বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » পলাতকদের ফিরিয়ে আনার জন্য টাস্কফোর্স
পলাতকদের ফিরিয়ে আনার জন্য টাস্কফোর্স
পক্ষকাল ডেস্ক ২১ ফেব্রুয়ারি- বিদেশে পলাতক শুধু তারেক জিয়া একা নয়, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ও দণ্ডিত ১৩৭ জনকে ফেরত চায় বাংলাদেশ। পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সাব কমিটি এই তালিকা হালনাগাদ করেছে। বিদেশে পলাতক বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত ও অভিযুক্তদের ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক এই কমিটির সভাপতি।
আইনমন্ত্রী ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই কমিটিতে রয়েছেন। এই কমিটি বিদেশে পলাতক বিভিন্ন ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য একটি সাব কমিটি গঠন করেছে। সাব কমিটির সদস্যরা বৈঠকের মাধ্যমে বিদেশে পলাতক বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ও দণ্ডিতদের তালিকা হালনাগাদ করেছে। আগামী মার্চ মাসে আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
১৩৭ জনের তালিকায় যে সমস্ত নতুন নাম যুক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরী, বিএনপি নেতা শাহ মো ফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, মেজর জেনারেল আমিনসহ বেশ কয়েকজন। বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭৫’র আত্মস্বীকৃত খুনী, যারা দেশের বাইরে পলাতক আছেন তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে রয়েছে কর্নেল রশিদ, মেজর ডালিম, নূর চৌধুরীসহ আরও বেশ কজন। এদের ফিরিয়ে আনার জন্য নানা কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেককে যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা যায় সেজন্য ইন্টারপোলের কাছে বাংলাদেশ তিন দফা আবেদনও করেছিল। তবে এ ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ‘তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা সময়ের ব্যাপার। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।’
’৭৫’র খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, যেসব দেশে তারা আশ্রয় নিয়েছে সেসব দেশে মৃত্যুদণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফরে গিয়ে সেখানে অবস্থানকারী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে কথা বললে তাকে আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, যেহেতু তাকে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে, কানাডারি আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে সে দেশে ফেরত দেয়া হয় না। তবে তারেক জিয়ার ক্ষেত্রে সে সমস্যা নেই। তিনি সর্বশেষ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় তার ব্যাপারে এমন প্রতিবন্ধকতা নেই। তাকে খুব সহসাই দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে এই কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তারেক জিয়া ছাড়াও বিএনপির যেসব নেতারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত হয়ে পলাতক রয়েছেন তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলেন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিস চৌধুরী, তিনি বিভিন্ন দেশে পালাক্রমে থাকেন বলে পররাষ্ট্র দপ্তরে তথ্য রয়েছে। তাকে ফেরত পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ আরব আমিরাতের দুবাইতে অবস্থান করছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত হয়েছে। তাকেও ফিরিয়ে আনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও এই মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামী মেজর জেনারেল আমিনও এখন আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত তথ্য পেয়েছে। তাকেও দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং সেটি এখনও মিমাংসা হয়নি। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সরকার এসকে সিনহাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে আবেদন করেছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা দরকার বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত ও অভিযুক্ত যেসব আসামী বিদে শে পলাতক রয়েছে তাদেরকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের আগামী বৈঠকে এ ব্যাপারে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশেষ করে ৭৫’র খুনী এবং ২১ আগস্টের দণ্ডিতদের যেন দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায় এ ব্যাপারে সরকার ত্বড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।