জিয়ার আমলে হত্যাকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি ইনুর
ডেস্ক পক্ষকাল-
- প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত কমিশন গঠন ও শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে হাসানুল হক এই দাবি জানান। এ সময় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া সভাপতিত্ব করেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, জিয়াউর রহমান সশস্ত্র বাহিনীকে যারা ব্যবহার করে সশস্ত্র বাহিনীর গায়ে কলঙ্ক লেপন করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের লোহমর্ষক হত্যাযজ্ঞ দেশবাসীর জানা উচিত। সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন এবং শ্বেতপত্র প্রকাশ করা উচিত।
এ সময় তিনি নিজের কারাবাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ কেন? পৃথিবীতে এমন হত্যাকাণ্ড হয়নি। দেশবাসী জানুক জেনারেল জিয়ার আমলে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ ক্ষমতা দখলদার জিয়াউর রহমান নিজের তৈরি সামরিক আইন এবং আর্মি অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে গঠিত সামরিক আদালতে কেস নম্বর-১, ১৯৭৬ সালের মিথ্যা সাজানো মামলায় প্রহসনমূলক বিচারে জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান আবু তাহেরকে জুলাই এর ২১ তারিখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। সেই মিথ্যা মামলায় বেআইনিভাবে গঠিত সামরিক আদালতে আমিসহ অনেক রাজনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তা, এনসিও, জেসিও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হই। আমি ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮০ সালের জুন পর্যন্ত লাগাতার ৫ বছর জিয়ার কারাগারে বন্দি ছিলাম।
ইনু আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকিরের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ ২০১১ সালের ২২ মার্চ একটা রায় দেয়। আমি, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, মেজর জিয়াউদ্দিন সবাই মিলে একটা রিট করেছিলাম। সেটা ২২ মার্চ আদালতের রায়ে নিষ্পত্তি হয়।
তিনি বলেন, কর্নেল আবু তাহেরে ফাঁসি অবশ্যই বিচার বর্হিভূত স্পষ্ট খুন। ফাঁসি কার্যকরণের কাজ নিন্দনীয় খুনি হিসেবে বিবেচিত। তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করে তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ দান এবং কর্নেল তাহেরকে দেশপ্রেমিক ও শহীদ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ এসেছে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, জিয়ার আমলে নিজের করা আর্মি অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে অনেক সেনাকর্মকর্তা, এনসিও, জেসিও সেনাকে তড়িঘড়ি করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এদের সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এমনকি মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে দেওয়া হয়নি। এটা সম্পূর্ণ জুডিশিয়াল মার্ডার। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর রহস্যময় ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তৎকালীন দু’ মাসের মধ্যে ১ হাজার ১৪৩ জন সেনাকে ফাঁসিতে অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়। ক্যাঙ্গারু কোর্টে ৫০০ কমকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল। পশুপাখির মতো টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেয়ে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো।
প্রাণ না যেতেই রগ কেটে দেওয়া হতো। বাংলাদেশ কেন? পৃথিবীতে এমন হত্যাকাণ্ড হয়নি। এই হত্যার কমিশন গঠন করে এর তদন্ত এবং শ্বেতপত্র প্রকাশ করা উচিত।
সূত্র: বাংলা নিউজ