নতুন অস্বস্তিতে আ. লীগ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কিছু বিষয়ে নতুন অস্বস্তিতে পড়েছে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের এক মাস পেরোলেও নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা এখনো চলছে। বিশেষ করে সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে।নাম প্রকাশ না শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল হয়েছে মহাজোটের শরিক এরশাদের জাতীয় পার্টি। কিন্তু অতীতের বাস্তবতায় দলটির বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ১৪ দলের শরিকদের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েও অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই এ নিয়ে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
সরকারি দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর গত ২৪ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাতে তিনি দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু সে আহ্বানকে ‘প্রতারণামূলক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। অন্য কয়েকটি দলও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
bangladesh parliament
এরপর প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোকে গণভবনে একটি চা-চক্র ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য নিমন্ত্রণ জানান। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য’ পরিবর্তন আনার বিষয়ে কথা হতে পারতো। কিন্তু শনিবার অনুষ্ঠিতব্য এ অনুষ্ঠানেও ঐক্যফ্রন্টসহ ক্ষমতাসীন জোটের বাইরে থাকা দলগুলো সাড়া দেয়নি। ফলে এ দুটি বিষয় নিয়েই আওয়ামী লীগে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই এই অস্বস্তি সামনে এসেছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারের সমালোচনা করার ‘অনুমতি’ চাইছে। আর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র ১৪ দলের শরিক জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাদের বক্তব্যেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
jatiya oikya front logo final
কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলে আসছেন, জাতীয় পার্টি হচ্ছে বিরোধী দল। তবে ১৪ দলের শরিকরাও বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারে। একই ধরনের কথা বলছেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।
এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের। তারা বলছেন, ভোটারদের কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে ও সরকারের উন্নয়নের পক্ষে ভোট চেয়েছেন তারা। এখন তারা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে মানুষের কাছে হাসির পাত্র হতে হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টি এবারও আগের মতো সরকারে ও বিরোধী দলে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তারা এখন সংসদের আনুষ্ঠানিক বিরোধী দল হয়েছে। কিন্তু ১৪ দলের ভূমিকা নিয়ে অস্বস্তি সহসা কাটছে না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেরও সুযোগ নেই।
এজন্য সংসদকে প্রাণবন্ত করতে এবং বিতর্ক এড়াতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতদের সংসদে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু উভয় সংকটের কারণে তাদের সংসদে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটিও সরকারি দলের অস্বস্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে এ সব বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ সব কথা বলেছেন।