
বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » অপরাধ | ই-পেপার | তথ্য-প্রযুক্তি | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » সাতই মার্চের জনসভা ঘিরে যৌন হয়রানি
সাতই মার্চের জনসভা ঘিরে যৌন হয়রানি
অভিযোগ জানাতে কেন ফেসবুক বেছে নিলেন বাংলাদেশের নারীরা?
বাংলামটর মোড়ে শ্লীলতাহানির বর্ণনা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন একজন ভুক্তভোগী সাতই মার্চ আওয়ামী লীগের ঢাকার জনসভা কেন্দ্র করে অনেক নারী যৌন হয়রানি ও অশ্লীল মন্তব্যের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
তাদের সবাই এই অভিযোগ করেছেন ফেসবুকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত পথে প্রতিকার না পাওয়া হতাশা থেকেই নিজেদের ক্ষোভ জানাতে তারা ফেসবুকে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তার বার্ষিকী উদযাপনে বুধবার ঢাকায় একটি জনসভার আয়োজন করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
যৌন হয়রানির শিকার নারীরা অভিযোগ করেছেন, সেই সমাবেশে আসা লোকজন তাদের অশ্লীল মন্তব্য করেছেন, শারীরিকভাবেও হেনস্থা করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ”শান্তিনগর মোড়ে একঘণ্টা দাড়ায় থেকেও কোন বাস পাইলাম না। হেটে গেলাম বাংলামটর। বাংলামটর যাইতেই মিছিলের হাতে পড়লাম। প্রায় ১৫-২০জন আমাকে ঘিরে দাড়াইলো। ব্যস! যা হওয়ার তাকে তাই। কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়েকে হ্যারাস করতেসে এটা কেউকেউ ভিডিও করার চেষ্টা করতেছে। আমার কলেজ ড্রেসের বোমাত ছিঁড়ে গেছে, ওড়নার জায়গাটা খুলে ঝুলতেছে। ওরা আমাকে থাপড়াইসে। আমার শরীরে হাত দিসে। আমার দুইটা হাত এতগুলা হাত থেকে নিজের শরীরটাকে বাঁচাইতে পারে নাই।”
এই স্ট্যাটাসটি অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর তিনি স্ট্যাটাসটি “অনলি মি” করে নিজের প্রোফাইলে লিখেছেন, “আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। পোস্টটা অনলি মি করেছি কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দেইনি।”
ভাইরাল হওয়া ভুক্তভোগী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে আরেক নারী লিখেছেন, ”আরো আছে। আজকে ডাক্তার দেখাতে আবার ল্যাব এইড যাব। একটা রিকশাও যাবে না। অনেকক্ষণ দাঁড়ায় থেকে একটা রিকশায় উঠলাম। …..রিকশা থামিয়ে শার্ট পইরা মাথায় কাপড় কেন জাতীয় টিজ শুনতে হইসে। ….উল্লেখ্য আমার মাও সাথে ছিল।”
একজন সুন্দর পরিবেশ হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, ”হাই সেক্সি, নিবা”” ক্যাম্পাসের জয় বাংলা মিছিল থেকে ভেসে আসা কিছু শব্দ এবং আমি বিরক্ত, হতভম্ব, উদ্বিগ্ন”.
তাদের এসব স্ট্যাটাস বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই এর বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ২০১৫ সালে নববর্ষের আয়োজনে অনেক নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় তদন্ত করে একজনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিয়েছিল পুলিশ। সেই ঘটনারও প্রথম অভিযোগ ওঠে ফেসবুকে।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের কর্মকর্তা নীনা গোস্বামী বলছেন, ”কোন ধরণের প্রতিকার পাওয়া যাবে না, এই হতাশা থেকেই আগে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যায় না। কারণ ধরুন পহেলা বৈশাখের কথা সবার মনে আছে, আমরা কিছুই বের করা করতে পারিনি। যারা অভিযোগ করবেন, তাদের তো আগে আশ্বস্ত হতে হবে যে আমি এর বিচার পাবো। কিন্তু এরকম ঘটনার তো কোন বিচারই হয়না।”
”সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন থাকে। যারা লিখেছেন, তারা নিজের ভেতরের একটি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই লিখেছেন যে, আর কোথাও না হলেও, ফেসবুকে আমি আমার ক্ষোভের কথাটা জানাই।”
এ ধরণের ঘটনাগুলোয় কারো বিচার হয়েছে, বা শাস্তি হয়েছে, এরকম কোন ঘটনার উদাহরণও তাদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন আইন ও শালিস কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা।
কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে মেয়েদের হেনস্থা করার পেছনে কি মানসিকতা কাজ করে? কেন একদল মানুষ এভাবে ভিড়ের সুযোগে মেয়েদের যৌন হয়রানি করে?
সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন বলছেন, মেয়েরা যে আগে গৃহবন্দী থাকতো, এখন যে থাকে না, এখন যে বাইরে আসছে, অনেকের মানসিকতায় সেই পরিবর্তনটা আসেনি এখনো। মেয়েদের তারা পাবলিক প্লেসে দেখতে চায়না। তারা তাকে পুরোপুরি মানুষ হিসাবে দেখতে পারছে না। এই বিকৃত মানসিকতার লোকজন ওত পেতে থাকে, কখন নারীদের হেনস্থা করা যাবে।
তিনি বলছেন, মেয়েরা আগে এ ধরণের সমাবেশে কম আসতো। এখন তারা আসতে শুরু করেছে আর একদল সেটাতেই বাধা দিতে চায়। এ ধরণের মবের কোন বিচার না হওয়ায় এসব অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তাই এ ধরণের অপরাধ আবারো ঘটায়।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, ঘটনার কয়েকটি ফুটেজ তাদের হাতে এসেছে। ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে, অপরাধী যে দলেরই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না।
বি বি সি