বিএনপিতে ১২২ জঙ্গির সন্ধান
ডেস্ক ১৭ মার্চ- জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত ১২২ জন বিএনপি নেতাকর্মীর তালিকা তৈরি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছে বা ছিল এবং এরা জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এদেরকে দল থেকে অনতিবিলম্বে বের করে দেয়ার সুপারিশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদি বের করা না হয় তাহলে বিএনপিকেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করবে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
যে ১২২ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে বিএনপির অনেক সাবেক মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ একাধিক ব্যক্তির নাম আছে। এদের মধ্যে ৩৮ জনের তালিকা পাওয়া গেছে যারা আফগানিস্তানের তালেবান বা অন্যান্য উগ্র মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল; আফগান ফেরত এরা আফগানিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল। মার্কিন বিরোধী তথাকথিত যুদ্ধেও তারা অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে অন্তত ৬ জনকে পাওয়া গেছে যারা সিরিয়ায় আইএসএর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল এবং সিরিয়া যুদ্ধে এরা অংশগ্রহণ করেছিল। এছাড়াও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বাকিরা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, যে সমস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মার্কিনবিরোধী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বা মার্কিন নীতির সমালোচনা করে প্রত্যক্ষ, সসস্ত্র জিহাদ বা অন্য উগ্র মৌলবাদী পন্থা অবলম্বন করে তাদেরকে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জঙ্গি ও সসস্ত্র তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত একটি তালিকা রয়েছে। এই তালিকাভুক্তরা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্যই হয় না, এরা যে দেশেই অবস্থান করুক না কেন সে দেশের পক্ষ থেকে যেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয় সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
মার্কিন দূতাবাসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যে তালিকা তৈরি করেছে এই তালিকায় তারা খুব শিগগিরই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিএনপির কাছে হস্তান্তর করবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, লুৎফুজ্জামান বাবর, কায়কোবাদসহ বিএনপির যে নেতাদের নাম দেয়া হয়েছে তারা ইতিমধ্যেই জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন এবং তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বিএনপির একাধিক নেতার জড়িত থাকার বিষয়টি আদালতের রায়েই প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিএনপি তাদেরকে বহিস্কার করবে কি করবে না সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। সরকার মনে করে, বিএনপির যারা সন্ত্রাসী, জঙ্গী ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে বিএনপিতে আশ্রয় নিয়েছে, বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক দল হয় তাদের অবিলম্বে বহিস্কার করা উচিৎ।
তবে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেন, বিএনপি কোন উগ্র মৌলবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়নি। এগুলো সরকারের অপপ্রচার। বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট ও বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে দেয়ার জন্য সরকার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিএনপির বিভিন্ন ত্যাগী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জঙ্গি তকমা লাগানোর চেষ্টা করে আসছিল। এ ব্যাপারে তা আন্তর্জাতিক লবিংও করেছে। সেজন্যই হয়তো বিএনপির কোন কোন নেতাকর্মীকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো বাস্তবসম্মত নয়।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপিতে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে বিশ্বাস করে। বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক সংগঠন না হতো তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর পর বিএনপি যে শক্তি আছে তাতে সহিংস আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারতো। কিন্তু বিএনপির ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে প্রমাণ করেছে বিএনপি কতোটা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পিত অপপ্রচার হয়েছে বলে নজরুল ইসলাম খান মনে করেন এবং সেই অপপ্রচারের অংশ হিসেবেই বিএনপির বিরুদ্ধে এইসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।