পদত্যাগ করছেন ফখরুল?
পক্ষকাল প্রতিদিন ঃ১৮ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর এবং লন্ডন হয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপি মহাসচিব। কিন্তু গত দুইদিনে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে। দলের নেতা-কর্মীদের সাক্ষাৎ দেননি। কোনো কর্মসূচিতেও যোগ দেননি। কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপিতে তাকে নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি কি স্বেচ্ছায় সরে যাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিবের পদ থেকে? নাকি তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এসব প্রশ্ন এখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। অবশ্য বিএনপি মহাসচিবের ঘনিষ্ঠরা বলছেন ভিন্ন কথা।
তারা বলছেন, চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বিশ্রামে আছেন মির্জা ফখরুল। কাল একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে তিনিই নেতৃত্ব দেবেন। যদিও তার প্রতিপক্ষরা বলছেন, বিএনপিতে মহাসচিব পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বিএনপি মহাসচিব পদ নিয়ে বিএনপিতে তিনটি চিরন্তন সত্য প্রচলিত আছে। এগুলো হলো-
১. কোনো মহাসচিবই সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে পারেননি।
২. মহাসচিবদের ক্ষমতা সামান্য থাকলেও দলের সব ব্যর্থতার দায় তাকেই নিতে হয়েছে।
৩. দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে সখ্যতা ছাড়া কেউ মহাসচিব থাকতে পারেননি।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর মির্জা ফখরুল দলের সিনিয়র নেতাদের তোপের মুখে। দলে তার কোন কর্তৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ নেই। দলের সিনিয়র নেতারা একযোগে মহাসচিবকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন নাকি সিনিয়র নেতাদের দাবির সঙ্গে একমত। কিন্তু নতুন মহাসচিব কে হবেন, এ নিয়ে দলের সিনিয়ররা একমত নন। কারাবন্দী বেগম জিয়া মহাসচিব বদল চাইলেও মহাসচিব পরিবর্তনে আগ্রহী নন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টকে গতিশীল রাখতেই তারেক মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব হিসেবে রাখতে চান। এ কারণেই তারেক মির্জা ফখরুলকে লন্ডনে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল লন্ডনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে মুখ খোলেননি। তিনি এটা স্বীকারও করেননি, অস্বীকারও করেননি।
একটি সূত্র বলছে, মির্জা ফখরুল দল পুনর্গঠনের একটা শেষ চেষ্টা করতে চান। এজন্য তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে তুলতে চান। ২০ দল নয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই আন্দোলনে আগ্রহী ফখরুল। আগামী কয়েকটা দিন এই পথেই এগিয়ে দেখতে চান বিএনপি মহাসচিব। কিন্তু এতে যদি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা সায় না দেন, তাহলে নিজেই দলের মহাসচিব পদ ছেড়ে দেবেন, এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতি নিয়ে একরকম হতাশ এই বিএনপি নেতা মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করলে অন্য কোনো দল করবেন না। একেবারে অবসরে চলে যাবেন।
মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, বর্তমান ধারার রাজনীতির জন্য মানানসই নন ফখরুল। নির্বাচনের পরপরই তিনি রাজনীতি ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের চেয়ারপারসন বন্দী, তারেক জিয়া বাইরে- এ অবস্থায় দল ছাড়া বা অবসরকে একরকম ‘বেঈমানী’ মনে করেন ফখরুল। এজন্যই দলে তীব্র অসহযোগিতার মুখেও তিনি দায়িত্ব নিয়ে আছেন।