শনিবার, ২৩ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » শহীদ ভগৎ সিং, রাজগুরু, সুখদেব- লাল সালাম
শহীদ ভগৎ সিং, রাজগুরু, সুখদেব- লাল সালাম
দেশপ্রেমিক ডেস্ক -
ভোর রাতে ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর করার প্রচলিত নিয়ম ভেঙে ১৯৩১ সালের ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় লাহোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো বিপ্লবী ভগৎ সিং, রাজগুরু ও সুখদেব-কে। হত্যার পর তটস্থ বৃটিশ শাসকেরা ঐদিন রাতেই কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে পাঞ্জাবের সুপ্রসিদ্ধ শতদ্রু নদীর তীরে তাঁদের দেহ পুড়িয়ে ফেলেছিলো।
পরাধীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আকাশে ধুমকেতুর মতো উদিত হয়েছিলেন শহীদ ই আজম ভগৎ সিং। পাঞ্জাবের অকুতোভয় বিপ্লবী শহীদ সর্দার অজিত সিং-এর ভাইপো সর্দার ভগৎ সিং দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন কৈশোরেই। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল বর্ধমানের তরুণ বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তকে সাথে নিয়ে দিল্লী অ্যাসেম্বিলি হাউসে ‘শব্দ বোমা’র বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উপনিবেশিক শাসকদের মধ্যে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন ভগৎ সিং। কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে নয়, পরাধীন দেশবাসীর ঘুম ভাঙাতে এবং বধির বৃটিশ শাসকদের কর্ণকুহরে স্বাধীনতার দাবি পৌঁছে দিতে দিল্লী অ্যাসেম্বিলি হাউসে বোমাবিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিলো। বিপ্লবী যতিন দাসের বানানো সে বিশেষ বোমায় সেদিন কেউ হতাহত হয়নি। বোমা বিস্ফোরণের পর লিফলেট ছড়িয়ে দিয়ে এবং হাতের পিস্তল ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত। উদ্দেশ্য ছিলো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দাবি উচ্চারণ করা। আদালতে দাঁড়িয়ে ভগৎ সিং অসীম সাহসিকতায় সে কাজটা করেছিলেন। বিচারে তাঁদের যাবজ্জীবন দিপান্তরের সাজা হয়েছিলো।
অত্যাচারী বৃটিশ পুলিশ কর্মকর্তা স্যান্ডার্স হত্যা-মামলায় ভগৎ সিং, রাজগুরু ও সুখদেব-এর বিরুদ্ধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণা করেছিলো আদালত। দেশমাতৃকার জন্যে আত্মোৎসর্গ করতে নির্ভীক বিপ্লবীরা প্রস্তুত থাকলেও, প্রতিবাদে আসমুদ্রহিমাচল সমগ্র ভারতবর্ষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলো। তাঁদের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখার জন্যে গান্ধীজির প্রতি দাবি জানানো হয়েছিলো। কথা দিয়েও গান্ধীজি কথা রাখেননি। ফাঁসি কার্যকর করার পরদিন ২৪ মার্চ কংগ্রেসের করাচি অধিবেশনে প্রবল বিক্ষোভের মুখে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করলেও, ভগৎ সিং-সহ বিপ্লবীদের সম্পর্কে বিভিন্ন সময় অশ্রদ্ধাপূর্ণ মন্তব্য করেছেন গান্ধীজি।
এখনও প্রতিবছর ২৩ মার্চ পাঞ্জাবের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী শতদ্রু নদীর তীরে লাখো মানুষ সমবেত হয় মহান শহীদ-ত্রয়ীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানাতে। জাতীয়তাবাদী চেতনার সীমা অতিক্রম করে সাম্যবাদী চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন শহীদ ই আজম ভগৎ সিং। স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক ভারতবর্ষের। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের আপোষহীন বিপ্লবাত্মক ধারার অগ্রগণ্য প্রতিনিধি, যার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ শ্লোগানটি ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো, সে মহান বিপ্লবী ভগৎ সিং ও তাঁর সহযোদ্ধা রাজগুরু, সুখদেব-কে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি!
ইনকিলাব জিন্দাবাদ।