রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » আমরা লোভের জিহ্বা কেটে দিতে চাই: দুদক চেয়ারম্যান
আমরা লোভের জিহ্বা কেটে দিতে চাই: দুদক চেয়ারম্যান
পক্ষকাল ডেস্ক
যারা দুর্নীতি করছে, অতি লোভ করছে, আমরা লোভের জিহ্বা কেটে দিতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌশলপত্র-২০১৯’ এর উপর মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য দেশের সরকারি বেসরকারি ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, যারা দুর্নীতি করছে, অতি লোভ করছে আমরা লোভের জিহ্বা কেটে দিতে চাই। সেটা আমরা কাটা শুরু করেছি। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতেই হবে। দুদকের মামলায় ৬৩ শতাংশ শাস্তি এমনিতে হয়নি। এটি আমাদের সকলের ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল। আমি আগেও বলেছি আজও বলছি কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। দুর্নীতি দমনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোও তাই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, আগে দুর্নীতি করলে মানুষ লজ্জা পেত। সমাজ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করত। এখন লজ্জা কেউ পায় না। এক সময় বলা হতো অর্থ অনর্থের মূল। কিন্তু সব সময় অর্থ অনর্থের মূল নয়। অনেক সময় অর্থই অর্থেরও মূল। অর্থ মানেই পাওয়ার বা ক্ষমতা। মানুষ অর্থের পেছনে ছোটে। এটাতে এখন লজ্জা পায় না তারা।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা লজ্জা ফেরানোর চেষ্টা করছি। দুর্নীতিবাজদের লজ্জা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা এবং মূল্যবোধ সম্পন্ন উন্নয়নের প্রয়োজন। দুদককে ভয় পায় না এমন লোক হয়তো সমাজে নেই। তবে ভয় দিয়ে সবকিছু জয় করা যায় না।
সভায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনারাই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাবী সন্তান। আপনাদের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে নতুন ধারণা, সৃজনশীল আইডিয়া এবং সর্বোপরি কর্মপন্থা গ্রহণ করতে চাই।
দুর্নীতি দমনের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব দুর্নীতিই দুদকের ম্যান্ডেটভুক্ত নয়। দণ্ডবিধির কতিপয় ধারা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন দুদকের তফসিলভুক্ত। দুর্নীতির উৎস বন্ধে সরকারের কাছে সুপারিশ করার আইনি দায়িত্ব দুদকের রয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং মানুষের হয়রানি রোধে বিভিন্ন সুপারিশমালা কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়- এ বিষয়টি অনুধাবন করেই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমনের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছে। একদিন বা এক বছরেই এ থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় দুর্নীতি অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে শিক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় দুর্নীতি অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে শিক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৭৫ ভাগ ফেল করা শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দিয়ে মানসম্মত শিক্ষাকে কলুষিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে ২০৩০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পেতে হলে মানসম্মত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি বন্ধে দুদকের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে বলেন, ব্যাংকিং প্রশাসন যদি ব্যাংকিং রুলস মেনে চলে তবে এই খাতে দুর্নীতির সুযোগ নেই। তারপরও যদি কেউ দুর্নীতি করে তাদের রেহাই নেই।
এ সময় দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি দু’টি পর্যায়ে বেশি হয়। একটি প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপরটি ব্যক্তি পর্যায়ে। প্রাতিষ্ঠানিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দুর্নীতি অবশ্যই কমে আসবে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ঔষধ রয়েছে । কিন্তু রোগীদের দেয়া হচ্ছে না, শুধু মনিটরিংয়ের অভাবেই রোগীর কাছে ঔষধ পৌঁছাচ্ছে না।
মতবিনিময় সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তামান্না রিফাত আরা বৃষ্টি বলেন, দদুদকের তিন নির্বাহীর কাছে প্রশ্ন রাখেন- দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই যাতে বলা থাকবে দুর্নীতি করতে পারব না। প্রশাসনে দুর্নীতির কোন ফাঁকফোঁকর থাকবে না। দুদক চাইলে এ সংক্রান্ত একটা স্ট্রাকচার (অবকাঠামো) দাঁড় করাতে পারে ।
এর জবাবে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান বলেন, শিক্ষার্থীরা আদর্শিক অবস্থানে রয়েছেন। সুনীতি, সদাচার এবং দেশপ্রেমই তাদের আদর্শ। তাদের কোনো ব্যক্তি স্বার্থ কিংবা গোষ্ঠী স্বার্থ নেই। পদ্ধতিগত সংস্কারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সিটিজেন চার্টার, ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি, ক্রয় নীতিমালা সবই পদ্ধতিগত সংস্কারের অংশ।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী, মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মঈদুল ইসলাম, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।