জাতির ললাটে রাজনীতির শনি
লেখাটি অধুনালুপ্ত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ১১ নভেম্বর ২০১৩-তে প্রকাশিত। লেখক আবু ওবাইদা আরাফাত চট্টগ্রামের সাহিত্যিক ও তরুণ সংগঠক। লেখাটি বর্তমান সময়োপযুগী বলে কোনো সম্পাদনা ছাড়াই পুন:প্রকাশ করা হলো।
আবু ওবাইদা আরাফাত: যে যাই বলুক এ দেশ মূলত রাজনীতিচালিত দেশ, যা উপেক্ষা করার মতো উপলক্ষ অন্তত ইতিহাস বলে না। রাজনীতি দেশের জন্য, দেশ মানুষের জন্য। মানুষের অকুণ্ঠ রায়ের মধ্য দিয়েই সরকারের সৃষ্টি। আর এ গণরায় নিয়েই সরকার অধিষ্ঠিত হয় ক্ষমতার মসনদে। সে ক্ষমতা সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের জন্য। সে ক্ষমতার অপব্যবহার যদি স্বয়ং সরকার নিজেই করে, তবে দেশের সামগ্রিক দুর্গতি অবধারিত। মনে পড়ে গেল ত্রিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাকে খুঁজছি এই কালজয়ী গানের দুটি লাইন-‘কি বলার কথা কি বলছি, কি শুনার কথা কি শুনছি…’ সে নির্বাচিত সরকারই গদিতে আরোহণের পর বনে যায়-দেশ নয়, দলের সরকার। নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ ঠিকানা বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব শাখাসহ তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে দলবাজির নগ্ন প্রতিযোগিতা। সরকারের ইশারায় চলে বিরোধী নিপীড়নের জাতীয় মহড়া, জুলুম-নির্যাতন ও গণগ্রেফতার। অতঃপর নাগরিকের শেষ আশ্রয়স্থল বাকস্বাধীনতার হানা। সে হামলার বার বার শিকার হয়ে কারাগারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে মজলুম সাংবাদিক দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান। দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দিয়ে সরকার বাকশাল কায়েমের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত। হাতেগোনা কয়েকটি প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা ছাড়া বাকি সব সরকারের পা-চাটা কুকুরে পরিণত হয়েছে। চলছে সংলাপ সংলাপ খেলা। ফোনালাপে প্রকাশ পেল-দেশনেত্রীদের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। একদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দলের দফায় দফায় লাগাতার হরতাল, অন্যদিকে সর্বদলীয় অধীনে সরকারি দলের অনড় অবস্থান। এই অমীমাংসিত রাজনৈতিক সঙ্কট ও অবধারিত সংঘাতের ফলে পুরো জাতি আজ শঙ্কিত, হতাশায় নিমজ্জিত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলী হয়ে প্রতিনিয়ত খালি হচ্ছে শত শত মায়ের বুক। জাতি অবিলম্বে এ সঙ্কট থেকে উত্তোরণ চায়। চায় এর রাজনৈতিক সমাধান। দুই দলের পরস্পরের মধ্যে নেই বিন্দুমাত্র বিশ্বাস। যার ফলশ্রুতিতে বিগত ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য দুর্বার আন্দোলন করে, অতঃপর দেশে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা পায়। অথচ তারাই আজ এর ঘোর বিরোধিতায় ব্যস্ত। এমতাবস্থায় দেশকে অনিবার্য রাজনৈতিক বিপর্যয়, দেশের জান-মাল তথা অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে দলনিরপেক্ষ সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে প্রধান করে নির্বাচন দেয়া আজ সময়ের দাবি। আর লাশ নয়, দুই দলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।