আকিজ পরিবারের বিরুদ্ধে ‘নির্যাতিত’ পুত্রবধূর মামলা
অনলাইন ডেস্ক -
মামলার প্রধান আসামী আকিজ ফুটওয়্যারের এমডি শেখ মমিন উদ্দিন ও তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা সিদ্দিকী। ছবি: যুগান্তর
মামলার প্রধান আসামী আকিজ ফুটওয়্যারের এমডি শেখ মমিন উদ্দিন ও তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা সিদ্দিকী। ছবি: যুগান্তর
দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ‘নির্যাতিত’ পুত্রবধূ নাজিয়া আহম্মেদ। বিষয়টি এতদিন লুকিয়ে রাখলেও সোমবার সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টগুলো যুগান্তরের হাতে এসেছে।
শ্বশুর শেখ মমিন উদ্দিন ও শাশুড়ি আঞ্জুমান আরা সিদ্দিকীসহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৯ মে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামীরা হচ্ছেন- মো. রেজাউল ইসলাম, জুলেখা আক্তার এবং মো. হায়দার আলী। মামলা নম্বর ১৩১২/২০১৯।
আকিজ গ্রুপের মালিক শিল্পপতি শেখ আকিজউদ্দিনের তিন স্ত্রীর মধ্যে শেখ মমিন উদ্দিন প্রথম ঘরের মেজ সন্তান। শেখ মমিন উদ্দিনের দুই স্ত্রীর মধ্যে প্রথম ঘরের ছেলে শেখ নাফিজ উদ্দিন (ফাহিম)-এর স্ত্রী এই মামলা করেছেন। শেখ মমিন উদ্দিন পৈত্রিক সূত্রে আকিজ গ্রুপ থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছেন। একটি আকিজ ফুটওয়্যার অন্যটি সাফ লেদার। দুই প্রতিষ্ঠানেরই তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এই মামলার আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ এনে গত বছর ১২ মার্চ ধানমন্ডি থানায় শ্বশুর-শাশুড়ির নামে সাধারণ ডায়েরি করেন নাজিয়া আহম্মেদ (জিডি নম্বর ৪২৮)। সাধারণ ডায়েরির পরেও তাকে নানান সময় নির্যাতন করা হয় এবং এ বিষয়ে থানা থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত মামলার সিদ্ধান্ত নেন। থানা মামলা না নিলে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন।
নাজিয়া আহম্মেদ অভিযোগ করে যুগান্তরকে জানান, শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী তাকে নিয়মিত মারধর করেন। শাশুড়ি গৃহসহকর্মীদের সহায়তায় তাকে নির্যাতন করেন ও তার নামে টাকা চুরির মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। এই মামলায় আড়াই বছরের সন্তানসহ কারাবাসও করতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে মারধর ও টাকা চুরির অভিযোগে মামলার কথা অস্বীকার করেছেন নাজিয়ার শাশুড়ি আঞ্জুমান আরা। মামলায় যাকে সাক্ষী করা হয়েছে সেই গৃহকর্মী জুলেখাও মামলায় আনা অভিযোগের বিষয়গুলো মিথ্যা বলে জানিয়েছেন।
নাজিয়া বলেন, ‘ফাহিম প্রায়ই আমাকে মারধর করে। আর সেটা সহ্য করতে না পেরে গতবছরের অক্টোবরের ১১ তারিখ আমি অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খাই। এরপর সেইদিন রাতে আমার শাশুড়ি আঞ্জুমান আরা আমার নিকেতনের বাসায় এসে রাত ৯টার দিকে আমাকে তার ধানমন্ডির বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু তারা আমাকে কোনো চিকিৎসা করাননি। আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। এরপর ১৩ তারিখ বিকেল থেকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকেন শাশুড়ি।
এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার শাশুড়ির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর শ্বশুরের সঙ্গেও আমার কথা কাটাকাটি হয়। তখন তিনি আমার বাবা-মাকে নিয়ে গালিগালাজ করেন। এরপর আমার শাশুড়ি ও বাসার তিন কাজের লোক হায়দার, রেজা ও জুলেখা আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।
আর সেইদিন রাতেই ড্রাইভারকে দিয়ে আমাকে নিকেতনের বাসায় পাঠানো হয়। তখন আমি সেই রাতেই ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। এরপর ১৪ তারিখ আমি ধানমন্ডি থানায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৭২৪) করি। আর এর তদন্তের দায়িত্ব পড়ে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক তৌকিরের উপর। কিন্তু তিনি কোনো তদন্ত করেননি।
নাজিয়া সাধারণ ডায়েরি করার দুইদিন পর ১৭ অক্টোবর ওই থানায় তার শাশুড়িও একটি মামলা করেন। সেটিতে আসামি করা হয় নাজিয়া ও তার মাকে।
আঞ্জুমান আরার করা ওই মামলায় বলা হয়েছে, ‘২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি আমার ছেলে ফাহিমের সঙ্গে নাজিয়ার বিয়ে হয়। এরপর তারা বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকতো। গত ১৩ অক্টোবর (২০১৮) রাত সাড়ে ৮টায় আমার ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে নাজিয়া অশ্লীল গালিগালাজ করে, কাজের মহিলা জুলেখাকে মারধর করে। ওই সময় বাসায় থাকা অন্য কাজের লোকদের সঙ্গে নিয়ে আমি জুলেখাকে বাঁচাতে যাই। তখন আমাকে হত্যা করার জন্য সে (নাজিয়া) রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে হত্যার হুমকি দেখায়। এছাড়া, বাসায় সবাইকে অবরুদ্ধ করে বাসার মালামাল ভাংচুর এবং আমার ব্যাগ থেকে ১৫ হাজার টাকা চুরি করে।’
নাজিয়া জানান, শাশুড়ির করা মামলা তদন্তেরও দায়িত্ব পেয়েছেন ধানমন্ডি থানার এসআই তৌকির। অথচ তিনি নাজিয়ার করা সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে কোনো তদন্তই করেননি। আক্ষেপ করে নাজিয়া বলেন, ‘আমার তো কেউ নেই, টাকাও নেই। তাই বলে কি আমি বিচার পাব না?’
টাকা চুরির অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে নাজিয়া বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি স্বামী ফাহিমকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন ব্যবসার জন্য। সে হিসেবে তিনি ফাহিমের কাছে ৩৫ লাখ টাকা পান। তার নিজের বুটিকের ব্যবসা আছে। তিনি কেন শাশুড়ির ব্যাগ থেকে ১৫ হাজার টাকা চুরি করতে যাবেন, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোমবার সন্ধ্যায় মামলার প্রধান আসামী শেখ মমিন উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
দ্বিতীয় আসামী আঞ্জুমান আরা সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার নামে মামলার নোটিশ এসেছে। কিন্তু আমি যাইনি। কারণ আমার হাজবেন্ডের বড় ভাই ডাক্তার মহিউদ্দিন ব্যাপারটা দেখছেন। আর যার কাছে যাবো উপ-পরিদর্শক কামরুল ইসলাম; তার কেউ একজন অসুস্থ ছিলেন বলে যাওয়া হয়নি।’
সুত্র যুগান্তর