রমজানে মাসে শাহরিয়ারের ৭ আলোচিত অভিযান
পক্ষকাল ডেস্ক : জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। বর্তমানে অনলাইন-অফলাইনের অন্যতম আলোচিত নাম। পুরো রমজান মাসজুড়েই বাজার মনিটরিং টিমের নেতৃত্ব দিয়ে জরিমানা করেছেন নামি-দামি সব প্রতিষ্ঠানকে। বিগত এক মাসে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের পরিচালনা করা এমনই কয়েকটি অভিযান থাকছে এই প্রতিবেদনে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ৫২ পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান
উচ্চ আদালতের আদেশে বাজারের বিক্রির জন্য নিষিদ্ধ হওয়া বিভিন্ন ধরনের ৫২টি পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ও তার বাজার মনিটরিং টিম। মে মাসের একাধিক রাজধানী ঢাকার একাধিক বাজার ও দোকানে এই অভিযান চলে। এরমধ্যে ১৮ মে কাওরান বাজার, ধানমন্ডি ও নিউমার্কেট এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানে এসব পণ্য পাওয়া গেলে সেগুলোকে জরিমানা করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এমন অভিযানের প্রশংসা করে খোদ হাইকোর্ট।
বাসে ভোক্তা হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযান
মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অধিদপ্তরের বেশ কয়েকটি বাজার মনিটরিং টিম আন্তঃজেলা বাসগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে। এগুলোর কয়েকটিতে সরাসরি উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেন মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। এরমধ্যে একটি গত ২২ মে মহাখালী এবং কল্যাণপুর বাস টার্মিনালের অভিযান। সে অভিযানে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার রুটে ছেড়ে যাওয়া পাঁচটি পরিবহন কোম্পানিকে বিভিন্ন অংকে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। টিকিটের মূল্য তালিকা প্রদর্শিত অবস্থায় না রাখা, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা না দেওয়ার মতো অপরাধে এই জরিমানা করা হয়। প্রভাবশালী গণপরিবহনগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযান বেশ প্রশংসা পায়।
বিদেশি মোড়কে চকবাজারের পণ্য
মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে পরিচালিত বাজার মনিটরিং অভিযানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এবং ভয়াবহ কিছু অনিয়মের চিত্র। তারই একটি ছিল রাজধানীর চকবাজারে তৈরি নিম্নমানের পণ্য বিদেশি মোড়কে জড়িয়ে উচ্চদামে বিক্রির দৃশ্য। গত ২৬ মে পিংক সিটি শপিং মলের একাধিক দোকানে এমন অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেসব মার্কেটটির ২৬টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মোট তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পচা-বাসি খাবার বিক্রির অপরাধে ক্যাফে এক্সপ্রেসকে জরিমানা
সাধারণ পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টেও অভিযান পরিচালনা করে অধিদপ্তরের বাজার মনিটরিং টিম। গত ২৭ মে রাজধানীর টোকিও স্কয়ারে ক্যাফে এক্সপ্রেস নামে একটি রেস্টুরেন্টে পচা-বাসি খাবার বিক্রি হতে দেখেন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা। স্বনামধন্য একটি রেস্টুরেন্টের এমন অপরাধ দেখে হতবাক হন তারাও। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বিডি বাজেট বিউটি শপকে জরিমানা
ফেসবুকের মাধ্যমে দ্রুত পসার জমানো কসমেটিক্স ও প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রির দোকান বিডি বাজেট বিউটি শপ। ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নতমানের কসমেটিক্স পণ্য আমদানি করে দেশে বিক্রি করা হয় বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার অভিযানে তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উপরন্তু নিম্নমানের কসমেটিক্স পণ্য ও সেগুলো আমদানির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ ও পণ্যগুলোর মেয়াদ সম্বলিত কোনো লেবেল দেখতে পায়নি বাজার অভিযানের কর্মকর্তারা। এই অভিযোগে গত ২৯ মে প্রতিষ্ঠানটির একটি শাখাকে সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই অভিযানেরও নেতৃত্বে ছিলেন শাহরিয়ার।
পারসোনাকে জরিমানা ৬ লাখ
স্বনামধন্য বিউটিশিয়ান কানিজ আলমাস মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পারসোনাকে জরিমানা করার মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় আসেন মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ও তার দল। বিদেশি কসমেটিক্স তকমা দিয়েও আমদানিকারকের স্টিকার না থাকায় পারসোনার দু’টি প্রতিষ্ঠানকে গত ৩০ মে জরিমানা করা হয়। পারসোনা বিউটি পার্লারকে ৩ লাখ টাকা এবং পারসোনা অ্যাডামস পার্লারকে আরও ৩ লাখ টাকা করে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গত বছরের ১২ জুন নকল ও ভেজাল প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারের অপরাধে প্রতিষ্ঠান দু’টিকে যথাক্রমে আড়াই ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আড়ংকে জরিমানা ৬ লাখ
রমজান উপলক্ষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শেষদিনের মতো অভিযানে বের হয় সোমবার (৩ জুন)। মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে একটি বাজার মনিটরিং টিম রাজধানীর উত্তরায় আড়ংয়ের একটি শাখাকে চার লাখ টাকা জরিমানা করলে বিষয়টি রাতারাতি ‘টক অব দ্য টাউন’ এ পরিণত হয়। জরিমানার কয়েক ঘণ্টার মাথায় এই কর্মকর্তার বদলি আদেশ জারি করা হলে বিষয়টি পরিণত হয় ‘টক অব দ্য নেশন’-এ। অবশ্য মঙ্গলবার (৪ জুন) সেই বদলি আদেশ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। একই পণ্য প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রির অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছিল আড়ংকে।
নিজের বাজার অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, এধরনের বাজার অভিযান আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে রমজান মাসে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সরকারের নির্দেশে আমরা এই বাজার অভিযান পরিচালনা করি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যারা বাধা তৈরি করছেন তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করেছি আমরা। আমি ও আমার দলের প্রতিটা সদস্য সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি।