খালেদার অবরোধ ব্যর্থ
পক্ষকাল প্রতিবেদকঃ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দেওয়ার কারণে বিএনপির আন্দোলন কবরের মধ্যে ঢুকে গেছে। যে কারণে তারা আর কখনোই আন্দোলনে সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
সাভারের হেমায়েতপুরে ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্বোধন শেষে বুধবার দুপুরে তিনি এ সব কথা বলেন।
এর আগে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গত সোমবার বিকালে গুলশানে নিজের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার জন্য গাড়িতে উঠলেও পুলিশ বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখায় ফটকের ভেতরে দাঁড়িয়ে তিনি অবরোধের এই ঘোষণা দেন।
খালেদা বলেন, “আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল। সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই। পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। তারপর যখন আবার পরিবেশ পরিস্থিতি আসবে তখন আমরা সমাবেশ করব।
সরকারের প্রতি তিনি প্রশ্ন করেন, “আমরা চেয়েছিলাম একটা সমাবেশ করব। সরকার আমাদের সমাবেশ করতে দিল না। সমাবেশ করতে না দেওয়ার কারণ কী?”
তিনি বলেন, “টেলিভিশনে দেখছি সরকার বলছে, ‘তাকে আমরা বন্দি করি নাই’।তাদের কথা হলো নিরাপত্তা…। কিসের জন্য, কী নিরাপত্তা তারা… এতোদিন তো কোনো নিরাপত্তা দেয়নি। হঠাৎ করে আমাদের কর্মসূচি আসলে নিরাপত্তার কথা তাদের মাথায় আসে; আর তখন সব বন্ধ করে রেখে দেয়। এটা কোন ধরনের নিরাপত্তা?”
বিএনপি প্রধান খালেদা টানা অবরোধের ঘোষণা দিলেও আগামী শুক্রবার থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হচ্ছে তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা। সারা দেশের মতো বিদেশ থেকেও মুসল্লিরা সেখানে যোগ দিতে আসবেন।
ইজতেমার কারণে অবরোধের কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি-না সে বিষয়ে কিছু বলেননি বিএনপি নেত্রী।
সোমবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে দোতলায় নিজের কক্ষ থেকে নেমে নিচে রাখা সাদা রঙের নিশান পেট্রোল গাড়ির সামনের আসনে বসেন খালেদা জিয়া। কিন্তু গাড়িটি তালাবন্ধ ফটকের সামনে এসে আটকে যায়।
এরপর তার উপদেষ্টা সাবেক পুলিশ মহাপরির্দশক আবদুল কাইয়ুম গেইটের ফাঁক দিয়ে পুলিশকে তালা খুলে দিতে বলেন। পুলিশ তাতে সাড়া না দিলে খালেদার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও একই অনুরোধ করেন।
তাতেও পুলিশ তালা না খোলায় সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
পরে মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক সাংসদ রেহানা আখতার রানু, নীলুফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, সুলতানা আহমেদ ও ফরিদা ইয়াসমীনসহ কয়েকজন ভেতর থেকে কালো পতাকা হাতে ফটকে লাথি দিতে থাকেন এবং তালা খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
এ সময় তারা স্লোগান ধরেন- ‘জিয়ার সৈনিক এক হও/ লড়াই কর’, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন/ বন্ধ করা যাবে না’, খালেদা জিয়া ভয় নাই/রাজপথ ছাড়ি নাই’।
এক পর্যায়ে বাইরে থাকা পুলিশ পিপার স্প্রে ব্যবহার করলে মহিলা দলের নেত্রীরা সেখান থেকে সরে যান। এ সময় খালেদার গাড়ির কাচেও তরল গ্যাস ছিটকে পড়তে দেখা যায়।
মিনিট পনের পরে তারা আবারো স্লোগান ধরলে পুলিশ আরেক দফা পিপার স্প্রে করে। খালেদা জিয়াকে তখনো গাড়ির ভেতরে বসে থাকতে দেখা যায়।
ঘণ্টাখানেক গাড়িতে বসে থেকে খালেদা বেরিয়ে আসেন এবং ফটকের ভেতরে ছোট একটি টুলের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে শুরু করেন।
২২ মিনিটের বক্তব্যে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয়করণ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং বিএনপিকে কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
খালেদা বলেন, “আমি গত পরশুদিন এসেছিলাম অফিস করতে। অফিস থেকে আমি অসুস্থ রিজভীকে দেখতে যাব বলে পল্টনে যাওয়ার জন্য আমার গাড়ির মধ্যে বসেছি। তার পরেই দেখি যে পুলিশ এখানে গেইট বন্ধ করে রেখেছে, গাড়ি টারি দিয়ে সব অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কেন- আমি জানি না।”
৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দেওয়ার পর শনিবার রাতে দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে নয়া পল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ খালেদাকে আটকে দেয়। তখন থেকেই তিনি ওই কার্যালয়ে অবরুদ্ধ।
রোববার রাতে কার্যালয়ের সামনে নতুন করে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে পুলিশ। ১১টি ট্রাক রেখে আটকে দেওয়া হয় ওই সড়কে ঢোকা ও বের হওয়ার পথ।দুটি লরি, একটি পিকভ্যান, জলকামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ফটকের বাইরে ও আশেপাশে মোতায়েন করা হয়।