রাজধানীর ৯০ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে
পক্ষকাল সংবাদ– রাজধানীর প্রায় ২৭শ বহুতল ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে বহুতল ভবন রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯শর বেশি ভবন। এসব ভবনের প্রায় ৯০ শতাংশেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।
সে হিসাবে প্রায় ২৭শ ভবনই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী ১০ তলার বেশি উচ্চতার ইমারত বহুতল ভবন হিসেবে স্বীকৃত। জানা গেছে, ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন এলাকায় ২২ লাখ স্থাপনা রয়েছে। একতলা থেকে ৬ তলার স্থাপনা ২১ লাখ ১২ হাজার আর ৭ তলা থেকে ২৪-২৫ তলা ভবন আছে ৮৮ হাজার।
এর মধ্যে ১০ তলা এবং ১০ তলার বেশি উচ্চতাসম্পন্ন বহুতল ইমারত রয়েছে ২ হাজার ৯শর বেশি। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, নগরীর বহুতল ভবনের ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের সক্ষমতার ওপর ২০১১ সালে একটি সার্ভে করা হয়। বুয়েট ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে এ সার্ভে পরিচালনা করে। সার্ভের সময় রাজধানীর ৫৩টি ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, নগরীর বহুতল ভবনের ৯০ শতাংশেরই অর্থাৎ প্রায় ২৭শ ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সঠিক পাওয়া যায়নি। এসব ভবনে যারা বসবাস বা ব্যবসা-বাণিজ্যর অফিস করেছেন তারা অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বহুতল যেসব ভবনে সঠিকভাবে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়নি সেগুলোতে অগ্নিকান্ডে প্রাণহানি ঘটতে পারে। এটি থেকে বাঁচতে ভবনগুলো রিপেয়ার করে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম স্থাপন করতে হবে।
আর নতুন বহুতল ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানতে হবে। রাজউক সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের ১ হাজার ৫২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ইমারতের নকশা অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাজউকের। এসব ইমারত নির্মাণে রাজউক প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার নকশার অনুমোদন দেয়।
বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট-১৯৫২ এবং বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি); রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এবং ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী এসব ভবনের নির্মাণকাজ মনিটরিং করার দায়িত্ব রাজউকের। অথচ সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে গড়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। অভিযোগ রয়েছে, ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ইমারত নির্মাণ বাড়ছে। ৬ তলা ইমারতের অনুমোদন নিয়ে ১২ তলা এবং ১৪তলা অনুমোদন নিয়ে ২০ তলা পর্যন্ত ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন করার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
রাজউক থেকে প্রতিবছর যে পরিমাণ ইমারত নির্মাণে নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়, সে পরিমাণ ভবন বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা তার তদারকি রাজউক করতে পারে না। নির্মাণাধীন সব ভবন মনিটরিং করার মতো জনবল রাজউকের নেই এমন অজুহাতে সংস্থাটি এটি করছে না। ফলে এ সুযোগ নিয়ে ভবন মালিকরা ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মাহমুদ খান বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং বিএনডিসিতে ইমারত নির্মাণ কীভাবে করতে হবে তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কিন্তু যারা ইমারত নির্মাণ করছেন তারাই এটি মানছেন না।
ইমারত নির্মাণের শর্ত পালনের তদারকি করছে না প্রতিষ্ঠানটি। নগর পরিকল্পনা শাখার এক কর্মকর্তা বলেছেন, ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় ২২ লাখ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে একতলা থেকে ৬তলা পর্যন্ত স্থাপনা হচ্ছে ৯৬ শতাংশ। ৭ তলা থেকে শুরু করে বহুতল ভবনসহ স্থাপনা হচ্ছে ৪ শতাংশ। সেই হিসেবে ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় ৭ তলা থেকে শুরু করে ২৪-২৫ তলা পর্যন্ত ভবনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮ হাজার। তবে রাজধানীতে বহুতল ভবনের সংখ্যা বেশি নয়। রাজধানীর যেসব বহুতল ভবন রয়েছে তার বেশি রয়েছে মতিঝিল, গুলশান ও বনানী এলাকায়।
বহুতল ভবনগুলোয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি অগ্নি-প্রতিরোধক দরজা; অগ্নি-প্রতিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন নির্মাণ উপকরণ এবং অগ্নি-নিরাপদ সিঁড়ি রাখার বিষয়টি উল্লেখ আছে। কিন্তু এসবের ধার ধারেন না ইমারত মালিকরা। ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিশেষভাবে তৈরি দরজা যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাপ ও আগুন সঞ্চালনের প্রতিরোধ কাজ করে এমন দরজা; অগ্নি-প্রতিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন নির্মাণ উপকরণ এবং অগ্নি-নিরাপদ সিঁড়ি যা বিভিন্ন তলা থেকে ল্যান্ডিং বা লবি দ্বারা সংযোজিত অগ্নি-প্রতিরোধক দরজা দ্বারা মূল ভবন থেকে আলাদা হবে ও ইমারতের বহির্ভাগে খোলা স্থানের সঙ্গে উন্মুক্ত থাকবে।
রাজউকের এক অথরাইজড অফিসার বলেছেন, ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালাÑ ২০০৮ অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভবনের সিঁড়ির প্রশস্ত ন্যূনতম ৫ ফুট হবে। কোনো ভবনের উচ্চতা ১০ তলার বেশি হলে সেই ভবনে ৫ ফুট প্রশস্তের দুটি সিঁড়ি থাকতে হবে। দশতলার বেশি উচ্চতাসম্পন্ন ভবনে ফায়ার সিস্টেম ইক্যুপমেন্ট স্থাপন করতে হবে। ভবন মালিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নিজ উদ্যোগে ফায়ার সিস্টেম ইক্যুপমেন্ট স্থাপন এবং বিষয়টি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ তদারকি করবে। কিন্তু সেটি ফায়ার সার্ভিসকে তা করতে দেখা যায় না।