ভোটের চ্যালেঞ্জে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী
|
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন ঘেঁষা সাতক্ষীরা-৩ আসনে অন্যান্য দলে তেমন কোনো শক্তিশালী প্রার্থী নেই, তবে আওয়ামী লীগে দুজন ও বিএনপিতে একজন হেভিওয়েট প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। এরা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক এমপি, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির্ খুলনার উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এনাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলোজি) ডা. শহিদুল আলম। এই হেভিওয়েট তিন প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামীলীগে বেশ কয়েকজন নতুন মুখের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে মাঠে তাদের অবস্থান নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৩ আসনে ( সম্প্রতি আশাশুনি-দেবাহাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত) বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। এখনই জোরালোভাবে মাঠে না নামলেও নানাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই আসনের হেভিওয়েট নেতারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টিকিটে সম্ভব্য মনোনায়ন প্রত্যাশী কারা, প্রধানত তাদের নিয়েই মাঠপর্যায়ে চলছে জোর আলোচনা। নির্বাচন আরো ঘনিয়ে এলে বেড়ে যাবে এসব নেতার ব্যস্ততা ও প্রচার-প্রচারণা।
জানা যায়, বারবার ভেঙ্গেছে আসনটি। সর্বশেষ ২০০৮ এর নির্বাচনে নতুন সীমানা নির্ধারণ অনুযায়ী আসনটি পুন:গঠিত হয়েছে। যুক্ত হয়েছে আশাশুনি উপজেলা ১১ টি ইউনিয়ন, দেবহাটা উপজেলার ৫ টি এবং কালিগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন। তিন উপজেলার মোট ২০ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হলেও (বর্তমানে আশাশুনি-দেবহাটা নিয়ে পুন:গঠিত) সাতক্ষীরা ৩ আসন। এর আগে কেবলমাত্র আশাশুনি উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল সাতক্ষীরা-৩। এ আসনে পর পর দুই বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন দেশের প্রখ্যাত শৈল্য চিকিৎসক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক।
তিনি ২০০৮ সালে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে ৫ বছর সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তার প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে তার প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয়েছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ। বেশ সুনামও কুড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তিনি তাঁর অর্জত সুনাম ধরে রাখতে পারছেন না বলে মনে করেন এলকার অনেকেই। গত ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি পুন:রায় এমপি নির্বাচিত হলেও মন্ত্রীত্ব পাননি। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও ইউসুফ আব্দুল্লাহ’র নাম প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরা আস্থা অর্জনের পাশাপাশি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও তার অবস্থান অনেকটা শক্ত।
এদিকে ডা. শহিদুল আলম বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ব্যাপক চিকিৎসা সেবা দিয়ে সাধারণের মনোযোগ কেড়েছেন। এ কারণে সাতক্ষীরা-৩ আসনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশাবাদী। তিনি বলেন, বিভিন্ন হয়রানির কারণে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা মাঠে দাঁড়াতে পারছেন না। গত ঈদের সময় তার ঈদের শুভেচ্ছা পোস্টার পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এসবের মধ্য দিয়েই তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরাবাসী তার চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়নি, সামর্থ্য অনুযায়ী সেবা দেওয়ায় তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। দল মনে করে, ওই আসনে তার কোনো বিকল্প নেই। তাই আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে অবশ্যই তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। নানান সংকটের মধ্য দিয়েও স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এমপি হতে পারলে নদী ভাঙন রোধ, কমিউনিটি ক্লিনিকে ছোট অপারেশনের ব্যবস্থা করা, ভোমরা স্থল বন্দরের আধুনিকায়ন ও সুন্দরবন অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চর স্থাপন, উপজেলার সাব-সেন্টারগুলোকে পূণাঙ্গ হাসপাতালে রুপান্তর করা, বেড়িবাঁধ সংস্কার, সুন্দরবন পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ, ঢাকা থেকে সরাসরি সাতক্ষীরা পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপন, ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প স্থাপন, মেরিন ফরেস্ট এন্ড রিসার্স ইউনিভার্সিটি, আবাসিক সাতক্ষীরা বিশ^বিদ্যালয়সহ অবহেলিত আসনে জনগণের সঙ্গে থেকে উন্নয়নমূলক ও জনকল্যাণমূলক কাজ করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগে হেভিওয়েট দুজনের বাইরে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক এমপি ডা. মোখলেছুর রহমান।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে স্থানীয় নেতারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে দলকে পুনর্বিন্যাস, বিগত দিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান এবং আন্তরিক হওয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ডা. রুহুল হক এমপি, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য খুলনার উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এনাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলোজি) ডা. শহিদুল আলম ও জনসংযোগ ও কর্মিসভা করছেন।
অপরদিকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলেন, বর্তমান এমপি ডা. রুহুল হক সাতক্ষীরায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এখন তার অনেক বয়স হয়েছে। সেজন্য নতুন প্রার্থী হিসাবে দেবাহাটা ও আশাশুনি অঞ্চলে আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ইউসুফ আব্দুল্লাহ’র আকাশচুম্বি যে জনপ্রিয়তা রয়েছে তাতে তাকে সাতক্ষীরা-০৩ নিবাচর্নী আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দিলে তার বিজয়ী হওয়া সুনিশ্চিত। তাই দেবাহাটা ও আশাশুনি অঞ্চলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল ও সাধারণ মানুষ ইউসুফ আব্দুল্লাহকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-০৩ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দৃর্ষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের কিছু রিজার্ভ ভোট রয়েছে। কিন্তু প্রার্থী নির্বাচনে দল সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে মরিয়া বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এনাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলোজি) ডা. শহিদুল আলম। তিনি দেড় যুগ ধরে আশাশুনি-দেবাহাটা-কালিগঞ্জ নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। পাড়া-মহল্লা ও গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এদিকে বর্তমান এমপি ব্যস্ত থাকায় তিনি ঘন ঘন এলাকায় গণসংযোগ করতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য আমরা আবেদন করব। কিন্তু নেত্রী (শেখ হাসিনা) যা বলবেন তার ওপর আমাদের কোনো কথা নেই। নেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন, তার জন্য নির্বাচনে কাজ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’
ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক বলেন, আমি পর পর দুই বার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর চারদলীয় সরকারের চেয়ে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে দেশের জন্য এমডিজি পুরস্কারসহ বেশ কিছু ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার বয়ে এনেছি। দেশের স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো সক্রিয় করেছি। আজ মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। আগামীতে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। দলের হাইকমান্ড দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমার ইতিবাচক এসব কর্মকান্ডই বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেন জনগণই আমাকে নির্বাচিত করবেন। তিনি আরও বলেন, নতুন কাউকে মনোনয়ন দিলে নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি। তবে সাবেক এমপি ডা. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘দলের জন্য এখনও কাজ করে যাচ্ছি। দল মনে করলে নির্বাচনে অংশ নেব। নৌকার বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখব।’
ড. আবু ইউসুফ মো: আব্দুল্ল¬াহ বলেন, সাতক্ষীরার মাটিতেই তার জম্ম। লেখাপড়ার কারণে সাতক্ষীরার বাইরেও থাকতে হয়েছে। এখন সুযোগ হয়েছে এলাকার ফিরে মানুষের জন্য কিছু করার। এলাকার মানুষের পাশে থেকে তরুণ প্রজন্ম, গ্রাম্য-অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষাকে গ্রামমূখী করা, শিক্ষার ডিজিটাইলেশন করা এবং সততা ও পরিশ্রমের ভিতরেই নতুন প্রজন্মকে উদ্ভাসিত করা, উদ্বেলিত করা ও অনুপ্রাণিত করা জরুরী বলেও মনে করেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করলে আমাকে মনোনয়ন দিবেন। মনোনয়ন পেলে আমি জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে সাতক্ষীরার প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো। এছাড়াও জনকল্যাণসহ সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন তিনি।