শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » অপরাধ | অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » এমপি ও নেতানেত্রীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন কি প্রধানমন্ত্রী ?
এমপি ও নেতানেত্রীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন কি প্রধানমন্ত্রী ?
পক্ষকাল ডেস্ক
ঢাকা: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছর পূর্তি আজ। অর্থাৎ সফলতা-ব্যর্থতায় এই সরকারের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। অনেক অর্জনের মাঝেও ব্যর্থতার পাল্লাও একেবারে কম নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার সামনের পথ যে একেবারেই মসৃণ হবে তা বলার উপায় নেই। কেননা, উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতি মূলতঃ অস্থিতিশীল, কখন কী ঘটে তা বলার উপায় নেই। এত সুদিনেও শেখ হাসিনার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষয়মান-
প্রথমত: শেখ হাসিনার ৯ বছরের শাসনে সবচেয়ে বড় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। বিরোধীদের মতে শেখ হাসিনার শাসন বঙ্গবন্ধুর ৭৫ এর বাকশাল ও এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরশাসনকেও হার মানিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রধান বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন সরকার নানামুখী চ্যালেঞ্জ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মতে, দেশ স্বাধীনের পর এই সময়ে সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সঙ্কটে পড়েছে। বিরোধীদের দমন-নিপীড়নে দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে।
১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বিষয়টি কূটনীতিক দুনিয়াও ভালভাবে দেখেনি। এক্ষেত্রে সামনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ফলে আগামী দিনে এই দেশি-বিদেশি চাপ সামলিয়ে উঠে সরকার পরিচালনা এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে পারাটাই শেখ হাসিনার সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্বিতীয়ত: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে স্বাভাবিকভাবেই মানবাধিকার প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার মতে, শেখ হাসিনার ৯ বছরে বাংলাদেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। বিশেষ করে গুম ও ক্রসফায়ার ইস্যুতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো খুবই সোচ্চার।
তৃতীয়ত: সেই ২০০৯ সাল থেকেই হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা বিরোধী মত দমন করে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্বাসনে পাঠিয়েছে। এমন কী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের অনেকের অভিযোগ, দেশে এক ধরনের একদলীয় শাসন চলছে। অবশ্য তাদের এধরনের অভিযোগের স্বপক্ষে কিছু যৌক্তিক কারণ উত্থাপন করতে সক্ষমও হয়েছেন। যেমনটি বলা যায়- দেশের প্রধান বিরোধী শক্তিকে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, বিরোধী জোটের নেত্রীকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং বিরোধ নেতাকর্মীদের উপর দমন নিপীড়নের অভিযোগ সরকার উড়িয়ে দিতে পারছে না। ফলে ভবিষ্যৎ সহনশীল রাজনীতির স্বার্থে দেশে একটি সুস্থ সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরেয়ে আনাই শেখ হাসিনা সরকারের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চতুর্থত: উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতি ও উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বলা যায়- এটা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। সরকার সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দুর্নীতি রোধ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সরকারের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সরকারের বিগত পাঁচ বছরে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে। বিগত নির্বাচনে জমা দেয়া হলফনামায় দেয়া তাদের সম্পদ বিবরণী থেকে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। সমালোচনা হয়েছে বাইরেও। পাঁচ বছরে বহু গুণ সম্পদের মালিক হওয়া মন্ত্রী-এমপিদের কেউ কেউ নয়া মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও উন্নয়নখাতের দুর্নীতি বেশি দৃশ্যমান। সামনে দুর্নীতি রোধ ও সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে আগামী দিনে দেশকে উন্নয়নে পথে এগিয়ে নিতে হলে শেখ হাসিনাকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফলে এক্ষেত্রে তিনি কতটা সাহসী ভুমিকা নিতে পারেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
পঞ্চমত: দ্বিতীয়বারের মতো শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকায় আধিপত্য, পদ-পদবী, টেন্ডার পাওয়া-ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, বিরোধীদের ওপর হামলা, হত্যা-খুন, নারী-শিশু নির্যাতন, যৌন কেলেঙ্কারী ইত্যাদি নিয়ে চলছে দলের ভেতর নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অরাজকতা। ফলে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করাও শেখ হাসিনার সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এদেরকে সময়মত নিয়ন্ত্রণ করে দলে শৃংখলা ফিরিয়ে না আনতে পারলে যে সামনে দিনে কঠিন মাশুল দিতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বর্তমানে রাজনীতিতে নতুন করে উচ্চারিত হচ্ছে গভীর ষড়ন্ত্রের কথা। মন্ত্রী-এমপিদের মুখেও একই কথা- শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে গভীর চক্রান্ত চলছে। এতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরগরম হলেও সবার চোখেমুখে কিছুটা আতঙ্কের ছাপ। তাহলে দেশে কী ঘটতে যাচ্ছে? এ প্রশ্ন এখন সবার। সবমিলেই সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী দিনে রাজনীতিতে টিকে থাকাটাও শেখ হাসিনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
ফলে দল নয়, রাষ্ট্রীয় পদে থেকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এখন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুতে হবে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন পথে হাটেঁন সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সামনের পথ যে একেবারেই মসৃণ হবে সেটা বলার উপায় নেই।