বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » আমরণ অনশনে শুরুর দিনে ২২ মাদ্রাসা শিক্ষক অসুস্থ
আমরণ অনশনে শুরুর দিনে ২২ মাদ্রাসা শিক্ষক অসুস্থ
পক্ষকাল সংবাদঃ
ঢাকা: জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। অনশন শুরুর প্রথম দিনে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২২ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়া পাঁচজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন আসমা বেগম (৫৮), শামসুল আলম (৪৭), আলামিন (৪০), এনামুল (৫২) ও রুহুল আমিন (৩৫)।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির ডাকে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। প্রেসক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচির নবম দিনের মাথায় মঙ্গলবার থেকে তারা এই অনশন শুরু করেন।
অনশনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাত ও রাস্তার একাংশে শিক্ষকেরা শুয়ে-বসে অনশন করছেন। তীব্র শীত থাকায় শিক্ষকদের কষ্ট আরও বেড়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, যতই কষ্ট হোক, এবার দাবি পূরণ ছাড়া বাড়ি যাবেন না।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় তারা এমন কঠোর কর্মসূচি শুরু করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দাবি পূরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন।
সারা দেশে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ১৮ হাজার ১৯৪টি হলেও চালু আছে ১০ হাজারের মতো। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার ৬ হাজার ৬৭৬ জন শিক্ষক সরকার থেকে কিছু ভাতা পান। প্রধান শিক্ষকেরা মাসে আড়াই হাজার এবং সহকারী শিক্ষকেরা ২ হাজার ৩০০ টাকা পান। অন্যরা সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পান না।
এর আগে- গত শনিবার সমিতির সভাপতি কাজী রুহিল আমিন চৌধুরী বলেছেন, ১৯৯৪ সালে জারি হওয়া একটি পরিপত্রে রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে বিগত সরকারগুলোর আমলে ধাপে ধাপে বেতন বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো বেতন বাড়েনি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বর্তমান মহাজোট সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করে। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসাতেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো সরকারি একই সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
কাজী রুহিল আমিন চৌধুরী বলেন, ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সরকারের সব কাজে অংশগ্রহণ করে। অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পায়। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা তেমন কোনও বেতন ভাতা পান না। তবুও তারা শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাত্র ১৫১৯টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ২৫০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ২৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি মাদ্রাসা শিক্ষকরা এত বছর ধরে বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত। এটা অমানবিক এবং শিক্ষকদের অবমাননা ছাড়া কিছুই না।
উল্লেখ্য, নিবন্ধনকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে জাতীয়করণের দাবিতে ১ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তারা। গতকাল তা অনশনে রূপ নিল।