সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » চকবাজারে অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নয় অবহেলা: হাইকোর্ট
চকবাজারে অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নয় অবহেলা: হাইকোর্ট
ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি- রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন, এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, এটা অবহেলা। যার দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ, কেমিক্যাল অপসারণসহ কয়েক দফা নির্দেশনা চেয়ে করা পৃথক তিনটি রিটের শুনানিতে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সময় আবেদন করেন। পরে রিটের শুনানি মুলতবি করেন আদালত।
শুনানিতে আদালত বলেন, নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি যে সুপারিশ করেছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে চকবাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটতো না। নিমতলীর আগুনের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী দুই বোনকে দত্তক নিয়েছিলেন।
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সরকার এই ঘটনার বিষয়ে খুবই আন্তরিক। এ সময় আদালত বলেন, আন্তরিক হলে লাভ নেই। মানুষ তো চলে গেছে। কাজ তো করতে হবে।
আদালত আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই চকবাজারের ঘটনা তদরকি করেছেন। এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ওনি তো একা দেশ চালাতে পারবেন না। সুপারিশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে।
আদালত বলেন, ওই সব এলাকার বাড়ির মালিকরা তিনগুণ বেশিত টাকায় গোডাউন ভাড়া দেন। আর নিজেরা থাকেন গুলশানে। মারা যায় গরিব মানুষ। সিটি করপোরেশন দেখেও না দেখার ভান করে। যারা রাস্তায় মারা গেল তাদের কী দোষ?
আদালত বলেন, পত্রিকায় দেখেছি, সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এটা বাস্তবায়ন করা তাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা জানি না তারা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা। পদক্ষেপ না নিলে ধরে নিতে হবে তাদের অবহেলা ছিল।
আদালত আরো বলেন, পুরান ঢাকার রাস্তা দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও যেতে পারে না। ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে না হয় কিছু হবে না। কিন্তু ৭ থেকে ৮ মাত্রায় ভূমিকম্প হলে কোনো বিল্ডিং থাকবে না। এ ধরনের ভূমিকম্প হলে কাউকে উদ্ধার করারও কেউ থাকবে না।
চকবাজারের আগুনের ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে আদালত বলেন, এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, এটা অবহেলা। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। একজন দায়িত্বশীল আরেকজনের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন, এটা ঠিক না। আমাদের অর্থনীতি অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা দেশের ভাব মর্যদা নষ্ট করে দিচ্ছে।
এ সময় অপর একটি রিটের শুনানির জন্য উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আদালতকে তিনি বলেন, নিমতলীর ঘটনায় কমিটি যে সুপারিশ করেছিল তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় চকবাজারের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনি কোর্টকে এ বিষয়ে শুনানি গ্রহণের আবেদন জানান। আইনজীবী বলেন, এ কাজে সরকারকে সম্পৃক্ত না করলে সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে না।
আদালত বলেন, আমরা তো সরকারের বক্তব্য শুনতে চাই। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সময় নিয়েছেন।
নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশ সমূহের উল্লেখ করে আদালত বলেন, সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। নিমতলীর ঘটনার পর কিছুটা বাস্তবায়ন হলে এ ঘটনা ঘটতো না।
পরে আদালত আইনজীবীদেরকে পৃথক তিনটি রিট এক সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ২টায় আবারো শুনানি হবে।