রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ » ডিআইজি মিজানকে দুদক কেন গ্রেফতার করছে না: সুপ্রিম কোর্ট
ডিআইজি মিজানকে দুদক কেন গ্রেফতার করছে না: সুপ্রিম কোর্ট
পক্ষকাল প্রতিবেদক ১৬ জুন, ২০১৯
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের কথা স্বীকার করার পরও পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে দুদক কেন গ্রেফতার করতে পারছে না, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায় বহুল আলোচিত হলমার্কের চেয়ারপারসন জেসমিন ইসলামের জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানিতে রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দুদকের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। জেসমিন ইসলামের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও আবদুল মতিন খসরু।
এক নারীকে জোর করে বিয়ে ও নির্যাতনের অভিযোগের ঘটনায় আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত চালাচ্ছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরের সঙ্গে সম্প্রতি ঘুষ লেনদেনের তথ্য ফাঁস করে আবারো আলোচনায় আসেন ডিআইজি মিজান।
রোববার শুনানির পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, শুনানির অবস্থায় আদালত বেশ কিছু প্রশ্ন রেখেছেন আমার কাছে। বলেছেন, আপনাদের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এটা তো এলার্মিং দেশের জন্য। আমি বলেছি, তার বিরুদ্ধে পিউনিটিভ অ্যাকশন (শাস্তিমূলক ব্যবস্থা) নেওয়া হয়েছে। তখন আদালত বলেছেন, কিসের পিউনিটিভ অ্যাকশন নিয়েছেন? আপনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর তথ্য পাচারের জন্য পিউনিটিভ অ্যাকশন নিয়েছেন? ঘুষের কোনো অ্যালিগেশন আপনি নেননি, অ্যাকশন নেননি।
কোনো কিছু করেননি। দুদকের আইনজীবী বলেন, আমি বলেছি, ঘুষের জন্য অ্যাকশন নিতে হলে আমাকে একটু অনুসন্ধান করতে হবে। অনুসন্ধান করে আমাকে এফআইআর দায়ের করতে হবে। আইনের বাইরে তো আমি কোনো কিছু করতে পারব না। তখন আদালত বলেন, ডিআইজি মিজান কি দুদকের চাইতে বড়? তাকে তো আপনি অ্যারেস্ট করতে পারছেন না। এই মামলায় তাকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না?
জবাবে বলেছি, আমার যে লোক আমি তাকে সাসপেন্ড করেছি। আর যে মামলায় তার অ্যারেস্ট হওয়ার কথা সে মামলাতে অলরেডি চার্জশিট মেমো অব অ্যাভিডেন্স দেওয়া হয়েছে এবং যিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দুদক একটা অ্যাকশন নিয়েছে। এই তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। নতুন একজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে নতুন করে কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি অত্যন্ত আইনানুগভাবে গুরুত্বসহকারে দুদক দেখছে। কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর দুদক কর্মকর্তা খোন্দকার এনামুল বাছিরকে নিয়ে যেমন দুদক তদন্ত শুরু করেছে, তেমনি ডিআইজি মিজানুর রহমানকে নিয়েও তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়া এবং তদন্তাধীন বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া সংবাদ মাধ্যমে কথা বলার ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছিরের ‘চাপের পর’ তাকে ‘ফাঁদে ফেলতে’ অপরাধ জেনেও ঘুষ লেনদেনের কাজটি করেছেন বলে দাবি করেছেনে ডিআইজি মিজান। যে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে দেওয়ার দাবি তিনি করেছেন, তার হিসাবও দুদককে দেওয়ার জন্য তৈরি আছেন বলে জানান তিনি। নানা ঘটনায় আলোচিত ও বিতর্কিত এই পুলিশ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির।
ডিআইজি মিজান গত ৯ জুন একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির। এর সপক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপও টেলিভিশনকে দেন তিনি, যা প্রচারও হয়। অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে দুদক। তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ একই সঙ্গে বলেছেন, ঘুষ দেওয়াও ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে।