ফখরুলের বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন কাদের
পক্ষকাল ১৫ জুন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি বর্তমান বাজেটের ব্যাপকতা বুঝে না। এ কারণে তারা মনগড়া কথাবার্তা বলছে। যেভাবে তারা পূর্বে বাজেট নিয়ে নানান ধরনের উদ্ভট কথাবার্তা বলেছে এবারও এর ব্যতিক্রম করেনি। তারা বাজেটের ব্যাপকতা বুঝলে ধরনের কথা বলতো না।
আজ শনিবার (১৫ জুন)ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক করণীয় সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই বাজেট দেশের শ্রমজীবী মানুষের বাজেট। এ বাজেটে তিন কোটি মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ তৈরী হবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা বাস্তবায়ন করবে অথচ বিএনপি এ বাজেট নিয়ে মিথ্যাচার করছে।
এরআগে, শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রথম বাজেট ‘উচ্চাবিলাসী’। এতে ‘সাধারণ মানু্ষ চাপে পড়বে, ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেট জন-প্রত্যাশা পুরণ করবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাজেট সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি চাপ পড়বে, তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে, বৈষম্য বাড়ছে। ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে, দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভুগছে মধ্য-নিম্নবিত্তরা। তাদের ওপর করের চাপ আরো বেড়ে যাবে।
‘এক কথায় আমরা বলতে পারি, এতে সামগ্রিকভাবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে, মানুষ প্রত্যাশা পূরণ হবে না। কারণ জনগনের বিরুদ্ধে এই বাজেট দেয়া হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাজেটে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো কিছুই আসেনি। তাদের যে প্রধান সমস্যাগুলা- অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-তার কোনটাই সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এক কথায় এই বাজেট জন-প্রত্যাশা পূরণ করবে না, তারা (জনগন) নিবার্চনের মতোই এই বাজেটও গ্রহণ করবে না।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্ধকৃত ব্যয়ের গুনগত মান, মেগা প্রকল্পের ব্যয় ‘অস্বাভাবিক’ বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা, বেকারত্ম, কর্মসংস্থান, সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ে নিয়ে বাজেটে যেসব বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন ফখরুল।
ঘাটতি বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ঋণের পরিমান বৃদ্ধির ফলে সুদ-আসল পরিশোধ করতেই বাজেটে বিশাল ব্যয় হচ্ছে, ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সরকারি চাকরিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি, গণহারে পদোন্নতির মাধ্যমে বেতনকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এই অর্থবছরে বেতন-ভাতার জন্য রাজস্ব আয়ের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। যা কোনো অবস্থাতে যুক্তিযুক্ত বলা যাবে না।
ঋণ বিষয়ে সময়সীমা পরিবর্তনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি ঋণ হিসাবের সময়সীমায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে।পাঁচ বছরের স্থলে তিন বছরের মাথায় ব্যালেন্স শীট থেকে ঋণ অবলোপন করা হবে। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। এর মানে হলো একাউন্টিং ট্রিপমেন্ট দিয়ে দ্রুত ঋণ সাফ করে দেয়া যাবে। ব্যালেন্স শীট আরো আকর্ষনীয় হবে। এটা জনগনকে গোঁজামিল দেয়া যা মোটেও কাম্য নয়। আসলে বিরাটাকার খেলাপি ঋণ জনগনের দৃষ্টির আড়াল করার জন্য এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’
সাধারণ মানুষের মোবাইল ও সিমের ওপর কর বৃদ্ধির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেটে একদিকে সোনার দাম কমানো হয়েছে যা কিনা সমাজের সুবিধাভোগী একটা শ্রেণি ব্যবহার করে। অথচ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। সেই মোবাইল, সিম ও সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বাজেটে।
‘বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সিগারেটের উপর শুল্ক না বাড়ায় সিগারেট কোম্পানির ৩১% আয় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সারা বিশ্বে সিগারেট নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা এক শুভংকরের ফাঁকি।’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। টাকার অঙ্কে এটা বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।
বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল শুরুতেই বলেন, ‘অনির্বাচিত’ এই সরকারের বাজেট দেওয়ার নৈতিক অধিকার নেই।