মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » নাঈম: আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে; আল্লাহর কসম শিখিয়ে দেইনি: জয়
নাঈম: আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে; আল্লাহর কসম শিখিয়ে দেইনি: জয়
পক্ষকাল ডেস্ক-
শিশু নাঈম। রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসের পাইপের ছিদ্র অংশ হাত দিয়ে চেপে ধরে আলোচনায় আসেন। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে আসতেই ছবিটি ভাইরাল হয়। ফেসবুকে কয়েক মিলিয়ন মানুষ ছবিটি শেয়ার করে। এর মধ্যে অনেকেই নাঈমকে বনানীর হিরো বলে অভিহিত করেছেদেস
নাঈমের কাজে মুগ্ধ হয়ে ওমর ফারুক সামি নামে মার্কিন এক প্রবাসী তাকে উপহার হিসেবে ৫ হাজার ডলার দেয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তার পড়াশোনার দায়িত্বও নিবেন বলে জানান।
বিষয়টি আলোচনায় এলে বেশিরভাগ গণমাধ্যমই নাঈমের সাক্ষাৎকার নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় টিভি উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ও তার একটি সাক্ষাৎকার নেন। সেখানে শিশু নাঈমের সাথে তার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে জয় নাঈমের কাছে জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর ফারুক নাঈমকে যে টাকা দিবে তা সে নিবে কি না? আর নিলে তা দিয়ে সে কি করবে?
উত্তরে নাঈম জানায়, টাকাগুলো সে এতিমখানায় দিয়ে দিতে চায়। এ সময় ছেলের এ ইচ্ছায় কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান নাঈমের বাবা-মা।
পরে জয় নাঈমের কাছে জানতে চান, কেনো সে এতিমখানায় টাকা দিবে? উত্তরে নাঈম জানায়, কয়েক বছর আগে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা লুট করে খেয়েছে। তাই এই টাকা সে এতিমদের দিতে চায়।
এই ঘটনার পরই ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় চলছে। কেউ কেউ বলছেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! শিশু নাঈমের মনে রাজনীতির এই মারপ্যাঁচ আসার কথা নয় কোনোভাবেই। এসব জয়ই তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার বলছেন, জয় এই ভিডিওর বেশি কাটতি পেতে এই ঘটনার আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে এই ঘটনার পর নাঈমকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়া সেই ব্যাক্তি নাঈমকে টাকা দিচ্ছেন না বলে শোনা যাচ্ছে। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটাই ছিলো আলোচনার শীর্ষে।
পুরো বিষয়টি অনুসন্ধানে নাঈমের একটি সাক্ষাৎকার নেন গণমাধ্যমকর্মী ও কণ্ঠশিল্পী আমিরুল মোমিনিন মানিক। ফেসবুকে প্রকাশ হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায় সাংবাদিক মানিক শিশু নাঈমকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মা কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে, তোমার পড়াশোনার খরচ বহন করছেন, তোমার নিজেরই টাকা দরকার, তাহলে তুমি কেন সে টাকা নিজে না রেখে এতিমদের দিয়ে দিতে চাও? এটা কী তোমার মনের কথা?’
নাঈমের উত্তর, ‘না, এটা বলতে তারা শিখিয়ে দিয়েছিল।’এর প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার নাজিম জয় ফেসবুকে লাইভে আসেন। তিনি লাইভে এসে বলেন,
‘আসসালামু আলাইকুম। আমি এখন আপনাদের সামনে কিছু কথা বলব। কথাগুলো অত্যন্ত জরুরি। কারণ আপনার সবাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত এবং আপনারা আমাকে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন দিচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন। আমার ফেসবুক হ্যাকড হয়েছে। আমাকে গালাগালি করছেন। কিন্তু আমি একটি কথা আপনাদের খুব দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, নাঈম ছেলেটির আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমি সবসময় সাক্ষাৎকারের অনুষ্ঠান করি, কিন্তু আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে, নাঈমকে আমি কোনো কথা শিখিয়ে দেইনি।
নাঈম, সে যে বক্তব্য দিয়েছে সে এটা কোথাও থেকে শিখে এসেছে কী না আমি জানি না। কিন্তু সে আমার অনুষ্ঠানে বসে নিজ দায়িত্বে এ কথা বলেছে। কোনো জাতীয় নেতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করার সাহস আমার নেই এবং আমি করতেও চাই না। কারণ সবাই সম্মানিত। জাতীয় নেতা যারা একসময় ক্ষমতায় ছিলেন বা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা সবাই সম্মানিত। আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের তাদের নিয়ে কোনো আলোচনা সাজে না। হ্যাঁ, আমি বিশেষ দলের সমর্থক হতে পারি। কিন্তু আমি অন্য দল নিয়ে কটূক্তি করার বা অন্য দলের নেতা নিয়ে কটূক্তি করার অধিকার রাখি না এবং আমি সেটা করিও না।
সেদিন নাঈমের কথাটা শুনে আমি হতবাক হয়েছি এবং দ্বিতীয়বার তাকে জিজ্ঞেস করেছি। আমার সাক্ষাৎকারটা… এমন উত্তর আমি নিজেও আশা করিনি। কিন্তু উত্তর হয়ে গেছে। আমি একটা দায়িত্ব নিতে পারি যে কেন আমি সেটা প্রচার করেছি? আমি মানুষ যা বলে তা অন্য মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। দর্শকের কাছে আমি সবকিছু সঠিকভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা করি।
আপনারা যারা আমাকে ভুল বুঝছেন, আমি আপনাদের একটি অনুরোধ করতে পারি যে, আপনারা আমাকে একদম মিছেমিছি ভুল বুঝছেন, আমার ফেসবুক হ্যাকড করেছেন, আমাকে অপমান করেছেন, আমাকে আপনারা হুমকি দিচ্ছেন, আমার জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু আমি বলব যে, আমি এর জন্য দায়ী না। যে যার যার বক্তব্য দেয়, কোনো বক্তব্য শেখানো নয়। এখন নাঈম ছেলেটি, তার বাবা ছিল, মা ছিল। তার বক্তব্য সে নিজের দায়িত্বে দিয়েছে। সে নিজে কোথা থেকে শিখে এসেছে কী না আমি বলতে পারবো না। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আমি এটা বলিনি। তাকে শিখাইনি। যদি কখনো কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি শিখিয়েছি তাহলে আমি কোনো দিন উপস্থাপনা করবো না। আপনারা না চাইলে আমি এই উপস্থাপনা পেশাই ছেড়ে দেবো।
আপনারা আমাকে অপমান অপদস্থ ও হুমকি দেবেন না। আমি বাঁচতে চাই, থাকতে চাই, কাজ করতে চাই। আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সবার প্রতি সবার কাছে আমার জীবন ভিক্ষা চাই। কেননা আমি যে ধরনের হুমকি পাচ্ছি সে ধরনের হুমকি নিয়ে আসলে বেঁচে থাকা মুশকিল। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন ও আমাকে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।’