৫ নেতাকে সক্রিয় করার নির্দেশ খালেদার
ঢাকা, ০৬ জুন- ঈদের দিন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের ৭ সদস্য। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে বলেছেন। বেগম খালেদা জিয়া বর্তমান কমিটির প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা জানিয়েছেন এবং দল পূনর্গঠনের জন্য পাঁচজন নেতাকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে বেগম খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল সকালে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান শামীম ইস্কান্দারসহ বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে তিনি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপির রাজনীতির বতর্মান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘ আলাপচারিতা করেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তিনি বর্তমান নেতৃত্ব এবং কর্মপন্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে তার পুত্র তারেক জিয়ার যে কৌশল, তা ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি বলেছেন যে, দল গোছাতে এবং সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে কয়েকজন নেতাকে সক্রিয় করা প্রয়োজন যারা বিভিন্ন কারণে দলে নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে। বেগম খালেদা জিয়া যাদের নাম বলেছেন এবং যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য শামীম ইস্কান্দারকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে;
সাদেক হোসেন খোকা: বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম বিশ্বস্ত নেতা ছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব বেগম খালেদা জিয়া তার কাছে দিয়েছিলেন। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার মূলত ওয়ান ইলেভেনের সময় দূরত্ব তৈরী হয়। কিন্তু এই দূরত্ব তৈরী করার পরও ওয়ান ইলেভেনের পরে বেগম খালেদা জিয়া খোকাকেই ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব দেন। কিন্তু তারেক জিয়ার আধিপত্যের কারণে খোকা অভিমান করে দলের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে নিস্ক্রিয় করে রেখেছেন। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। যদিও তার পারিবারিক সূত্রে বলা হচ্ছে যে, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। কিন্তু একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারেকের প্রতি অনাস্থা এবং অনীহার কারণেই তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া চান, সাদেক হোসেন খোকা দেশে ফিরুক বা না ফিরুক রাজনীতিতে তিনি যেন সক্রিয় হন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে সাদেক হোসেনে খোকার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি গতকালকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে উল্লেখ করেছেন।
মোসাদ্দেক আলী ফালু: বেগম খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক অনুচরদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। তিনি প্রথমে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন এবং ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি রাজনৈতিক সচিব হন। কিন্তু ২০০১ সালে তারেকের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হলেও আস্তে আস্তে ফালুর আধিপত্য ক্ষুন্ন হতে থাকে এবং ফালু কোনঠাসা হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাকে স্থান দেওয়া হলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় হয়ে। বর্তমানে তিনি দুবাইতে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা রয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া মনে করেন, বিএনপিকে সচল করতে এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ফালুর মতো বিশ্বস্ত লোকজন দরকার। তিনি যেখানেই থাকুক না কেন তিনি যেন সক্রিয় হন এবং দল পরিচালনায় যেন ভূমিকা রাখে সে ব্যপারে বেগম খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন।
ড. কামাল সিদ্দিকী: কামাল সিদ্দিকী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার সবচেয়ে আস্থাভাজন আমলাদের একজন। ২০০১ সালের মেয়াদের কামাল সিদ্দিকী বেগম খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ড. কামাল সিদ্দিকী সবসময়ই ছিলেন তারেক বিরোধী। যারা তারেককে এভাবে রাজনীতিতে নিয়ে আসার বিরোধীতা করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কামাল সিদ্দিকী। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় ড. কামাল সিদ্দিকী মালেয়শিয়া চলে যান। বর্তমানে তিনি মালেয়শিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। সেখানে মোনাস ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন। ড. কামাল সিদ্দিকী আমলা এবং সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে মনে করছেন বেগম খালেদা জিয়া। এজন্য তার সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বেগম খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ আল নোমান: বেগম খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্তদের অন্যতম ছিলেন আব্দুল্লাহ আল নোমান। ২০১৬ সালে যখন বিএনপির কমিটি গঠন হয় তখন নোমানকে স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত না করায় অসন্তুষ্ট হন। রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। বেগম জিয়ার অনুরোধে তিনি এখনো দলের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু দলে তার ভূমিকা নেই বললেই চলে। বেগম খালেদা জিয়া মনে করেন যে, চট্টগ্রামে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে এবং বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল করার ক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ আল নোমানের কোন বিকল্প নেই। এজন্য তিনি নোমানকেও সক্রিয় করতে বলেছেন।
এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া হাবিবুন্নবী খান সোহেলকে আরো সক্রিয় এবং তাকে বিএনপিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখতে চেয়েছেন বলে শামীম ইস্কান্দারের কাছে জানিয়েছেন।
লক্ষণীয় যে, বেগম খালেদা জিয়া যে পাঁচজন নেতার নাম বলেছেন, তারা প্রত্যেকেই তারেক বিরোধী হিসেবে পরিচিত এবং তারেক জিয়ার সঙ্গে তাদের নানা বিষয়ে দ্বন্দ্ব। তাহলে কি খালেদা জিয়া তারেকের বিকল্প একটি বিএনপি তৈরী করার জন্য কাজ শুরু করেছেন? বিএনপির একাধিক সূত্র বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া তারেকের উপর অসন্তুষ্ট। তারেকের নীতি এবং কৌশলের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া অবস্থান নিয়েছেন তা দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল। ঈদের দিন এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে প্রমাণ করলেন তিনি তারেকের নেতৃত্বে পছন্দ করছেন না।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার