লন্ডন কারও অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে পারে না: খন্দকার মাহবুব
পক্ষকাল ডেস্ক- বাংলাদেশের কোনও আদালতের আদেশের ওপরে নির্ভর করে বিদেশের কোনও আদালত কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে পারে না এবং এ ধরনের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের দেশের কোনও আদালতের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলা দেশের একটি আদালতের আদেশ প্রসঙ্গে রবিবার (২১ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের যে আদেশটি দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ বেআইনি বলেও তিনি জানান।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাক্তার জোবাইদা রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনে আছেন। যুক্তরাজ্য একটি আইনের শাসনের দেশ। সেখানে কারচুপির মাধ্যমে কোনও অর্থ ব্যাংকে জমা দেওয়া যায় না। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যেসব টাকা থাকে— প্রতিটি টাকার ওপরে ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। সে কারণে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমো কোনও টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া সম্ভব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাগজে দেখেছি, আওয়ামী লীগ সব সময়ই রাজনৈতিক অঙ্গনে একটার পর একটা চমক সৃষ্টি করে। আমি মনে করি, লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে তারেক রহমান সাহেবের যে টাকার কথা বলা হয়েছে এটা একটা চমক সৃষ্টি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এমন একটি দেশে আছি, যেখানে আদালত অনেক ক্ষেত্রে নিজস্ব বিচার-বিবেচনা না করে সরকার পক্ষ যা চায়, সেই আদেশটি দিয়ে দেয়। একবারও চিন্তা করলেন না যে, লন্ডন বা যুক্তরাজ্য একটি ভিন্ন দেশ, এদেশের আদেশের ওপর নির্ভর করে সে দেশের সরকার বা আদালত কিছু করবে না। তাই এ ধরনের একটা অযথা চমক সৃষ্টি করেছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারেক রহমানের মানি লন্ডারিংয়ের কোনও অর্থ যুক্তরাজ্য কেন পৃথিবীর কোথাও নেই।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের পরে এবং তার পরবর্তী সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ করে তছতছ করে দেখেছে— খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কোনও অর্থ সে দেশে আছে কিনা। কিন্তু তারা খোঁজ পায়নি। শেষ মুহূর্তে এসে যেহেতু বাজারে একটা গুঞ্জন চলছে যে, ডাক্তার জোবাইদা রহমান হয়তো বাংলাদেশে আসবেন এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহন করবেন। এই গুঞ্জনে জোবাইদা রহমানকে যুক্ত করা হয়েছে।’
তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দেওয়া আদালতের আদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, যে আদেশটি দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ বেআইনি। এই ধরনের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের দেশের কোনও আদালতের নেই।
এই আদেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা, জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আইনি পদক্ষেপ তো আমরা এখানে বসে নিতে পারবো না। যাদের বিরুদ্ধে করেছে, যাদের কথা বলা হয়েছে, লন্ডনে তারা কী করবেন, সেটা তাদের ওপরে নির্ভর করে। আর এটাও আপনাদের কাছে স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, এই আদেশে লন্ডনের কোনও ব্যাংক কারও অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, এটা উনি ওখানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে যাবেন, ওই দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল সেটা আদালতে উপস্থাপন করবেন। আমরা বারবার বলতে চাই— ‘তারেক রহমানকে নিয়ে আসতেছি,বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নিয়ে আসতেছি’, কোনোটাই যখন সফল হয় নাই, এখন চমক সৃষ্টি করার জন্য তারেক রহমান ও তার স্ত্রীকে জনসম্মূখে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা উক্তি করে চমক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।”
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘তদুপরি মনে রাখতে হবে যে, বিদেশের কোনও আদালত বাংলাদেশের কোনও আদালতের আদেশের ওপরে নির্ভর করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে পারে না, যে পর্যন্ত ওই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আবেদন না আসে।’
এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ব্রিটেনের একটি ব্যাংকের তিনটি হিসাব জব্দের (ফ্রিজ) আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ১৮ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি পারমিশনের মামলার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।