বেতন ২৪ হাজার, সিডনিতে বাড়ি কিনেছেন মিলিয়ন ডলারে
আফজাল হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
আফজাল হোসেন, তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) অধীনে স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। তার মাসিক বেতন মাত্র ২৪ হাজার টাকা। তবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তিনি বাড়ি কিনেছেন।
এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সূত্র মতে, তার স্ত্রী ২০ হাজার টাকার মতো মাসিক বেতন পেয়েও ঢাকায় বেশ কয়েকটি ভবনের মালিক। তার স্ত্রী রুবিনা খানম ডিজিএইচএস’র অধীনে মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়নের একজন স্টেনোগ্রাফার।
দুদকের কাছে জমা দেয়া সম্পদের বিবরণীতে এই দম্পতি জানিয়েছেন, তাদের ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে একটি প্রকল্পের অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দিয়ে আফজাল হোসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে নিয়েছেন। আর এভাবেই নিজের ভাই, শালাসহ অন্তত সাতজন নিকট আত্মীয়কে মন্ত্রণালয়ের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি।
১০ জানুয়ারি আফজালকে তার সম্পদ সম্পর্কে পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতায় ওই সিন্ডিকেটটি প্রায় কয়েকশ কোটি টাকা লুট করে নিয়েছে।’
সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক পরিচালক এই সিন্ডিকেটের সদস্য।
দুদক গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ও মো. আব্দুর রশিদ এবং সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমানকে আগামী ১৪ জানুয়ারির আগে তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে।
দুদকের নোটিশে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের ব্যাপারে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আফজাল জানান, তিনি ০.২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সিডনীর বাড়িটি কিনেছেন।
এদিকে, দুদকের উপপরিচালক ও চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকারী দলের প্রধান সামছুল আলম বলেছেন, এই খাতে ব্যয়ের পরিমাণটি সম্ভবত আরও বেশি হয়েছে।
সামছুল আলম বলেন, ‘বাড়ি কেনার জন্য অজ্ঞাত উপায়ে বাংলাদেশে থেকে অস্ট্রেলিয়ায় টাকা পাঠিয়েছেন আফজাল।’ এছাড়াও, একইভাবে তিনি মালয়েশিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রেও প্রায় কয়েকশ’ কোটি টাকা পাঁচার করেছেন, যোগ করেন তিনি।
সূত্র জানায়, আফজাল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে অন্তত পাঁচবার সিঙ্গাপুর এবং পরিবারের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে বেশ কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়ায় থেকে পড়াশুনা করেছে। বর্তমানে তারা বাংলাদেশে বসবাস করছে।
‘রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ‘চুক্তিকারক’ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন আফজাল এবং স্ত্রী রুবিনাকে এর স্বত্বাধিকারী বানিয়েছেন।
দুদকের কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ফার্মটি সরকারি হাসপাতাল ও ইন্সস্টিটিউশনগুলোর জন্য অস্ত্রোপচার সামগ্রী সরবরাহ করে থাকে। এর মাধ্যমে এই দম্পতি জনগণের অর্থ লুটে নিচ্ছে।’
আফজালের সম্পদের খোঁজ নিতে গিয়ে দুদকের তদন্তকারী দল দেখেছে যে, রাজধানীর উত্তরায় এই দম্পতির চারটি পাঁচতলা বিল্ডিং এবং একটি প্লট রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা ও ফরিদপুরে বিভিন্ন জায়গায় তাদের এরকম আরও বেশ কিছু প্লট ও বাড়ি রয়েছে।
গতকাল আফজাল জানিয়েছেন যে, তার একটি ‘স্পোর্টস কার’ও রয়েছে।
দুদক সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ শাখার সুপারের কাছে একটি চিঠি দিয়ে এই দম্পতির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলেছে।