শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | রাজনীতি » দুর্নীতির মামলার আসন্ন রায়, গ্রেফতার অভিযান, নির্বাচন: কোন পথে যাবে বিএনপি
দুর্নীতির মামলার আসন্ন রায়, গ্রেফতার অভিযান, নির্বাচন: কোন পথে যাবে বিএনপি
কাদির কল্লোল বিবিসি বাংলা, ঢাকা
অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিএনপিকে। কোন দিকে যাবেন খালেদা জিয়া?
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়টি কোনদিকে যায় সেটা নিয়ে যখন বিএনপি চরম শংকায় আছে, তখন কাল দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা বসতে যাচ্ছে ঢাকায়।
গত দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে।
কিন্তু ঠিক কি নিয়ে কথা হবে এই সভায়?
দুর্নীতির মামলার সম্ভাব্য রায় পরবর্তী কৌশল? দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এখন যে ধরপাকড় অভিযান চলছে সেটি? নাকি বছর শেষে যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা সেটি?
দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে যে বৈঠকে হয়তো সব কিছু নিয়েই কথা হবে। বিশেষ করে দলের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আশা করছেন, সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে এখান থেকে একটা দিক নির্দেশনা হয়তো পাওয়া যাবে।
এই মূহুর্তে বিএনপির এক নম্বর মাথা ব্যাথা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় কোন দিকে যায় সেটি। ৮ই ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায় হবে বলে কথা রয়েছে।
এ নিয়ে বিএনপি আগে থেকেই মাঠ গরম করার একটা চেষ্টা করছিল। কিন্তু সরকার যেরকম মারমুখী অবস্থান নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে তাতে কতটা সফল হওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
বরিশাল থেকে বিএনপির একজন নেতা এবায়দুল হক চাঁন বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলছিলেন, তারা দলের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবেন।
“আমরা একটা দিক নির্দেশনা চাই যে, কিভাবে আগামী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আমরা যে এতদিন আন্দোলন করলাম নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য।সেই নির্বাচন আমরা কিভাবে পেতে পারি। মাঠ পর্যায়ে আমরা সবাই প্রস্তুত নির্বাচনের জন্য।”
ছবির কপিরাইট STR/AFP/Getty Images
Image caption দুর্নীতির মামলার রায় কোন দিকে যায় তা নিয়ে উদ্বেগে বিএনপি
বরিশাল বিএনপির এই নেতা আরও বলেছেন, “দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা কি পজিশনে আছে? আমরা যারা মফস্বলে বাস করি, আমরা যে জিনিসটা টিভিতে দেখি আমরা কোন নেতার মুখ থেকে সরাসরি শুনতে পাচ্ছি না। সে ব্যাপারেও আমরা একটা দিক নির্দেশনা পাওয়ার আশা করি।”
বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতারা ২০১৪ সালের মতো এবার নির্বাচন থেকে দুরে থাকতে চান না। তবে একই সঙ্গে তারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার রায়কে ঘিরে রাজপথে আন্দোলন করার পক্ষে। তারা চান এটাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আবারও আন্দোলন গড়ে তুলুক বিএনপি।
তবে শেষপর্যন্ত দলীয় নেত্রী কি সিদ্ধান্ত দেবেন, সে দিকেই বিএনপির তৃনমুলের দৃষ্টি থাকবে বলে তাদের অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে।
উত্তরের জেলা বগুড়ার বিএনপির একজন নেতা সাইফুল ইসলাম বলছিলেন, “আমরাতো নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছি।একবারতো একারণে আমরা নির্বাচন করিনি। এ ব্যাপারে আমাদের এই ফোরামে একটা সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও মনে করছেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় এগিয়ে আসায় বিভিন্ন জায়গায় তাদের দলের ভিতরের কোন্দল বা দ্বন্দ্ব চাপা পড়েছে। এমুহুর্তে তাদের দল অনেকটা সংগঠিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিটাকে কাজে লাগিয়ে এগুনোর ব্যাপারে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসা উচিত বলে মনে বিএনপি একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী নিলুফার চৌধুরি মণি।
“দল যাতে গঠনমূলকভাবে এগুতে পারে, চলতে পারে, সে ব্যাপারে তো নীতি-নির্ধারকদের একটা বার্তা থাকবে। সেটাই আমরা আশা করছি।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ৫০২ সদস্যের। তাদের সাথে দলটির ৭৫টি সাংগঠনিক কমিটি সভাপতিরা এই বৈঠকে অংশ নেবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের দমননীতি এবং চাপের মুখে এখন বিএনপি একটা পরিস্থিতিতে রয়েছে।এমন পটভূমিতে তৃণমুলের মতামত শুনে দলীয় কৌশল ঠিক করার জন্য এই বৈঠককে তারা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন।
“এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ এই জন্যে যে, নির্বাচনের কিছুদিন বাকি আছে। আমাদের সাংগঠনিক কিছু কার্যক্রমও বাকি আছে। একইসাথে আমাদের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলাগুলো দেয়া হয়েছে। তার দু’টোর বিচার কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। এসব নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ কি ভাবছেন? তা এই বৈঠকে উঠে আসবে।”
এদিকে, বৈঠকের আগের দিনে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাদের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
শুক্রবার রাতে বিএনপির আরও দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আমানউল্লাহ আমান এবং নাজিমউদ্দীন আলমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। এরা দুজনেই ১৯৯০ এর এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন। র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান জানান, মহাখালি ডিওএইচএস এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বিএনপি অভিযোগ করেছে গত চারদিনে তাদের প্রায় দুশো নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।