সিন্ডিকেট হত্যার অভিযোগ চাপিয়ে দেয়ার খেলায় মেতেছে
পক্ষকাল সংবাদ ১৮ মার্চ- হাস্যোজ্জ্বল সুখী দম্পতি। ডাক্তার রাজন কর্মকার আর ডাক্তার কৃষ্ণা মজুমদার। একই পেশায় কর্মরত ছিলেন দুজন। দক্ষ ও পেশাদারিত্বের সুনাম আছে দুজনেরই। কর্মজীবন আর সামাজিক জীবন মিলিয়ে ভালবাসারও কমতি ছিলো, তা বলার সুযোগ নেই। হাজার হাজার হাস্যোজ্জ্বল আর ভালবাসাপূর্ণ ছবিই বলে দেয় কতটা বোঝাপড়া আর সাজানো ছিলো তাদের সংসার।
কৃষ্ণার পরিবার বলছে, রাজনের মৃত্যুর পর স্বামী হারানোর শোকের উপরই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে স্বামী হত্যার মতো অন্যায় অভিযোগ। কারো কাছে নেই প্রমাণ, রাজনের জীবন-যাপনে ছিল না দাম্পত্য কলহের লেশমাত্র। তবুও কলহ আর হত্যার অভিযোগ; যেই অভিযোগের নেই কোনো সূত্র, নেই কোনো ভিত্তি।
চিকিৎসকরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক ভূমিকম্পের মতো। কখন আসবে, কেউ বলতে পারেন না। রাজন উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন।
ডা. রাজনকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আসাদ বলেন, রোববার ভোররাত ৩টা ৪৫ মিনিটে রাজন কর্মকারকে তার পরিবার হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
কর্তব্যরত ডাক্তার আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলার পরও একদল অতি উৎসাহী চিকিৎসকদের দেখা যাচ্ছে, আগেই বলে দিচ্ছেন এটি হত্যাকাণ্ড। ময়নাতদন্তের আগেই হত্যাকাণ্ড হিসেবে মতামত দেয়া কতটুকু যুক্তি সঙ্গত, তা ভেবে দেখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। হত্যা তার স্ত্রী-ই করেছেন? তদন্তের আগে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া প্রচলিত আইনের পরিপন্থী বলেও মনে করেন তারা। প্রমাণ ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করা ঠিক নয়। পুলিশের ধারণা, একটি সিন্ডিকেটের প্ররোচনায় অনেকেই দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য বক্তব্য দিচ্ছে।
কৃষ্ণার পরিবার সূত্রে জানা যায়, রোগীদের সুস্থ করা, যার চেষ্টার কমতি ছিলো না, সেই ব্যক্তিই কিছুটা বেখেয়ালি ছিলেন নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে। রাজন ডাক্তার প্রদীপ কুমারের কাছে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। নিজের পেশার প্রতি তিনি এতটাই সচেষ্ট ছিলেন যে, কাজের চাপে প্রায়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ হতেন। কিন্তু তাকে ঠিকমত ওষুধ খাওয়াতে বেগ পেতে হত পরিবারের সদস্যদের।
রাজন কর্মকারের মৃত্যুর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে মাফিয়া বা সিন্ডিকেট গ্রুপ।
দায়িত্ব নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিগ্রহণ করে রাতারাতি অবৈধ খাদ্য মজুদ আর নানা দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। প্রধানমন্ত্রীর নেয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে সব থেকে সফল তার মন্ত্রণালয়। এ কাজ করতে গিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার চক্ষুশূল হয়েছেন অনেকের। এখন সেইসব দুর্নীতিবাজরা প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠেছে সুযোগ বুঝে। সিন্ডিকেটগুলো ন্যায়-অন্যায় জ্ঞান হারিয়ে সাজাচ্ছে যাচ্ছেতাই অভিযোগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে স্বার্থ উদ্ধার আর মিডিয়াতে হিরো সাজার এক ঘৃণ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে ওই সিন্ডিকেট। চিকিৎসকদের গ্রুপিং আর নোংরা রাজনীতি নতুন কিছু নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু গ্রুপ। বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সঙ্গে নিজেদের শত্রুতাকে কাজে লাগিয়ে উত্তপ্ত করার চেষ্টা। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার ছাড়া আর কিছু নয়। খাদ্যমন্ত্রীর অর্জন ও সুনাম নষ্ট করে ফের মন্ত্রনালয়কে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্বার্থান্বেষী মহল।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এরই মধ্যে এসব সিন্ডিকেটের সদস্য, তাদের সঙ্গে আতাতকারী ডাক্তার গ্রুপ এবং অন্যান্য স্বার্থান্বেষীদের তালিকা তৈরি করেছে যারা ঘটনাটিকে ভিন্নস্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের ভাবা উচিত সেই স্ত্রীর কথা, যে তার স্বামীকে হারিয়েছেন। প্রমাণবিহীনভাবে তাকে দোষী না করে তার পাশেই দাঁড়ানো উচিত। আইনের আওতায় আসুক দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ও তাদের দোসরারা, যারা মৃত্যু ও ভালবাসা নিয়েও ছিনিমিনি খেলতে পিছপা হয় না।