বুধবার, ৪ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » অপরাধ | অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ‘অভিযোগ বানোয়াট মিথ্যা ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
‘অভিযোগ বানোয়াট মিথ্যা ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
পক্ষকাল ডেস্ক ;
বিএনপির আট সিনিয়র নেতাসহ ৯ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সন্দেহজনক লেনদেনের যে তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রকাশ করেছে, তা বানোয়াট, মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এসব মন্তব্য করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দুদকের বক্তব্যে আমার নাম জড়ানো হয়েছে। আজকে যখন আমাদের নেত্রীকে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং তার জামিন বিলম্বিত করা হচ্ছে। এদিকে দলের মহাসচিব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। এমন সময় দুদক কর্তৃক বানোয়াট, মিথ্যা কল্পকাহিনী প্রচার করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম খান বলেন, জীবনভর সাত কোটি টাকা লেনদেন করেছি কি না তাই মনে পড়ে না। সেখানে আমাদের বিরুদ্ধে ১২৫ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতারা বলেন, গণবিচ্ছন্ন সরকার ভয় পেয়ে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে তারা হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ২১ কোটি টাকার অ্যাকাউন্টের যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তার উপর চ্যালেঞ্জ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ডাচ বাংলা ব্যাংকে আমার ও আমার পরিবারের কারো কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। দুদক যে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, আমি দুদককে অনুরোধ করব কোন একাউন্টে, কোন ব্রাঞ্চে, কবে কখন কত টাকা উত্তোলন হয়েছে। এমনকি কত টাকা স্থীতি আছে তা বিস্তারিত প্রকাশ করা হোক। উল্লেখ্য, সন্দেহজনক লেনদেনে দুদক যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে তারা হলেনÑ বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস, দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোর্শেদ খান, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আওয়াল ও এম মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এর আগেও সরকার খালেদা জিয়াসহ আমাকে জড়িয়ে নানা কল্পিত সম্পদের মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছিল। তখন আমার নামে বলা হয়েছিল, সিঙ্গাপুরে নাকি আমি পাঁচ তারকা হোটেলের শেয়ারহোল্ডার। এখন অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের তথ্য পাওয়া যায়। অথচ তারা তা দেখাতে পারেনি। এদিকে বাংলা ইনসাইডারে বলা হয়েছেÑ গোয়েন্দা রিপোর্টের তথ্যমতে ১৭ মার্চ তারা রিপোর্ট প্রকাশ করে। দুদক থেকে গণমাধ্যমকে একই ধরনের একটা হ্যান্ডনোট দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেÑ গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বিএনপির আটজন সিনিয়র নেতাসহ ৯ জনের ব্যাংক একাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
বাংলা ইনসাইডার কারা চালায় এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কে এর মালিক? তারা ১৭ মার্চ এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। গোয়েন্দা সংস্থা কেন দুদককে আগে তথ্য না দিয়ে বাংলা ইনসাইডারকে তথ্য দেবে। বাংলা ইনসাইডারকে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে দুদক ও প্রধানমন্ত্রীকে মিসগাইড করেছে। দুদকও বলেছে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এ তথ্য এসেছে আবার বাংলা ইনসাইডারেও একই তথ্য লেখা হয়েছিল। যখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন বেগবান হচ্ছে, তখন তারা এসব মিথ্য বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এবং তাদের দৃষ্টিকে ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার লুট ও স্বৈরাচারী নামে বিশ্বে যে ভ‚ষিত হচ্ছে তা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে এগুলো করছে সরকার। তালিকায় থাকা স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এসব অভিযোগ একদলীয় শাসন কায়েমের অংশ। আসলে সরকার আর্থিক খাত ধ্বংস করে টাকা লুট করেছে। দেশে দুর্নীতি আজ একদলীয় হয়ে গেছে। গণধিকৃত হওয়ার পর ২৫টি নিউজ পোর্টাল খুলেছে আওয়ামী লীগ একদলীয় প্রচারণার জন্য, ফেইক নিউজ প্রচার করার জন্য। সামনে আরো মিথ্যাচার দেখতে পাবেন। কষ্ট হচ্ছে এ জন্য যে, দুদকের মতো স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকেও ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তারা এই কাজটি করছে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। একটি দেশ তখন ধ্বংস যখন সে দেশের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমার নামে সাত কোটি টাকার তথ্য দিয়েছে বাংলা ইনসাইডার ও দুদক। এটা একটা নোংরা রশিকতা। বাংলা ইনসাইডার কাদের প্রতিষ্ঠান তা আমরা বুঝি না। তারা কি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিষ্ঠান, যে তারা গোয়েন্দা সংস্থার আগে রিপোর্ট পায়। নাকি সরকারের কোনো সংস্থা, যে সরকারের নির্দেশে গোয়েন্দারা তাদের রিপোর্ট দেয়। এটা বড় বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বাংলা ইনসাইডারের নামে মিথ্যা গল্প কাহিনী বানানোর কারখানা ব্যবহার করে এবং দুদককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের ঐক্যকে বিনষ্ট করা যাবে না। একই সঙ্গে বাংলা ইনসাইডারকে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য প্রকাশে ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। বিএনপির ভাইস রচয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ব্যবসা করি লেনদেন হতেই পারে। তবে যেভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা বানোয়াট। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে এ ধরনের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গোয়েন্দা সংস্থার উচিত মানুষকে সত্যটা জানানো। কারো বিশেষ কাজে ব্যবহৃত না হওয়া। আর দুদককে বলব, জনগণের টাকায় আপনাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জনগণকে হয়রানি করবেন না। বরং সুষ্ঠু তদন্ত করুন। নইলে এ দেশ ধ্বংস করার অংশীদার আপনারাও হবেন।