মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » জনগণ অন্যায় দেখেও নিষ্ক্রিয় তাই দেশ জবর দখলে: ড. কামাল
জনগণ অন্যায় দেখেও নিষ্ক্রিয় তাই দেশ জবর দখলে: ড. কামাল
পক্ষকাল প্রতিনিধি ;জনগণকে সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বলেছেন, জনগণ অন্যায় দেখেও নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকলে দেশ জবর দখল হয়ে যায়।মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আইনের শাসন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বিশিষ্ট আইনজীবী আমিরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, বেলা’র নির্বাহী সৈয়দা রেজয়ানা হাসান, সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মুর্তজা প্রমুখ।বিচারপতি কাজী এবাদুল হকের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজনের নির্বাহী সদস্য বিচারপতি আব্দুল মতিন।ড. কামাল বলেন, ‘সংঘবদ্ধ হয়ে রাস্তায় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। দুঃখ পেয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। ক্ষমতার মালিক জনগণ, তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে, এই দেশ জবর দখলই থাকবে। ক্ষমতার মালিক জনগণ সেটা সংবিধান স্বীকৃত। মালিকরা আমাদের অধিকার ভোগ করতে পারব, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।’
আন্দোলনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন পাওয়ার ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে অতীতে সুষ্ঠু নির্বাচন পেয়েছি। ক্ষমতা পেয়ে তার অপপ্রয়োগ করছে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে জনগণের শাসন, কার্যকর গণতন্ত্র হবে।’কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এ বছবর খুবই গুরুত্বপূর্ণ, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে হবে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারি তবেই জনগণ তাদের ক্ষমতার ফল ভোগ করতে পারবে।’প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের সংবিধান এখনও আছে, অনেক কাটাছেঁড়া হয়েছে, তারপরও আছে। সেই সংবিধানে আছে দেশের মালিক জনগণ। তিনশ সিটের মালিক যদি কেউ বলে সেটা জনগণ মেনে নেবে না। আমাদের স্বাধীন বিচার বিভাগ এখনও আছে, সেই ব্যাখ্যা বৈধ যেটা সর্বোচ্চ আদালত দেবে।’ষোড়শ সংশোধনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী রায়ে সাতজন জজ বলেছেন অবৈধ। সেটা রিভিউ হয়েছে, দেখা যাক কী হয়। আমরা নয়জন আইনজীবী বলেছি ষোড়শ সংশোধনী অসাংবিধানিক। এটা কোনোদিন হতে পারে না, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো জজ রায় দিলে সবাই মিলে ওই জজকে ইমপিচমেন্ট করে দেবে, এজন্যই এটা অসাংবিধানিক।
কোর্ট সপ্তম, অষ্টম সংশোধনীকে বাতিল করেছে। সুতরাং কোর্টকে হালকাভাবে নিলে হবে না।’ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইনের শাসনের মূল ফোকাসটা কী? আমাদের সংবিধানে আছে যেকোনো ব্যক্তি যেন তার অধিকার পায়। সেটা আমাদের সংবিধানে নিশ্চিত করা আছে। সেজন্য আমাদের সংবিধানের উপযুক্ত করে নাগরিক তৈরি করতে হবে।’আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য কী ধরনের লোক দিয়ে কমিশন গঠিত হবে। ইলেক্টরদের ইস্যুগুলো রাজনৈতিক দলগুলো দিয়েছে কি না। আমাদের মিডিয়াগুলোকে ইস্যুগুলো ফোকাস করতে হবে। জনগণের কাছে ইস্যুগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মিডিয়া, বুদ্ধিজীবীসহ সবার একসঙ্গে কাজ না করলে নির্বাচনের সঠিক রেজাল্ট আসবে না।’সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আইনের শাসন বলতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকবে, আর অন্যায়কারীরা থাকবে ভয়ে এবং রাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্বল মানুষটি থাকবে নিরাপদে। রাষ্ট্রে কম গণতন্ত্র সহ্য করা যায়, কিন্তু আইনের শাসনের বিষয়ে বরদাশত করা যায় না। আইনের শাসন না থাকলে রাষ্ট্র অকারর্যকর হয়ে যায়।’
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দেশে ভিআইপি কোটা কোন আইনে আছে, এটা আমি জানতে চাই। অনেক কিছুতে তাদের জন্য রিজার্ভ থাকে, এটা সংবিধান ও আইনের বিরোধী। দেশে আইনের শাসন নয়, আমরা শাসনের মধ্যেই আছি।’ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আমি কারো বিচার করব, কারো করব না। কারো জামিন দেব, কারো জামিন দেব না, আমি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কারো বিরুদ্ধে লাগব, কারো বিরুদ্ধে লাগব না, এটা আইনের শাসন কি না এই প্রশ্নটা আমি উত্থাপন করছি। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত ধরে আপনারা আলোচনা করেন আমরা খুবই উপকৃত হবো।’সৈয়দা রেজয়ানা হাসান বলেন, ‘আইনের শাসন নিশ্চিতে বিচার বিভাগের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থাগুলোর সমন্বয় না হলে আইনের শাসন সম্ভব নয়। দেশে গণতন্ত্র খারাপ হোকে, হ্যা বা না বলার সুযোগ থাকলে জনগণ স্বস্তিতে থাকবে। উচ্চ আদালতে এখনও আমরা নিরাপদ, জাস্টিজ হলো ইনসাফ। আদালতের ব্যাপারে আমাদের আস্থা হারানোর সুযোগ নেই।’