মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আবার রক্তাক্ত জগন্নাথ ক্যাম্পাস
ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আবার রক্তাক্ত জগন্নাথ ক্যাম্পাস
ডেস্ক —আধিপত্য বিস্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। সোমবার দফায় দফায় সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ প্রায় ৪০ জন আহত হয়েছেন।
বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। এ সময় সাত-আটটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্যাম্পাসে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাসখানেক আগে সংঘর্ষের জেরে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়। সেই কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারীরা একত্র হয়ে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। বেলা ১১টার দিকে পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন সভাপত ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এসময় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হন।
এরপর অন্যান্য পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস গেট থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে মোবাইলে ছবি ধারণ করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এসময় কমপক্ষে পাঁচ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এরপর বিকাল ৩টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকের সামনে পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় দুপক্ষের কর্মীরা ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করে। এতে সাত থেকে ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এসময় তাদের হাতে ককটেল, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, রামদা, বটি, হকি স্টিকসহ দেশীয় ধারালা অস্ত্র দেখা যায়।
দুপক্ষের সংঘর্ষে জবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান আহমেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুর রহমান, হাসিবুর রহমান শুভ, জুয়েল, জিয়াউল হক, মাহবুবুল হাসান রনি, মহিউদ্দিন অনি, শেখ মেহেদী আল হাসান, ইমরান, অপি, ইমরুল নিয়াজ, টুটুল, শরিফুল ইসলাম হিমু, মিরাজ, শাকিল, মিনুন মাহফুজ, শাহরুক আল শোভন, সোহান, আবু মুসা রিফাত, সাজেদুল নাঈম, কাজী তৈয়ব, কামরুল হাসান, শিশির আহত হন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশন্যাল মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাকিব, খবরপত্রের সোহাগ রাসিফ এবং বিডি২৪ রিপোর্টের প্রতিনিধি সানাউল্লাহ ফাহাদ আহত হন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা জানার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে। কারা কী করছে সেটার দায় আমাদের ওপর এখন বর্তায় না।’ সভাপতি তরিকুল ইসলামকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজোয়ানুল হক শোভন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর আঘাত অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদেরকে (জবি ছাত্রলীগ) একবার স্থগিত করে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ব্যাপারে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনো কিছু হয়নি। আমরা সকাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কোতয়ালী জোনের এসি বদরুল রিয়াদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াতে চাইলে আমরা মাঝখানে অবস্থান নিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দুই দিকে পাঠিয়ে দিই। এ ঘটনায় তিন প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও চার রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করি। আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’