নির্বাচন করতে পারবেন না তারেক-জোবাইদা!
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ
বাংলাদেশের ভোটার নন লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। একদিকে তারেক ভোটার নন, অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ফলে চাইলেও আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না তারেক রহমান। তিনি ইতোমধ্যে দুটি মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যদি আদালত তার সাজা স্থগিত করে, তারপরও তিনি বাংলাদেশের ভোটার না হওয়ার কারণে নির্বাচনে অযোগ্য থাকবেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনানুযায়ী কেবলমাত্র ভোটারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। ইসির সংশ্লিষ্টরা ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, দশ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান এখনো ভোটার হননি। ভোটার হতে হলে সশরীরে বাংলাদেশে উপস্থিত হতে হবে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়, সার্ভারে সরাসরি আলোকচিত্র ধারণ করতে দিতে হয়। ডা. জোবাইদা রহমানও ভোটার না হওয়ার কারণে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।জানা যায়, সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রণীত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘কোনো নির্বাচনী এলাকার যে কোনো ভোটার উক্ত এলাকার সদস্য নির্বাচনের জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬ (১) এর অধীন সদস্য হওয়ার যোগ্য যে কোনো ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবেন, তবে শর্ত থাকে যে কোনো ব্যক্তি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না থাকেন।’সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কেননা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংসদ গঠিত হয় ২৯ জানুয়ারি। বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলছে।ইসি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হলো, ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা, জোবাইদা রহমান এখনো ভোটার হননি। ইসির তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে তারেক রহমান এবং জোবাইদা রহমানের ভোটার হওয়ার তথ্য নেই।
সম্ভাব্য ভোটার এলাকা হিসাবে ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল হোসেন রোড এবং বগুড়ার গাবতলী এবং তারেক রহমান, জোবাইদা রহমানের পিতা-মাতার নাম যোগ করে অনুসন্ধান করে তাদের ভোটার হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রও তারেক রহমান এবং জোবাইদা রহমানের ভোটার না হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে। ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময় বিএনপি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন কারা অন্তরীণ ছিলেন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিত্সার উদ্দেশ্যে লন্ডনে যান। যদিও বিশেষ কারাগারে অন্তরীণ থাকার পরও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ভোটার হয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া ভোটার হওয়ার সময় ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন ক্যান্টনমেন্ট-১ (শহীদ মইনুল হোসেন রোডের বাসভবন)।
তারেক রহমান এবং জোবাইদা রহমান প্রবাসী বাংলাদেশি। ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২ এর ১১ ধারা অনুযায়ী প্রবাসী কয়েদি, আইনগত হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা ভোটার হতে পারবেন। সাধারণ রেজিস্ট্রেশন অফিসাররা সংশ্লিষ্টদের ভোটার করতে পারবেন। তবে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এখনো পর্যন্ত ভোটার করা হয়নি। সাধারণত প্রবাসীরা দেশে সশরীরে হাজির হয়ে ভোটার হতে পারেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সহসা দেশে আসার সম্ভাবনা নেই। তবে কমিশন বৃহত্স্বার্থে প্রবাসে অবস্থিত প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। এই প্রক্রিয়ায় তিনি ভোটার হতে পারবেন।
যদিও বিষয়টি অনেক কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, প্রবাসে অবস্থিত ভোটারদের দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কেননা এনআইডি না থাকার কারণে অনেকে বিভিন্ন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। এজন্য আগামী ১৭ এপ্রিল একটি সেমিনার করা হবে। তবে বর্তমানে বিদেশে অবস্থিত প্রবাসীদের দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার করা হয়নি।