সুবর্ণচরের গণধর্ষণ: জামিনের নেপথ্যে কী ছিল?
পক্ষকাল প্রতিবেদক -বহুল আলোচিত নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রুহুল আমিনকে দেয়া এক বছরের জামিন আদেশ প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট। আজ শনিবার সকালে জামিন আদেশ রিকল করে অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রত্যাহারের এ আদেশ দেন। এর আগে বিচারকের খাস কামরায় দুইপক্ষের আইনজীবীদের ডাকা হয়।
চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুলকে ১৮ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জামিন দেন। এ নিয়ে ২১ মার্চ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় শনিবার ছুটির দিনে আদেশ রিকল করা হয়।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় জানান, বেলা ১১টায় বিচারকেরা চেম্বারে বসেন। এ সময় তারা রাষ্ট্রপক্ষের ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের চেম্বারে ডেকে নেন। সেখানে বসেই তারা পূর্বের আদেশের বিষয়ে ফের আদেশ দেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন গ্রহণের সময় ধানের শীষে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় এই চল্লিশোর্ধ নারীর। তারপর ওইদিন রাতেই সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের সহযোগীরা ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তার স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পরপরই এটি নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠে।
এ ঘটনায় চরজব্বর থানায় ওই নারীর স্বামীর করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, আসামিরা তার ঘরবাড়ি ভাংচুর করে। পরে ঘরে ঢুকে বাদীকে পিটিয়ে আহত করে এবং সন্তানসহ তাকে বেঁধে রাখে। পরে দলবেঁধে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের শিকার নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু তার এ জামিন নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, জামিন অযোগ্য ধারায় করা ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি জামিন পেলেন কী করে, এর পেছনে রহস্য কী?
জামিনের পেছনের রহস্য:
এ নিয়ে জার্মানির বাংলা বিভাগ ডয়েচে ভেলে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, রুহুল আমিনকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিলের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার সময় বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে আসামি জামিন পেলেও এখনো মুক্তি পাননি।
জামিন দেয়া হাইকোর্ট বেঞ্চে রুহুল আমিনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. আশেক-ই-রসুল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) বিশ্বজিৎ রায়। রুহুলের জামিনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী ভূমিকা কী ছিলো? তিনি কী জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন? রহুলকে কোন গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছেন আদালত?
এর জবাবে বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘মামলার এজাহারে রুহুল আমিনের নাম ছিল না। পুলিশ ফরোয়ার্ডিংয়ে তার নাম এসেছে। এ সব দেখে-শুনেই আদালত জামিন দিয়েছেন।’
২২ ধারায় একটি জবানবন্দির কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘এতে ধর্ষণের মূল নির্দেশদাতা হিসেবে রহুল আমীনের নাম বলা হয়েছে। কিন্তু জামিন আবেদনের সময় ওই জবানবন্দিটি গোপন করা হয়েছে।’
তবে রুহুলের জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন দাবি করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, এই রুহুল আমিন যে সুবর্ণচরের গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি, তা তিনি জানতেন না। তার জামিন পাওয়া খুবই দুঃখজনক৷