রোহিঙ্গারা বেপরোয়া এখন
ডেস্ক- - রোহিঙ্গারা দিন দিন উখিয়া-টেকনাফ শিবিরের বেপরোয়া ও হিংস্র হয়ে উঠছে। মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের অপরাধ। রোহিঙ্গাদের মারমুখী আক্রমণ থেকে রেহাই মিলছে না কারোরই। শুধু নিজ গোত্রের গণ্ডিতে এখন আর সীমাবদ্ধ নেই তাদের অপরাধ কার্যক্রম। ইতিমধ্যে তাদের রোষানলে পড়ে একাধিকবার লাঞ্ছিত হয়েছেন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, এনজিও কর্মী, বিদেশি পরিদর্শক দলের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সব থেকে চরম বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয়রা। সর্বশেষ শনিবার গভীর রাতে রোহিঙ্গাদের হামলার শিকার হয়েছেন কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জসহ পুলিশের একটি দল। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ৭-৮ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে রোহিঙ্গাদের ছত্রভঙ্গ করে।
পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে আটক করে। গত দেড় বছরে আশ্রয় শিবিরগুলোয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২৫টির মতো খুনের ঘটনা ঘটেছে। হত্যা, ধর্ষণ, মাদক পাচার, ডাকাতিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা রোহিঙ্গারা করছে না। ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, রোহিঙ্গারা নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করছে। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। তাদের মারমুখী আচরণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে নিরাপত্তা শঙ্কা ও উদ্বেগ বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হচ্ছে খুনের মতো নৃশংস ঘটনা। সামান্য বিষয়ে হিংস্র হয়ে ওঠে রোহিঙ্গারা।
এদিকে উখিয়ার বালুখালী ইউপি সদস্য নুরুল আবছার বলেন, রোহিঙ্গারা দিন দিন হিংস্র হয়ে উঠছে। প্রতি মুহূর্তে তাদের রূপ বদলে যাচ্ছে। শরণার্থী শিবিরসংলগ্ন এলাকাগুলোয় স্থানীয়রা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করতে পারছে না। কোনো শাক-সবজি চাষ করতে পারছে না। চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। ক্যাম্পে এত লোক, কাকে সন্দেহ করা যায়? স্থানীয়রা এসব কারণে কোনো ক্ষতির প্রতিবাদ করতে গেলেই রোহিঙ্গারা সংঘবদ্ধ হয়ে তেড়ে আসে। স্থানীয় ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় যেসব দেশি-বিদেশি এনজিও কাজ করছে তাদের ওপর আরও বেশি নজর রাখা উচিত। রোহিঙ্গাদের ভয়ঙ্কর কার্যকলাপে স্থানীয় লোকজন সবসময় ভয়ে ও আতঙ্কে থাকে। ফলে রোহিঙ্গারা কে কোথায় যাচ্ছে তাদের তদারকি করা দরকার।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, গত দেড় বছরে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও স্থানীয়দের সঙ্গে ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় ৩ শতাধিক মামলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ১২টি অস্ত্র মামলায় ২৭, ৮২টি মাদক পাচার মামলায় ১২২, ৭টি ধর্ষণ মামলায় ১০, ১০টি বৈদেশিক আইনের মামলায় ১২, ৪টি অপহরণ মামলায় ২৫, ৫টি চোরাচালান মামলায় ১০, ২টি চুরি মামলায় ৩, ৬টি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় ১৯, ২২টি হত্যা মামলায় ৬১ এবং অন্যান্য ৯৬টি মামলায় আরও ১৮২ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশসূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের ৩০টি আশ্রয় শিবির রয়েছে। এর মধ্যে উখিয়ায় ২৩ ও টেকনাফে ৭টি।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক চিন্তা থেকে আশ্রয় দেওয়া হলেও তারা এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি গত বছর স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইমলামকে রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম গুলি করে হত্যা করে। পাশাপাশি নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণে খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছে রোহিঙ্গারা। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কিছু স্থানীয় চক্র। তাদের কারণে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’ তবে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফের সব রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধমূলক কর্মকা হচ্ছে এটা ঠিক নয়। কয়েকটি শিবিরে কিছু ঘটনা ঘটাচ্ছে কিছু অসাধু রোহিঙ্গা চক্র। তাদের জন্য সব রোহিঙ্গার দুর্নাম হচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনলে সব রোহিঙ্গা দুর্নাম থেকে বেঁচে যাবে।’ তবে তাদের সঙ্গে কিছু স্থানীয় লোকজনের জড়িত থাকার কথা জানান তারা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘শিবিরে লাখো রোহিঙ্গার মধ্যে কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল আছে। শিবিরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুবই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’