‘তোরা যেভাবেই পারিস আমাকে বাইরে নিয়ে যা’
পক্ষকাল সংবাদ-
‘যারা আমার গায়ে আগুন দিয়েছে, তাদের অনেক পরিচিত মনে হয়েছে। তবে আমি তাদের ফেসটা মনে করতে পারছি না। আমাকে একটু চিন্তা করতে দেন দাদা। আমি চিন্তা করে সব বলমু।’ -এভাবেই ভাইয়ের কাছে ওই দিনের ঘটনা নিয়ে কথা বলছিলেন ফেনীর সেই মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি।
আজ সোমবার (০৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দেখা করতে গেলে ভাইয়ের কাছে বিভিন্ন আকুতি জানান দগ্ধ নুসরাত। এ সময় ওই ছাত্রীর মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
নুসরাত বলেন, ‘ভাই, আমি এখানে চিকিৎসায় বাঁচবো না। তোরা যেভাবে পারিস প্রয়োজনে আমাকে বাইরে নিয়ে যা’
ওই মাদ্রাসীছাত্রী বলেন, ‘ভাই, আমার যা কিছু হয়ে যাক, আমার যত কিছু হয়ে যাক। অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগী সবাই যারা আমার গায়ে আগুন দিয়েছে তাদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়।’
যেকোনো মুহূর্তে বোনের যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে জানিয়ে নুসরাতের ভাই বলেন, ‘গতকাল রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে যে চিকিৎসক আমার বোনকে দেখছেন তিনি জানিয়েছেন, ছোট ভাই দেখ এই হাসপাতালে আমি চার বছর ধরে চিকিৎসা দেই। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই হাসপাতালে ৭০ শতাংশ পোড়া অবস্থায় যত রোগী এসেছে, তারা এখান থেকে কেউ বেঁচে ফিরে যেতে পারেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তোমার আপুর শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এখন আবার ৮৫ শতাংশ বলছেন ওনারা। তাহলে চিন্তা কর, ইমপসিবল, কখনো সম্ভব না। এখন তোমরা যদি পারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে ওনাকে দ্রুত দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।’
এদিকে ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষা কেন্দ্রে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন দেওয়া সেই ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আজ তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
এই চিকিৎসক বলেন, ‘মেয়েটির অবস্থা ভালো না। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আমরা তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে মামলা দায়ের পর কারাগারে রয়েছে সে। ওই ঘটনার জেরেই নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয় বলে দাবি করেন তার ভাই মাহমুদুল হাসান।
ভাই মাহমুদুল বলেন, তার সহপাঠীরা নুসরাতকে জানান, তুই অধ্যক্ষের বিষয় নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি কেন করতেছিস। যা হয়ে গেছে সেটা ভুলে যায়। নুসরাত বলে, হুজুর অন্যায় করেছে, যাতে আর কারো সাথে অন্যায় করতে না পারে। এখন এটা আইনিভাবে গেছে আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে।
এদিকে স্বজনদের দাবি, যারা এ কাজটি করেছে। আমরা তাদের সকলের ফাঁসি চাই।
এর আগে, গত বছরের নভেম্বর আলিম ২য় বর্ষের এক ছাত্রীকেও যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে। ওই সময় তাকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও স্বপদে বহাল ছিলেন অভিযুক্ত সিরাজ উদ্দৌলা।