ঠাকুরগাঁও বক্ষ ব্যাধি হাসপাতালের বেহাল দশা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের বক্ষ ব্যাধি চিকিৎসা কেন্দ্রটি অনেকটাই অকেজো হয়ে পড়েছে। হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সরঞ্জাম ও চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার রোগীরা।
১৯৬৫ সালে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার যক্ষারোগীদের চিকিৎসা সেব প্রদানের জন্য ৩.৩৯ একর জমির উপর ঠাকুরগাঁও বক্ষ ব্যাধি হাসাপাতাল স্থাপিত হয়। প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে এই হাসপাতালে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে যান।
হাসপাতালটিতে ২ জন চিকিৎসক থাকলেও একজন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং অপরজন দীর্ঘ দেড় মাসের ছুটিতে থাকায় বর্তমানে হাসাপাতালটি চিকিৎসক শুন্য।
যক্ষ্মরোগীদের কফ পরীক্ষার মাইক্রোসকপ যন্ত্রটি ৯ বছর ধরে অকেজো হয়ে পরে আছে। জরুরী প্রয়োজনে রোগীদের বাইরে থেকে এক্স-রে করতে হয়। নেই কোন ষ্টোর রুম। ষ্টোর রুম না থাকাতে হাসপাতালের মূল্যবান ফাইলপত্র যেখানে সেখানে পড়ে থাকে।
হাসপাতালে ১৯টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। কাজ না থাকার অযুহাতে অনেকেই নিয়মিত অফিসে আসেন না। দূরবর্তী রোগীদের চিকিৎসার জন্য নেই কোন আবাসিক ব্যবস্থা। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল।
জেলা শহরের হাজীপাড়া বাসিন্দা আলাউদ্দীন জানান, হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর থাকলেও তা দেখভালের জন্য কেউ নেই। এ সুযোগে হাসপাতালের মাঠে সব সময় গরু ছাগল চড়ানো হয়। এছাড়া সন্ধ্যার পর হাসপাতালের মাঠে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে।
সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, হাসপাতালের কফ পরীক্ষার যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় তাদেরকে বাইরে থেকে কফ পরীক্ষা করতে হয়।
গড়েয়া হাটের সোলেমান আলী জানান, তিনি একজন যক্ষ্মরোগী। তিনি প্রায় সময় ঠাকুরগাঁও বক্ষ ব্যাধি হাসপাতালে আসেন। কিন্তু যখনি আসেন তখনি তিনি কোন ডাক্তার পান না।
অন্যান্য রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, যক্ষ্ম সনাক্ত করণে উন্নতমানের মেশিন পত্র না থাকায় ডাক্তাররা যক্ষ্মা সনাক্ত করণে হিমশিম খাচ্ছে।এ অবস্থায় বেশির ভাগ রোগী রংপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
দি লেপ্রসী মিশন বাংলাদেশ ঠাকুরগাঁওয়ের যক্ষ্ম বিশেষজ্ঞ ডাঃ দ্বীজেন্দ্র নাথ জানান, ২০১৩ সালে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬৫৫ জন যক্ষ্ম রোগীকে সনাক্ত করা হয়। এবং ৫৯২ জন রোগীকে সুস্থ্য করে তোলা হয়। এছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৭৪০ জন রোগীকে সনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন ঠাকুরগাঁও বক্ষ ব্যাধি হাসপাতলের চিকিৎসা সেবার মান বাড়ালে রোগীদের আরো বেশি চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাবে।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডাঃ শাহাদৎ হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও বক্ষ ব্যাধি হাসপাতালের ২ জন চিকিৎকসের মধ্যে একজন ছুটিতে অপরজন ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি আরো জানান, দেশের অনেক জেলায় ২০ শয্যা বিশিষ্ট বক্ষ ব্যাধি হাসপাতাল রয়েছে। কাজেই ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড় এলাকার মানুষের চিকিৎসার্থে হাসপাতালটি মেরামত ও সরঞ্জাম সরবরাহ একান্ত প্রয়োজন।