শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

Daily Pokkhokal
বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » ২৮ ফেব্রুয়ারি সেলিম-দেলোয়ারকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরনের আহবান
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » ২৮ ফেব্রুয়ারি সেলিম-দেলোয়ারকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরনের আহবান
৪৮৭ বার পঠিত
বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

২৮ ফেব্রুয়ারি সেলিম-দেলোয়ারকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরনের আহবান

লেখক -শফী আহমেদ : স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা, আওয়ামী লীগ নেতা।

১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এক সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজিত করে ছিনিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ নামক এক স্বাধীন রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যার পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ফিরে যায় পাকিস্তানি ধারায়। বাংলাদেশের ওপর চেপে বসে সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথর। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সামরিক শাসন তথা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শুরু হয় ছাত্র-জনতার দুর্বার প্রতিরোধ।

আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি। ১৯৮৪ সালের এই দিনটি ছিল এ দেশের ছাত্রসমাজের জন্য এক দুঃখজনক অধ্যায়। সেদিনও ফাগুনে আগুন ঝরেছিল। কেন জানি না বসন্তের আবহাওয়া ছিল সেদিন গুমোটবাঁধা। আকাশে মেঘ জমেনি। কুয়াশাও ছিল না। বসন্তের স্নিগ্ধতাও ছিল না। দিনের শুরুতেই মনে হয়েছিল আজ কিছু একটা অকল্যাণ হবে। তখন দেশে ছিল সামরিক শাসন। বিকেলে ছিল ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিলের কর্মসূচি। শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ আহূত ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে কর্মসূচি পালনের প্রথা অনুযায়ী প্রত্যেক হল থেকে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্তর্ভুক্ত সব ছাত্র সংগঠনের পৃথক পৃথক মিছিল বিকেল ৪টার মধ্যে মধুর ক্যান্টিন এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে পৃথকভাবে সমবেত হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা মধুর ক্যান্টিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন, সমাবেশকে উজ্জীবিত করেন। অতঃপর মূল মিছিল শুরু হয়। সেদিনের কথা মনে হলে আজো আমার গা শিউরে ওঠে। সেদিন কেন জানি আমার মিছিলে যেতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা, মিছিলে না গেলে কি হয়? আমি আমার কয়েকজন বন্ধুকে আমার মনের অবস্থা খুলে বলেছিলাম। কিন্তু তারাও আমাকে অনুরোধ করল- যা হয় হবে, মিছিলে থাক। ডান-বাম খেয়াল রাখ। মধুর ক্যান্টিনের পাশেই ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের মাঠে আমাদের জমায়েত ছিল, সেই জমায়েতে কর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য বক্তব্য দিলাম- যে কোনো প্রতিক‚ল পরিবেশ মোকাবেলা করতে হবে। তারপর খণ্ড খণ্ড মিছিল মধুর ক্যান্টিনের সামনে সমবেত হলো। নেতারা বক্তব্য রাখলেন। কর্মীদের আরো চাঙ্গা করার জন্য কবি মোহন রায়হান আবৃত্তি করলেন এক বিপ্লবী কবিতা- ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য আজ কোনো পরিতাপ নেই, আমাদের জন্মের জন্য আজ কোনো ভালোবাসা নেই, আমাদের ধ্বংসের জন্য আজ কোনো প্রতিকার নেই, আমাদের সবকিছু আজ শুধু ছলনার, ব্যর্থতার ক্লেদ নিয়ে আসে। আজকে এখানে একজন শিক্ষক জন্মাক, আজকে এখানে একজন বুদ্ধিজীবী থাক, আজ নবজন্ম হোক এ দেশের লেখক-কবির আর তারা অন্ধকারে ঝলসিত আগ্নেয়াস্ত্রের মতো হোক স্পর্ধিত; স্পর্ধিত হোক আজ তারা স্পর্ধিত হোক।’

মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে দিয়ে রোকেয়া হল পেরিয়ে টিএসসি হয়ে, কার্জন হলের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলের সামনে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা, ডাকসু ভিপি আক্তারুজ্জামান, খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক, মুনির উদ্দীন আহমেদ, ফজলে হোসেন বাদশা, আনোয়ারুল হক, আবদুল মান্নান, শিরীন আখতার, মোস্তাক হোসেন, মুকুল বোস, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ প্রমুখ। মিছিলটি কার্জন হল পার হয়ে ফুলবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হয়। দাঙ্গা পুলিশ মিছিলের সামনে ও পেছনে অবস্থান নেয়। এ যেন মিছিল নয়, পুলিশি ঘেরাওয়ের মধ্যে জেলখানা। তার পেছনেই ছিল পুলিশের পুলিশবিহীন ট্রাক। আমরা ঠিক আন্দাজ করতে পারিনি কী ঘটতে যাচ্ছে আমাদের ভাগ্যে! মিছিল এগিয়ে যাচ্ছে, আকস্মিক পুলিশের পুলিশবিহীন ট্রাকটি মিছিলের মধ্যে উঠিয়ে দেয়া হলো খুনি জান্তার নির্দেশে। ঘটনাস্থলে শহীদ হলেন ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহীম সেলিম ও দেলোয়ার হোসেন। চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেল আমাদের সাথী বাসদ ছাত্রলীগের নেতা আব্দুস সাত্তার খান, ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবীবসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রকর্মী। সে এক নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ! সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র অর্জনের লড়াইয়ের এক রক্তাক্ত অধ্যায়। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করল, নির্বিচারে লাঠিচার্জ করল, কে নেতা কে কর্মী সেই লাঠিচার্জে কোনো বাছবিচার ছিল না। ইব্রাহীম সেলিম ও দেলোয়ারের লাশ পুলিশ ছিনিয়ে নিয়ে গেল ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। তার পরের ইতিহাস আরো নিষ্ঠুর-নির্মম। সেই লাশগুলো তাদের গ্রামের বাড়িতে পুলিশ পাহারায় পাঠিয়ে দেয়া হলো এবং দাফন করা হলো। আজ সেলিম-দেলোয়ারের শহীদ হওয়ার দিনে তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। সেলিম-দেলোয়ারের আত্মদান সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর থেকে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আমাদের হারাতে হয়েছে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে। সেলিম দেলোয়ারসহ অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্রে।

তবুও গণতান্ত্রিক ধারা এগিয়ে চলেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আমরা আশা করি সংবিধানের ভিত্তিতে, কেবলমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবির চক্র ছাড়া, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারায় জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ধারণ করে আবারো জনগণের সেবার সুযোগ পাবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বিগত বছরগুলোতে মৌলবাদী জঙ্গিরা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল। কিন্তু জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি জঙ্গিদের অস্তিত্ব অনেকটাই নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। গত ছয় মাস ধরে অনাকাক্সিক্ষতভাবে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। মানবতার তাগিদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসনের কার্যকর কোনো সমাধান এখনো তৈরি হয়নি।

বর্তমান সরকারের আমলে আমাদের প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে সরকারের দিক থেকে সুনজর দিতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিচুক্তি অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোকে আইনের আওতায় এনে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুবৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। স্বৈরাচারী এরশাদ আজ নিজেকে গণতন্ত্রী প্রমাণ করতে মাঝে মাঝে পাগলের মতো প্রলাপ বকছেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত অবৈধ ক্ষমতা দখল করে যে নিপীড়ন- নির্যাতন তিনি চালিয়েছেন এর থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কোনো পথ খোলা নেই। সেলিম-দেলোয়ারকে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট করে হত্যা করেছেন এর দায় তিনি এড়াতে পারবেন না। সেলিম-দেলোয়ারসহ হাজারো শহীদের রক্তে অর্জিত গণতন্ত্রের পতাকা এগিয়ে যাবেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যাতে কোনো অবস্থাতেই ব্যাহত না হয় সেদিকে আমাদের সবার সজাগ থাকতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ গড়ে তোলাই হোক আমাদের আগামী দিনের লক্ষ্য। আজকের এই দিনে সেলিম-দেলোয়ারের আত্মদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।



এ পাতার আরও খবর

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ২০৯ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ২০৯
নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণের মধ্যে ‘তীব্র ক্ষোভ তৈরি হবে নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণের মধ্যে ‘তীব্র ক্ষোভ তৈরি হবে
গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনার’ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনার’ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
সাইবার ট্রাইব্যুনালের প্রত্যাহার করা মামলার তালিকা প্রকাশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের প্রত্যাহার করা মামলার তালিকা প্রকাশ
ফেব্রুয়ারির বেতন দেয়নি ১২২ কারখানা, বোনাস ৭২৩টি ফেব্রুয়ারির বেতন দেয়নি ১২২ কারখানা, বোনাস ৭২৩টি
মদের বোতল হাতে বৈষম্যবিরোধী নেতা-নেত্রী, ভিডিও ভাইরাল মদের বোতল হাতে বৈষম্যবিরোধী নেতা-নেত্রী, ভিডিও ভাইরাল
ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা
চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় চাঁদাবাজ  দুই সমন্বয়ক গ্রেফতার চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় চাঁদাবাজ দুই সমন্বয়ক গ্রেফতার
কর ফাঁকিবাজ আবাসন ব্যবসায়ী বহুরূপী সাহেব আলী কি আইনের উর্ধ্বে কর ফাঁকিবাজ আবাসন ব্যবসায়ী বহুরূপী সাহেব আলী কি আইনের উর্ধ্বে
গণপূর্তের মাফিয়া ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু গণপূর্তের মাফিয়া ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)