বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » আজব ব্যাপার একতরফা নির্বাচনেও ব্যালট বাক্স ছিনতাই, হামলা
আজব ব্যাপার একতরফা নির্বাচনেও ব্যালট বাক্স ছিনতাই, হামলা
পক্ষকাল সংবাদ: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৭৮টি উপজেলায় ভোট হয়েছে৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, পুলিশের ওপর হামলা ও ভোট কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেছে৷ অনিয়মের অভিযোগে বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে এসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়েছে৷
প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে সুনামগঞ্জের শাল্লা ও ধরমপাশা উপজেলার তিনটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়েছে৷ আর ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে কুড়িগ্রামের সদর, উলিপুর, রৌমারী, চিলমারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার ছয়টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়৷সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও দুই সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে আটক করা হয় ভোট গ্রহণের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগে৷ ঐ কেন্দ্রটির ভোট গ্রহণও স্থগিত করা হয়৷
নাটোরে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ ও আনসারসহ সাতজন আহত হয়েছেন৷ এদের মধ্যে গুরুতর আহত পুলিশ কনস্টেবল জামাল উদ্দিনকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়েছে৷ অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার তিনটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। আর দুটি কেন্দ্রে সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকলেও পরে চালু হয়৷
এদিকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল অনেক কম৷ জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় ৪টি ভোট পড়ার খবর পাওয়া গেছে৷ অধিকাংশ এলাকাতেই সকালে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিল না৷ দুপুরে কিছু ভোটার দেখা গেলেও বিকেলে আবার ভোটর শূন্য হয়ে যায়৷
বিএনপি ও বামজোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদের ৭৮টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ আর ভাইস চেয়ারম্যান ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন৷ এরা সবাই আওয়ামী লীগের৷ চেয়ারম্যান পদে ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন৷
উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোট হবে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ ও চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ৷ ঈদের পর জুনে পঞ্চম ধাপের ভোট হওয়ার কথা রয়েছে৷ এই নির্বাচন হচ্ছে দলীয় প্রতীকে৷
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর সুশানের জন্য নাগরিক সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে মানুষ নির্বাচনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে৷ ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে৷ ফলে ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়নি বললেই চলে৷ আর উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে তা আবারো প্রমাণিত হল৷ ভোটার তেমন ভোট কেন্দ্রে যায়নি৷ অথচ স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকে সবচেয়ে বেশি৷”
তিনি বলেন, ‘‘আবার এই ভোটারবিহীন নির্বাচনেও ভোটকেন্দ্র দখল হয়৷ তাই বোঝাই যায় যে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের আস্থা হারিয়েছে৷ তাই এখন প্রয়োজন নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা৷ এটা নির্বাচন কমিশন, সরকার, রাজনৈতিক দল সবার দায়িত্ব৷ নির্বাচনী ব্যবস্থা এভাবে ভেঙে পড়লে জাতি গভীর সংকটে পড়বে৷”
তিনি সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সিইসি ইভিএম থাকলে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরতো না বলে প্রকারান্তরে ও কৌশলে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়মের কথাই তুলে ধরেছেন৷”
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার বলেন, ‘‘বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে৷ তবে শুধু সেটাই কারণ নয়৷ ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহও কমে গেছে৷ তারা হয়তো মনে করেন ভোটে তাদের মতামতের প্রতিফলন হবে না৷ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে যে কথা হচ্ছে যে সমালোচনা হচ্ছে এটা তারই প্রভাব৷”
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে নির্বাচনী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷ আমরা কেয়ার টেকার ব্যবস্থা নিয়ে দৌঁড়ঝাপ করেছি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করিনি৷ আমি মনে করি, এখন আমাদের পরীক্ষার কাল চলছে৷ আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে৷”