সোমবার, ২ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » জেলার খবর » জেলা শিশু একাডেমীর ভবন সংস্কার ও সম্প্রসারণের দাবী শিশুদের
জেলা শিশু একাডেমীর ভবন সংস্কার ও সম্প্রসারণের দাবী শিশুদের
আব্দুর রহমান,সাতক্ষীরা: শিশুদের মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ এক নিয়ামক হয়ে
ওঠার কথা ছিল শিশু একাডেমির। অথচ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের
উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ঘুরপাক খাচ্ছে পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে। সাতক্ষীরা জেলা
শিশু একাডেমী এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও অত্যন্ত অপ্রতুল বলে মনে
করেন খোদ একাডেমির কর্মকর্তারাই।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভূক্ত একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ
শিশু একাডেমী। এ প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিক
সেবা দিয়ে থাকে। শিশু বিকাশ শ্রেণি, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ছাত্র-
ছাত্রীদের প্রাথমিক শিক্ষার ধাপ গুলো অতিক্রম করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির
যোগ্য করে তোলা হয় এ প্রতিষ্ঠানে। শিশুর লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে
সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ বিভাগ এর মাধ্যমে শিশুদের গড়ে তোলা হয়।
দেশের ৬৪ জেলা শহরে একটি করে ও বাংলাদেশের ৬ টি উপজেলায় ১ টি করে অফিস
নিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির
কার্যক্রম চলছে।
সাতক্ষীরা জেলায়ও অন্যান্য জেলা সদরের মতো বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর জেলা
অফিস আছে। এই জেলা অফিসের প্রধান হলেন একজন প্রথম শ্রেণির
গেজেটেড অফিসার। জেলা শিশু একাডেমীর অন্য একটি বিভাগ হলো লাইব্রেরী ও
যাদুঘর বিভাগ, সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ বিভাগ। লাইব্রেরী বিভাগে শিশুরা ২০
টাকার ফরম পূরণ করে সদস্য হতে পারেন। জেলা শিশু একাডেমীর কার্যালয় সদর
উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থিত। অফিসে জেলা কর্মকর্তার ১ টি কক্ষ,
লাইব্রেরি, যাদু ঘরের জন্য ১ টি কক্ষ ও একটি ছোট মিলনায়তন ছাড়া আর কোন
কক্ষ নেই। এই মিলনায়তনে পাটিশন করে অফিসের হিসাব বিভাগের কার্যক্রম
পরিচালিত হচ্ছে। একটি অফিসে ৩ টি কক্ষের ভিতরে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা
করা অত্যান্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে শিশুদের জন্য এই ভবন টি অত্যান্ত
অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জেলা শিশু একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে ভবন টি উদ্বোধন করা হয়।
শিশু একাডেমীর কার্যক্রম ঐ ভবনেই হচ্ছে। বর্তমানে ভবনটি সম্প্রসারণ ও
সংস্কার করার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ২০১১ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো.
আবদুস সামাদ (স্মারক নং জেপ্রসাত/সাধারণ/২৪-ন- ৮/১০-৪৮১ তারিখ :
০২/০৬/২০১১) মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর জেলা শিশু বিষয়ক
কর্মকর্তার ভবন সংস্কার করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। ২০১৫ সালে জেলা শিশু বিষয়ক
কর্মকর্তা ভবন সংস্কার করার জন্য (স্মারক নং নি: ভ:
১৪৫/বাশিএ/সাত/২০০৫/২০৯১তারিখ:১৮/০১/২০১৫) জেলা প্রশাসক বরাবর ভবন
সংস্কারের জন্য আবেদন করেন।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান (স্মারক নং
৩২.৪৪.৮৭০০.০১০.৫৫.০০১.১৫-৬৬৪ তারিখ ২৯-০৪- ২০১৫) জেলা শিশু একাডেমী
সংস্কার করার জন্য আর্থিক বরাদ্ধ চেয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর পরিচালক বরাবর
পত্র প্রেরণ করেন। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা (স্মারক নং-২০৯০ তাং ১৮-০১- ২০১৫)
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ভবন সংস্কার ও বর্ধিত করার অনুমতি
চান। এরই প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা পরিষদের ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে উপজেলা
পরিষদের মাসিক সাধারণ সভার কার্য বিবরণীর ৯নং অনুচ্ছেদ এর সিদ্ধান্ত
অনুযায়ী ভবন বর্ধিত করণের অনুমতি প্রদান করেন। এর পরেও জেলা শিশু একাডেমীর
ভবন সংস্কারের কোন কাজ করা হয়নি।
জেলা শিশু একাডেমির শিশুদের অভিভাবকরা জানান, ‘বর্তমান সরকার উন্নয়নের
সরকার, বর্তমান এই উন্নয়নের সরকারের আমলে দেশের এমন কোন সেক্টর নেই
যেখানে উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি, কিন্তু জেলা শিশু একাডেমী তার ব্যতিক্রম।
আমরা চাই আমাদের শিশুদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান শিশু একাডেমির ভবনটি উন্নত ও
প্রশিক্ষণ বিভাগে কি-বোর্ড, ড্রাম, গীটারসহ আধুনিক ‘শিশু একাডেমী
কমপ্লেক্স’ চাই। কোমলমতি শিশুদের মেধা বিকাশের স্বার্থে ‘জেলা শিশু
একাডেমী’ ডিজিটালাইজ সেবা প্রদানের আবেদন জেলাবাসীর।’
জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা শেখ আবু জাফর মো. আসিফ ইকবাল বলেন, ‘শিশুদের
প্রতিভা বিকাশে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি সুষ্ঠাভাবে পালন করি। কিন্তু
বর্তমানে জেলা শিশু একাডেমির ভবনটি জরাজির্ণ হওয়ায় সংস্কার ও
ডিজিটালাইজ করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সংরক্ষিত আসনের মহিলা
এমপি ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে বিষয়টি
নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, জেলা শিশু একাডেমীর উন্নয়ন ও সংস্কার
কাজ করতে কিছুদিনের মধ্যে অর্থ পেয়ে যাবো। অর্থ বরাদ্দ পেলেই দ্রুত সংস্কার
কাজ শুরু করবো। শিশুদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশে ‘জেলা শিশু একাডেমি’
- গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’