৮৯৭টির মধ্যে বেসরকারি রয়েছে ৫ হাজার ৬০৯টি অর্থাৎ প্রায় ৯৫ শতাংশই বেসরকারি। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় বড় অংকের টাকা লাগে, প্রতি মাসের বেতন ফি অনেক বেশি, আবার পাবলিক পরীক্ষার সময়ে বোর্ড নির্ধারিত ফি এর বাইরে বেশি ফি নেয়া হয়। মাসিক বেতন ও ভর্তি বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো নিয়মাবলি সেখানে নেই। ফলে ভর্তি প্রক্রিয়া, বছর বছর ভর্তি ফি, মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি - এই চার স্তরে স্কুলগুলোতে বাণিজ্য হয়। এগুলো হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সরাসরি ব্যবসার দিক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পর একটা শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ হলো মূল্যায়ন ব্যবস্থা অর্থাৎ পরীক্ষাপদ্ধতি। বর্তমানে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির মধ্যে পাবলিক পরীক্ষা চারটি। এই পরীক্ষাগুলো বাস্তবে ব্যবসার একটা বিরাট ক্ষেত্র। শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা এক হিসেবে দেখিয়েছেন, প্রত্যেক ছাত্র একটি করে গাইড বই কিনলেও শুধু পিইসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বছরে ১৭৫ কোটি টাকার ব্যবসা হওয়া সম্ভব। বাস্তবে তার আরও বেশিই হয়। আর এই পরীক্ষাগুলোকে কেন্দ্র করে যে কোচিং ব্যবসা হয় তার ছবিটিও ভয়ঙ্কর। ‘এডুকেশন ওয়াচ’ এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রায় ২ লক্ষ কোচিং সেন্টার আছে। এই কোচিং সেন্টারগুলোর আয় বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও প্রায় ৮৬ শতাংশ স্কুলে সাধারণ শ্রেণিকার্যক্রম বাদ দিয়ে কোচিং করানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সেখানে আলাদা টাকা নেয়া হয়।
পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা ও তার আয়োজনই শুধু নয়, এর প্রশ্নপত্র নিয়ে এখন চলছে একটা বিরাট ব্যবসা। প্রশ্নপত্র ফাঁস আজ একটা সাধারণ বিষয়। এখন কোন পরীক্ষার প্রশ্ন আগে পাওয়া যায় না? পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএস, ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরের চাকুরির পরীক্ষা - সকল প্রশ্নপত্রই পাওয়া যায় পরীক্ষার আগে। এ সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চিত্র হলো, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন পর্যন্ত এখন ফাঁস হচ্ছে, তাও একেবারে প্রথম শ্রেণি থেকেই। ১৯৭৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সর্বপ্রথম প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। ১৯৭৯ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ২৯ বছরে ৫৫টি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। আর ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ (টিআইবি)র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত চার বছরেই বিভিন্ন পরীক্ষায় মোট ৬৩টি বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
স্কুলের ভর্তিপরীক্ষা, ভর্তি, মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফি নিয়ে ব্যবসা; পড়া ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে গাইড বই ও কোচিং নিয়ে ব্যবসা - ফলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা আজ ব্যবসাকেন্দ্রিক। আবার ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন’ এর নামে যত কাঠামোগত পরিবর্তন হয় সবগুলোই এক একটা ব্যবসার সুযোগ নিয়ে আসে। ১৯৯৬ সাল থেকে যখন ইংরেজিতে ‘কমিউনিকেটিভ ইংলিশ’ নিয়ে আসা হলো, তখন একে কেন্দ্র করে গাইড বইয়ের বিরাট বাজার তৈরি হয়। কীভাবে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে, কীভাবে পড়তে হয় - একে কেন্দ্র করে কোচিং ব্যবসাও জমে যায়। ঠিক একই কা- হল ‘সৃজনশীল প্রশ্নপত্র’ চালু করার সময়েও। শিক্ষার উন্নতি, বিকাশ, প্রসার - এ সকল কথা বলে যা-ই করা হোক না কেন, বাস্তবে তা ব্যবসা বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উন্নতি করেনি।
পিইসি, জেএসসি আর কতদিন চলবে?
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির এই পরীক্ষাগুলোকেও বাস্তবে ব্যবসার ক্ষেত্র ছাড়া আর কিছু বলা সমীচীন হবে না। ব্যবসা ছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে সেখানে। সরকার ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ বাস্তবায়নের জন্য যেকোনোভাবে প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ ছেলেমেয়ের অন্তর্ভুক্তি দেখাতে চায়, বিরাট একটা অংশ এই স্তর সমাপ্ত করেছে তাও দেখাতে চায়। ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ও সরকারের বিশ্বসভায় করা অঙ্গীকার পূরণ করার কৌশল - এ দু’য়ের ফাঁদে পড়ে নিষ্পেষিত হচ্ছে আমাদের ছোট ছোট শিশুরা। এই পরীক্ষাগুলো তাদের উপর মানসিক চাপ তৈরি করছে, তাদের অভিভাবকদের উপর সীমাহীন আর্থিক চাপ তৈরি করছে। উপরন্তু ৮/১০ বছর বয়সেই পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়াসহ নানা অনৈতিক কাজের সাথে পরিচিত হচ্ছে তারা। এই পরিস্থিতি দেখে অনেকে আবার প্রাথমিক স্তরে পাশ-ফেলই তুলে দিতে বলছেন। সেটাও সঠিক চিন্তা নয়। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হতে হবে, সেটা প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে স্কুলগুলো যেভাবে করত সেভাবে করবে। কিন্তু পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে দু’টো পাবলিক পরীক্ষা অবশ্যই বাতিল করা প্রয়োজন।
ব্যবসা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের, অথচ শিক্ষকরা অনশনে
IMG_20180102_141223 copyকিছুদিন আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অনশনে বসেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল বেতন বাড়ানোর, তাদের বেতন প্রধান শিক্ষকের পরবর্তী গ্রেডে আনার। এবার আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও’ভুক্তির দাবিতে। সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা সারাদেশে সাড়ে তিন লক্ষ, এমপিও’র দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংখ্যা নয় লক্ষ। তারা যে আহামরি কিছু একটা দাবি করছেন তা নয়। তাদের দাবি বাস্তবসম্মত। অথচ এই দাবিকে কানেই তুলছে না সরকার। দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপী ঋণ পড়ে আছে বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাতে। তার উপর গত পাঁচ বছরে গার্মেন্টস মালিকরা সরকারের কাছ থেকে নগদ সাহায্য পেয়েছে ৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। গত নয় বছরে ৭০টা গার্মেন্টসের ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে সরকার। অথচ দেশে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার টাকা। সহকারী শিক্ষকরা সব মিলিয়ে হাজার পনেরো বেতন পান। নন এমপিও বেসরকারি বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের নির্দিষ্ট কোনো বেতনই নেই। দেশটা গড়বে কারা? কারা গুরুত্বপূর্ণ? শিক্ষকদের মানহীন জীবনে ফেলে রেখে মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করা কি সম্ভব? হাতে গোনা কিছু শিক্ষক ছাত্র পড়িয়ে একটা ভালো উপার্জন করেন। গোটা শিক্ষক সমাজের তারা কত অংশ? বাকিদের কী অবস্থা? হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক শিল্পপতিরা হরতালের কারণে ক্ষতি হয়েছে দেখিয়ে রাষ্ট্রের কাছে অর্থ সাহায্য পেতে পারেন, তাদের রাস্তায়ও নামতে হয় না। তাদের কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে দেয়া হয়, আমদানি শুল্ক মওকুফ করা হয়, ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমিয়ে দেয়া হয়। অথচ দেশের শিক্ষকরা শীতের রাতে রাস্তায় শুয়ে থাকেন একটা মানসম্মত বেতনের দাবিতে।
শিক্ষাখাতে বাজেটে বরাদ্দ দিনের পর দিন কমছে। অথচ বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। গোটা অবস্থাটা চোখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এটা এখন একটা ব্যবসার ক্ষেত্র এবং তা পুরোপুরি বেসরকারিকরণের দিকে যাচ্ছে। ফলাফলে শিক্ষার অধিকার সাধারণের নাগালের বাইরে যাচ্ছে। উপরন্তু ব্যবসা মানে সর্বোচ্চ মুনাফা। কোনোপ্রকার নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধের ব্যাপার সেখানে নেই। খাটানো টাকা উঠে আসছে কিনা তাই দেখার বিষয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য। এটা যদি ব্যবসার জায়গা হয় তাহলে এর মূল উদ্দেশ্যই আর থাকে না।
যে ছবিটি আমরা দেখতে চাইনি
আমাদের দেশের স্বল্প বেতনের কর্মচারী, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের সন্তানরাই দেশের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় অংশ। অথচ তাদের চড়া দামে শিক্ষা কিনে নিতে হচ্ছে। শিক্ষাকে ব্যবসার ক্ষেত্র করাটা সরকারের একটা খামখেয়ালিপনা নয়। সারা বিশ্বের ব্যবসায়ী-পুঁজিপতিদের যখন চরম দুর্যোগকাল, বিশ্ব পুঁজিবাদ যখন গভীর সংকটে নিমজ্জিত, তখন তারা ব্যবসায়ের আর কোনো ক্ষেত্র না পেয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সেবাখাতগুলোকে ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে বলে। আমাদের মতো অনুন্নত দেশের মানুষও লেখাপড়ার জন্য খরচ করতে দ্বিধা করে না, অন্য সকল দিক সংকুচিত করে দিয়েও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় খরচ করে। কারণ শিক্ষার সাথে দক্ষতা অর্জন সম্পর্কিত। ন্যূনতম শিক্ষা না থাকলে দক্ষতা অর্জন সম্ভব হয় না। দক্ষতার সাথে জড়িত মানুষের উপার্জন, তার বেঁচে থাকার মান, তার সামাজিক সম্মান। ফলে এখানে টাকা খাটালে মুনাফা নিশ্চিত। তাই সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীদের সংগঠন WTO -এর সম্মেলনে ১৯৯৪ সালে GATS চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং বাংলাদেশ তাতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য দেশের শিক্ষাখাত উন্মুক্ত করাকে সে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে GATS -এর কার্যকরিতা আমরা আরও স্পষ্ট বুঝতে পারি। ফলে এখন কারও কথা, কারও দাবিই শোনার ব্যাপার সরকারের নেই। ধীরে ধীরে সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি খাতে যাবে এবং যারা ছাত্রবেতন ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় লাভ করে নিজেদের বাজারে টিকিয়ে রাখতে পারবে তারা থাকবে, বাকিরা বিদায় নেবে - সরকারের শিক্ষা সম্পর্কিত নীতি এটাই। একে না রুখে দিতে পারলে সামনে আমাদের জন্য এক ভয়ঙ্কর সময় অপেক্ষা করছে।
সাম্যবাদ জানুয়ারি ২০১৮