মিথি বিয়ের দেড় বছরের মাথায় পুড়ে মারা গেলেন
পক্ষকাল সংবাদ - বিয়ের এক বছর ৭ মাসের মাথায় রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এফ আর টাওয়ারে লাগা আগুন কেড়ে নিলো বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বশিপুর গ্রামের তানজিলা মৌলি মিথির জীবন। বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান তিনি।
মিথির চাচা সরদার মো. সালাউদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার মিথি ওই টাওয়ারের দশম তলায় কর্মস্থলে ছিল। দুপুরে আগুন লাগলে ও সেখানে আটকা পড়ে। এরপর মোবাইল ফোনে জানালেও বের করা সম্ভব হয়নি। বিকেলে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া অবস্থায় ওকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এরপর কুর্মিটোলা হাসাপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ পর ওর মৃত্যু হয়। পরিচয়পত্র দেখে সনাক্ত করার পর মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, স্বপ্নের সংসার রেখে পুড়ে মারা গেল মেয়েটা।
আদমদীঘির সান্তাহার পৌরসভার বশিপুর গ্রামের অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদের মেয়ে মিথি এফ আর টাওয়ারে হেরিটেজ এয়ারএক্সপ্রেস নামে একটি ট্যুরিজম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে কর্মরত কুমিল্লার রায়হানুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এই দম্পতি মিরপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় মিথির মরদেহ বাড়ি পৌঁছালে শতশত নারী-পুরুষ বাড়িতে ভিড় জমায়। এ সময় স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। মিথির চাচা সালাউদ্দিন জানান, মিরপুর প্রথম জানাজে শেষে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১১টায় বশিপুর নিজ গ্রামে মিথির মরদেহ নিয়ে আসা হয়। বাদ জুমা সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সাংবাদিক ইমন নাজমুল ফেসবুকে লিখেছেন, আগুন কেড়ে নিল মেয়েটার জীবন। প্রচন্ড ধোঁয়া আর উচ্চমাত্রার তাপ; অক্সিজেনের অভাব এফআর টাওয়ারে, তখন হয়তো ভেতরে যারা ছিলেন তারা আহাজারি করছিলেন, কি-ই বা করার ছিল মেয়েটার। আগুনে আটকা মেয়েটা বাবাকেও ফোন করেছিল তখন। কথাও হয়েছিল কিন্তু হায়..! আহা, জীবন।
বাবা সান্তাহার থেকে এসে পৌঁছায় ঢাকাতে রাত ৯টার দিকে। ততক্ষণ তানজিলা মৌলি মিথি কুর্মিটোলা হাসপাতালে। তার লাশ নেবার জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করছে। সিদ্ধান্ত হচ্ছে কখন কোথায় নেয়া হবে লাশ। প্রথমে ঢাকা মোহাম্মদপুর, তারপর কাফরুল এরপর সান্তাহার। কিন্তু অন্যদিনের মতো কালকের সকালটাও সুন্দর ছিল মিথির। বাসা থেকেও বের হয়েছিল সন্ধ্যায় কাজ শেষে ফিরবে বলে। মিথি নিজেও জানতো না, সুন্দর সকালটা সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালো ধোঁয়ায় পরিণত হবে। বাবা তাকে নিতে আসবে শেষবারের মতো। যে বাবা তার প্রতিটি পরিক্ষায় পরিক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন, যে বাবা মিথির বাসায় আসতে একটু দেরি হলে ছুটে গেছেন যেখানে আছে সেখান থেকে নিতে। সে বাবা আজও এলো তাকে নিয়ে যেতে। আহা.. জীবন। আর নিতে পারছি না। চোখ ভিজছে বারবার।
আমার স্ত্রী তুলিকা, সারারাত কান্না করেছে। ঘুমের মধ্যে কান্না করেছে। মিথির খুব ভালো বন্ধুদের একজন তুলিকা। মিথির এই মৃত্যু মানতে পারছে না। শুধু তুলিকা কেন আমরা তার পরিচিত, সান্তাহারের মানুষরাও তার এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। ঝরে গেলো যেই প্রাণ এটার মূল্য কি এতোই হালকা, এতোই কম।
ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে। বনানীর আগুন সান্তাহার পর্যন্ত চলে এসেছে। সান্তাহারবাসীদেরও পোড়াচ্ছে। শোকে কারত আমরা, শোকে পাষাণ হয়ে উঠেছি আমরা। সান্তাহারে সম্ভবত প্রত্যেকটি বাসা-বাড়িতে চলছে শোক। মিথি আর কোনোদিন আসবে না প্রিয় সান্তাহারে। দেখা হবে না ওর বন্ধুদের সঙ্গে। কথা হবে না বাবা আর মার সাথে। মিথির ঘরটি শূণ্যই থাকবে, যেখানে শিশুকাল থেকে বেড়ে উঠেছে মিষ্টি এই মেয়েটি।
বৃহস্পতিবার অফিসে না গেলেও পারতো। গতকাল একটু অসুস্থ থাকলে কি হতো, হয়তো একদিনের জন্য কথা শোনা লাগতো অফিসের কর্মকর্তাদের কিন্তু বাবা-মার কোল তো শূণ্য হতো না। কি নিয়ে বাঁচবে ওর বাবা-মা। সন্তান তো একটাই তাদের। আর কি থাকলো।