বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » বিরোধিতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশে মাওলানা সাদ
বিরোধিতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশে মাওলানা সাদ
পক্ষকাল সংবাদ :দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের জিম্মাদার মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দিনের একটি জামাত বিরোধিতা উপেক্ষা করে গাজীপুরের টঙ্গীতে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন ।
সেখান থেকে পুলিশ প্রহরায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনি রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে পৌঁছেন। আপাতত সেখানেই তিন দিন অবস্থান করবেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরে দিল্লি থেকে আগত থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩২১ ফ্লাইটে একটি বুধবার দুপুর পৌনে ১টায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরে কর্তব্যরত পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা জানান, ১২ টা ৪৫ মিনিট তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় তার সাথে একটি জামায়াতও ছিল। পুলিশ প্রহরায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনি রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে পৌঁছেন। আপাতত সেখানেই তিন দিন অবস্থান করবেন।
অপরদিকে বিমানবন্দর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাওলানা সাদ বিমানবন্দরে আসার পর পরই পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা দেখা করেছেন। পরিবেশ পরিস্থির উপর নির্ভর করে তিনি বিশ্ব ইজতেমায় যোগদান করবেন। আন্দোলনের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বুধবার বেলা ১১ টা থেকে মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে বিক্ষোভ করছেন হেফাজত ও বেফাকের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে বিমানবন্দর এলাকায় আগমনের পক্ষের কর্মীদেরও দেখা যায়।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা থেকে উত্তরা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পরেন যাত্রী সাধারণ।
এর আগে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ঢাকায় আসা ঠেকাতে বিক্ষোভ ও তার বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আন্দোলন থেকে তাবলিগ জামাতের ৫৩ তম বিশ্ব ইজতেমায় তাঁকে না আসার আহ্বান জানানো হয়।
বিমানবন্দরের গোলচত্তরে বুধবার বেলা ১১ টা থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়। তবে মাওলানা সাদের আসার পক্ষ ও বিপক্ষের মুসলিমরা বর্তমানে বিমানবন্দর এলাকায় রয়েছেন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ১২ জানুয়ারি এবারের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হলেও মাওলানা সাদ বুধবার (১০ জানুয়ারি) বাংলাদেশে আসবেন। বেলা ১টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবন্দরে তার অবতরণের কথা ছিল।
অপর একটি সূত্র জানায়, মাওলানা সাদ কান্ধলভী ও নিজামুদ্দিন মারকাজের সদস্যদেরকে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ কূটনৈতিক ভিসা দিয়েছে। তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশগামী বিমানের টিকিটও বুকিং দিয়েছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ইজতেমায় দিল্লির নিযামুদ্দিন মারকাজের মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলবীর অংশগ্রহণকে প্রতিহত করতে উত্তরা এলাকার বিভিন্ন মসজিদে এবং বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এলাকার মসজিদগুলোতে আলেম ওলামা ও মাদরাসার শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন। এতে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি রয়েছেন।
মাওলানা সাদ কান্ধলভী তাঁর নিজের বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার না করে এবং সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে মাওলানা সাদের ইজতেমায় আসা অনুচিত এমন দাবিতেই তারা জড়ো হচ্ছেন।
জানা গেছে, দিল্লির নিজামুদ্দিনের ‘বিতর্কিত’ মুরব্বি মাওলানা মুহাম্মদ সাদের আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় আসার বিরোধিতা করছেন বাংলাদেশ-ভারতের তাবলিগ-জামাতকর্মী ও কওমিপন্থী আলেমদের একাংশ। তারা বলছেন, দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সাদের ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের কারণে তার সঙ্গে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আহমদ শফীসহ বাংলাদেশের সিনিয়র আলেমরাও চান, বিশ্ব ইজতেমায় সংঘর্ষ এড়াতে সাদ ও তার অনুসারী বা বিরোধীরাও যেন ইজতেমায় অংশ না নেন। যদিও তাবলিগের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ খান শাহাবুদ্দীন নাসিম, অধ্যাপক ইউনূস শিকদার, মাওলানা মোশাররফ হোসাইন সাদের ঢাকা সফরের পক্ষে রয়েছেন।
বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাওলানা সাদের ঢাকা আসাকে ঠেকাতে মুসল্লিদের একাংশ গোলচত্তর এলাকায় বিক্ষোভ করছে। এতে সাদের ঢাকা আসার পক্ষেরও লোকজন রয়েছেন। বর্তমানে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সকল অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে অত্র এলাকায় উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সহ শতাদিক পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। এছাড়াও র্যাবসহ সাদা পোশাকে ডিবি, সিআইডিসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও বিমানবন্দর এলাকায় রয়েছেন বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য যে, শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে গত ৭ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ায় অনুষ্ঠিত তাবলিগের শুরা সদস্য ও আলেমদের বৈঠকে এবারের ইজতেমায় মাওলানা সাদের না আসার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিবর্তে বৈঠকের ফয়সাল নিজামুদ্দিনের দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের আসার সিদ্ধান্ত দেন।
ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত সেদিন রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে হস্তান্তর করা হয়। তখন সবাই জানতেন ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের বাইরে মাওলানা সাদ বাংলাদেশে আসবেন না।
তাছাড়াও ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর প্রতি আস্থাশীল নয় বলেই ভারত সফরকারী প্রতিনিধি দলের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সে প্রতিবেদনের কপিও বাংলাদেশের আলেমদের গঠিত কমিটির প্রতিনিধির সরকারপক্ষকে হস্তান্তর করেন।
তবে ভারতে সফরকারী সদস্যদেরকে মাওলানা সাদ ও তাঁর পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন সেখানে তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন যে, আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তিনি এবারের বিশ্ব ইজতেমায়ও অংশগ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, বিমানবন্দর এলাকার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা - ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকাগামী রোডে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির সামনের বেশী অর্ধেক মহাসড়ক আন্দোলনরতদের দখলে থাকতে দেখা গেছে। অপরদিকে মুসল্লিদের চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে।