বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | রাজনীতি » ইরান বিপ্লবের পর কী হয়েছিল খোমেনির সহযোগীদের
ইরান বিপ্লবের পর কী হয়েছিল খোমেনির সহযোগীদের
ডেস্ক-
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেনি ১৫ বছরের নির্বাসন শেষে তেহরানে ফিরে এসেছেন, এই ছবিটি হয়তো অনেকেই দেখে থাকবেন। সেই ছবিতে দেখা যায়, খোমেনিকে সহযোগীদের একটি বড় দল ঘিরে রেখেছে, যাদের প্রায় সবাই পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে মারা যাবেন।
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের জন্ম এরাই দিয়েছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে যান, যাদের মধ্যে থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন মাত্র একজন।
চল্লিশ বছর আগে খোমেনির সঙ্গে একই বিমানে এসে যারা তেহরানের মাটিতে পা রেখেছিলেন, পরবর্তীতে তাদের কি হয়েছিল, এখানে রয়েছে তারই বর্ণনা।
Image caption বৃত্ত চিহ্নিত মোর্তেজা মোতাহারি, হাসান হাসান লাহাওতি আশকেভারি এবং আহমাদ খোমেনি আয়াতোল্লাহ খোমেনির সঙ্গে একই বিমানে ছিলেন
১. মোর্তেজা মোতাহারি ছিলেন ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের একজন অন্যতম প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক। ১৯৭৯ সালের ১লা মে তেহরানে গুপ্তঘাতকের হামলায় নিহত হন মোতাহারি। ফোরঘান নামের একটি ইসলামিক দল ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের বিপক্ষে ছিল ওই দলটি, যারা ইসলাম নিয়ে চরমপন্থি একটি আদর্শ ধারণ করে।
২. হাসান লাহোতি আশকেভারি চিলেন আয়াতোল্লাহ খোমেনির ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী। কিন্তু বিপ্লবের পর তিনি ইরানের প্রথম প্রেসিডেন্ট বানি সদরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তখন তিনি আয়াতোল্লাহ খামেনির (যিনি ইরানের বর্তমান সুপ্রিম লিডার) অনেক বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করতে শুরু করেন। বিপ্লবের দুই বছর পরে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয় এবং সেখানেই তিনি মারা যান। তার পরিবারের অভিযোগ, তাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে।
৩. আহমাদ খোমেনি ছিলেন আয়াতোল্লাহ খোমেনির সন্তান এবং তার ডান হস্ত। ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে তিনি মারা যান। ভাবা হতো যে, খোমেনির পরিবারের সদস্যরা ইরানের সংস্কার বাদী অংশের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ।
বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
৪. সাদেক কোৎবজাদেহ ছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিপ্লবের পর থেকে ১৯৮০ সালের অগাস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তবে আয়াতোল্লাহ খোমেনিকে হত্যা করার একটি ষড়যন্ত্র আর ইসলামিক প্রজাতন্ত্র উচ্ছেদ করার পরিকল্পনার অভিযোগে ১৯৮২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়
৫. আবল হাসান বানি সদর ছিলেন ইরানের বিপ্লবের পর দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি ইরান থেকে পালিয়ে যান এবং এখন নির্বাসনে রয়েছেন। ১৯৮১ সালের ২১শে জুন তার অনুপস্থিতিতে মজলিস (ইরানের সংসদ) বানি সদরকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি ইরান প্রজাতন্ত্রের বিরোধী পক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছেন।
৬. সাদেগ তাবাতাবায়ি ছিলেন আয়াতোল্লাহ খোমেনির ভগ্নীপতি। বিপ্লবের পর তিনি সরকারি বেশ কয়েকটি পদের দায়িত্ব পান কিন্তু পরবর্তীতে রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানিতে ফুসফুসের ক্যান্সারে তিনি মারা যান।
৭. দারিউস ফোরোহারকে হয়তো ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে। একজন ধর্মীয় নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন ইরানের সরকারের একজন বিরোধী। ১৯৯৮ সালে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের লোকজনের হাতে তিনি এবং তার স্ত্রী নিহত হন।
১৯৭৯ সালে যে বিমানে করে ফ্রান্স থেকে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ইরানে আসেন, সেই বিমানেই তার সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই বিপ্লব পরবর্তী রাজনীতির শিকার হন। দুইজন গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত, একজনের মৃত্যুদণ্ড, একজনের রহস্যজনক মৃত্যু আর আরেকজন নির্বাসনে রয়েছেন।
তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, এরা সকলেই, এমনটি খোমেনি পরিবারের সদস্যরাও- সবাই দেশটির শাসকদের থেকে নিজেদের আলাদা করে রেখেছেন।
ইরান এখন একেবারেই ভিন্ন একদল লোক পরিচালনা করছে। এমনকি বর্তমান সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লাহ খামেনির ঘনিষ্ঠ কেউ এই ছবিতে নেই। ।