বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » দখলদাররা গণতন্ত্র-উন্নয়ন কিছুই দিতে পারে না: শেখ হাসিনা
দখলদাররা গণতন্ত্র-উন্নয়ন কিছুই দিতে পারে না: শেখ হাসিনা
পক্ষকাল ডেস্ক-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক দল দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন কোনোটিই দিতে পারে না।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ধবার বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গিলে যে দল সৃষ্টি হয়, তাদের গোড়ায় কোনো মাটি থাকে না। ওই স্বর্ণলতার মতো গাছের ডালে বসে গাছের রস খেয়ে বাঁচে।
“গাছ মরে গেলে তারাও থাকে না। কাজেই তাদের কোনো অস্তিত্ব খাকে না। ক্ষমতা ছাড়া অস্তিত্বই থাকে না। সেটাই আজকে বাংলাদেশে প্রমাণিত সত্য।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে যতই চিৎকার করুক গণতন্ত্র নাই, গণতন্ত্র নাই। ওই ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল কখনোই গণতন্ত্র দিতে পারে না, দেশের মানুষের কল্যাণও করতে পারে না।
“তাই যদি করতে পারত, এই ২১ বছর যে তারা ক্ষমতায় ছিল, তখন কিন্তু বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করতে পারত। তা তো হয় নাই, করে নাই। বরং বাংলাদেশের মানুষকে ভিক্ষুক বানিয়ে রেখেছিল। তারা তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করেনি। তারা বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনবে কেন?”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পরই এদেশের মানুষ সত্যিকারভাবে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আর গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে কেউ বাংলাদেশকে ভিখারির চোখে দেখে না। গত ১০ বছরের উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
“কারণ এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। গণত্রন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগকে শেষ করবার জন্য আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ চেষ্টা করেছে, খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শিকড় এমনভাবে বাংলাদেশের মাটিতে জনগণের সাথে প্রোথিত যে, এটাকে কখনও শেষ করতে পারেনি।
“বরং আজকে এটা প্রমাণ হয়েছে যে রাজনৈতিক দল জনগণের কথা বলে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে করে গড়ে ওঠে সেই দলই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।”
জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “যে সংগ্রাম তিনি (বঙ্গবন্ধু) শুরু করেন ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ থেকে; ধাপে ধাপে বাঙালিকে তিনি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন।”
শোষণ, বঞ্চণার বিরুদ্ধে জাতির পিতার সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে একটা জাতিকে মুক্তি ও স্বাধীনতার চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি।
১৯৭০ এর নির্বাচনের পর যখন ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দিলেন না তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার প্রস্তুতি শুরু করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “পতাকা কী রকম হবে, জাতীয় সংগীত কী হবে, সেটা আগেই ঠিক করা হয়েছিল।
“অর্থাৎ বহু আগে থেকেই স্বাধীনতার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি ধাপে ধাপে এগিয়েছেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। যাতে করে পাকিস্তান নামের সেই দেশটির মিলিটারি শাসক কখনও যেন বাঙালির ওপর দোষ দিতে না পারে যে এরা বিচ্ছিন্নতাবাদী।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “সাতই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে একটা গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি এবং কার কী করণীয় তার সবই তিনি বলে দিয়েছিলেন। এভাবে তিনি একটা অসহযোগ আন্দোলনকে সশস্ত্র বিপ্লবে রূপান্তর করে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করেছিলেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, এরপর ২৫ মার্চ রাতে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণায় শেষ সৈন্য বিতারিত না হওয়া পযন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে- এই ঘোষণাটাই ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে পৌঁছে দিলেন।
বাকশাল প্রসঙ্গ
আলোচনা সভায় বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত বহুল আলোচিত বাকশাল পদ্ধতি নিয়ে নানা সমালোচনার জবাবও দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশকে ঢেলে সাজাতে শুরু করলেন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন। একদিকে যেমন তিনি বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ছিলেন, অন্যদিকে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার কাজটিও করছিলেন।
“বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক-আওয়ামী লীগ গঠন করে একটা প্ল্যাটফর্ম করেন। এই কৃষক-শ্রমিক-আওয়ামী লীগ যেটাকে অনেকে বাকশাল হিসেবে বলে। আর বাকশাল এটা ছিল কৃষক-শ্রমিক-আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল স্তুরের মানুষ, সকল শ্রেণী পেশার মানুষ, সকলকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা।
“প্রতিটি রাজনৈতিক দল, আমাদের সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ বাহিনী থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সকলকে একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে দেশের আর্থ-সামাজিক কাজে তাদেরকে সম্পৃক্ত করে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য এই জাতীয় ঐক্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীরা, যারা একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল। যারা যুদ্ধাপরাধী ছিল। যারা ওই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে গ্রামের পর গ্রাম পথ চিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে। যারা আমাদের মা-বোনকে ওই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। যারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের ষড়যন্ত্র থেমে ছিল না। তারা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল ঠিকই। পরবর্তীতে তারা একের পর এক চক্রন্ত করে যাচ্ছিল।”
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ অনেক নেতাকে হত্যার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “পাটের গুদামে আগুন দেয়া হত। থানায় আগুন দিয়ে অস্ত্র লুটপাট করা হত। এমনকি তারা রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী আর যারা আন্ডারগ্রাউন্ড কমিউনিস্ট, সর্বহারা পার্টি, এরা কিন্তু তখন এক হয়ে যায়। এবং তারাই কিন্তু নানান চক্রান্ত শুরু করে।
“এরসঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো, যারা পাকিস্তানিদের সাহায্য করেছিল। সেভেন ফ্লিট দিয়েও যারা বাঙালিদের দমন করার জন্য পাকিস্তানিদের সাহায্য করতে চেয়েছিল, যারা চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক, যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বলেছিল এই দেশটা স্বাধীনে হয়ে কী হবে, দেশ স্বাধীন হলেতো এ্টা একটা তলাবিহীন ঝুড়ি হবে। অর্থাৎ বাঙালির বিজয়কে যারা একেবারে মেনে নিতে পারে নাই। তারাই কিন্তু এই চক্রান্তে লিপ্ত ছিল।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আর এরা হাত করে নেয় আমাদেরই কিছু লোকদের। তাদেরকে নিয়ে, তাদেরকে অর্থ সম্পদ দিয়ে, তাদের বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করা শুরু করে। এই চক্রান্তকে অতিক্রম করে জাতির পিতা অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যান।
“এই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসে। অফিস আদালতে সকলে কাজ করে। যে শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিত্যক্ত, সেগুলো জাতির পিতা আবার চালু করে দেন। কো-অপারেটিভের মাধ্যমে কৃষিকাজ করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে তিনি স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলেন যেন কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়। বাংলাদেশ যেন মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা। ১৯টা জেলাকে ভেঙে প্রত্যেক মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করলেন। গভর্নর নিয়োগ করলেন।
“বঙ্গবন্ধুর এই এই পদ্ধতিতে মানুষের ভেতর একটা আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছিল এবং মানুষ সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছিল। ঠিক তখনই এই শ্রেণিটা, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, যারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর, যারা ছিল যুদ্ধাপরাধী তারা এবং তাদের আন্তর্জাতিক বন্ধু এরা এক হয়ে যায়। তারা চক্রান্ত শুরু করে। সেই ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের জীবনে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার ’৭৫ এর ১৫ই অগাস্ট।
এরপর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়েছিল।
“দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কতগুলো দল করার সুযোগ দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না। কথা বলার অধিকার ছিল না। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য হল যখন দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল তখন সেটা অনেকেরই ভালো লাগেনি। যখন মার্শাল ল আসল, কথায় কথায় ডান্ডার বাড়ি দিত, তখন হুজুর হুজুর ডেকে খুবই, যা কিছু করেছেন আহা বেশ বেশ এই বলে খোশামোদি, তোশামোদি, চাটুকারের দল সৃষ্টি হয়েছিল।
“আর এই চাটুকারের দলই মিলিটারি ডিক্টেটরদের পদলেহন করতো। আর তাদের আমলটাই তারা খুব ভালোভাবে দেখে। কারণ তখন যারাই স্বাধীনতার বিরোধী তারাই ক্ষমতায়। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকে গণতন্ত্র রক্ষার নামে এদের সঙ্গে হাতও মেলায়।”
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় থেকে তারা দেশের কী উন্নয়ন করেছে, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এদেশের মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, বাসস্থান কোনোদিকে তাদের নজর ছিল না। তাদের নজর ছিল নিজেরা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ভোগ করবে। অর্থশালী হবে, সম্পদশালী হবে। আর একটা এলিট গ্রুপ সৃষ্টি করে যারা তাদেরকে শুধু বাহবা দেবে। সেই তোশামোদী, খোশামোদী, চাটুকারের দলই তারা সৃষ্টি করেছিল।”
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করির সেলিম প্রমুখ।