দুর্নীতিবাজকে ধরিয়ে দিতে ফেসবুকে সোহেল তাজের স্ট্যাটাস
পক্ষকাল ডেস্ক-
১৩ জুলাই- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বৃহস্পতিবার তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ‘আলাদিনের চেরাগ!’ শিরোনাম দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন চলার পথের কিছু অভিজ্ঞতা আর কাহিনী নিয়ে কিছু ছোট গল্প লেখার। বিভিন্ন শিরোনামে ২-৩টা সিরিজ হবে জানিয়ে বলেছিলেন, প্রথম সিরিজের নাম ‘একটি ছেলে ও আলাদিনের জাদুর চেরাগ’। সে ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার কার্টুনে ‘দুর্নীতি থামান এখনই’ স্লোগানে দুর্নীতি দমন এবং দুর্নীতিবাজকে ধরিয়ে দিতে একজন নাগরিকের করণীয় কি কি- সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন তিনি। তাঁর এই লেখায় একজন দুর্নীতিবাজের শূন্য অবস্থা থেকে বর্তমান অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে। তবে কে এই দুর্নীতিবাজ সে সম্পর্কে খোলাখুলি জানাননি সোহেল তাজ।
ফেসবুক পেজে তিনি ওই দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করতে একটি তালিকা দিয়েছেন। ওই তালিকায় ৯টি তথ্য দিয়েছেন। তালিকাটি নিম্নরুপ- ১. হটাৎ তাঁদের ৩-৪ কোটি টাকার তিন তলা পাকা বাড়ি, ২. বড় ভাই ৫-৬ কোটি টাকার ইট খোলার মালিক, ৩. পেট্রল/সি এন জি ফিলিং স্টেশন প্রক্রিয়াধীন, ৪. গ্রামের স্কুলে শত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে ৩-৪ কোটি টাকা ব্যয় করে অনুষ্ঠান, ৫. টিভি চ্যানেলের মালিক/অংশীদার, ৬. ঢাকা শহরে নামে বেনামে একাধিক রেঁস্তরা, ৭. নামে বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট/এপার্টমেন্ট, ৮. আমেরিকা বা ইউরোপে মিলিয়ন ডলার বাড়ি, ৯. ২-৩ গাড়ি একত্রে যার মূল্য ৩ কোটি টাকার উর্ধ্বে এবং ১০. ….।
ফেসবুক পেজে আরো লিখেছেন, আজ থেকে ৪৮ বছর আগে এই বাংলার মানুষ একটি স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তিরিশ লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আর সেই স্বপ্ন ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও এমন একটি দেশ যেখানে সকল মানুষের থাকবে সমান অধিকার। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে- গরীব/ধোনি, নারী/পুরুষ সবার সমান অধিকার ও সেই স্বপ্নের দেশে থাকবে ন্যায় বিচার ও এমন সমাজ ব্যবস্থা যেখানে সকল নাগরিক সমান সুযোগ পাবে তার যোগ্যতা অনুযায়ী। এমন একটি সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ যেখানে সবার জন্য থাকবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বাসস্থানের ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা, এমন একটি সোনার দেশ যেখানে চিকিৎসার অভাবে কেউ মারা যাবে না। কত সুন্দর এই সোনার বাংলার স্বপ্ন, তাই না?
সোহেল তাজ লিখেন, আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই কাংক্ষিত লক্ষ্যের দিকে, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একটি সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। এই অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে ও আরো গতিশীল করতে আমাদের সকলের কিছু না কিছু করণীয় আছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মতে, একটি সুস্থ সবল মানুষের জীবন ও স্বপ্ন যেমন কেড়ে নিতে পারে ক্যান্সারের মত একটি ব্যাধি। ঠিক তেমনি একটি জাতির প্রাণ ও স্বপ্ন ধূলিস্যাত্ করতে পারে আরেকধরনের ক্যান্সার যার অপর নাম দুর্নীতি। আজ আমাদের কাঙিক্ষত সেই সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এই দুর্নীতি নামক ক্যান্সার। আমরা জানি বর্তমান সরকার দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে। এর নমুনা আমরা দেখেছি কিছু হাই প্রোফাইল ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে। যা সকল সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে।
সোহেল তাজ আহ্বান জানিয়ে লিখেন, তাই আজকে আমাদের সকলের দায়িত্ব সরকারকে এই মহতী উদ্যোগে সহায়তা করা। কেননা আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে এর জন্য দায়ী ও আমি আপনি সবাই এর সঙ্গে জড়িত। কারণ আমরা নিজেরা সরাসরি দুর্নীতি না করলেও আমরা এর সাক্ষী ও বললে ভুল হবে না যে আমরা কাউকে না কাউকে চিনি যে চোখের সামনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। কিন্তূ আমরা শুধু চুপি চুপি আলাপ সমালোচনা করেছি। কোনো ব্যবস্থা নেই নাই। এখন হয়তো প্রশ্ন করবেন, কি আর ব্যবস্থা নিবো, আমাদের কথা কেউ কি শুনবে? হ্যা, শুনবে আমরা যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় সহায়তার হাত বাড়াই।
তিনি দুর্নীতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখেন, সর্বপ্রথম আমাদের বুজতে হবে দুর্নীতি কি এবং এর সংজ্ঞা জানতে হবে। দুর্নীতি (ইংরেজি: Corruption) দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতিকে নির্দেশ করে। বৃহত্ পরিসরে ঘুষ প্রদান, সম্পত্তির আত্মসাত্ এবং সরকারী ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত।
দুর্নীতির সজ্ঞা আমরা বুঝলাম এখন এর আলামত কিভাবে চিহ্নিত করতে হয়, সেই দিকে দৃষ্টি দেই। ধরুন কোনো এক গ্রামের ছেলে যার বাবা হয়তো ১০ বছর আগে একটা ছোট্ট কাঠের সও মিল চালিয়ে কোনো মতে পরিবার চালাতো ও আর আজ…। (এরপর তিনি ৯টি তথ্য দেন, যা শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে।)
সোহেল তাজের বর্ণনায়, এখন এইসব দেখে আপনি বলছেন, আরে এইটা তো আমাদের গ্রামের রোকনের (রুপক নাম) কাহিনী এবং ওকে নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনাও করেছেন বন্ধু বান্ধব আর পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু এ নিয়ে আর কিছু করেন নাই। কারণ কিছু যে করার আছে সেটা হয়ত আপনি জানেনও না। এই ধরণের দুর্নীতিবাজরাই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে- নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত আর মিসগাইড করছে।
তিনি বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে লিখেন, এদেরকে চিন্নিত করতে হবে এবং যথাযথ কতৃপক্ষকে জানাতে হবে। সাধারণত এদের আয় (ইনকাম) এর সঙে ব্যয় আর সম্পত্তির মিল থাকে না। আর এসব যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব হচ্ছে NBR (ন্যাশনাল রেভিনিউ বোর্ড)-এর এবং পরবর্তীতে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করার দায়িত্বটি দুর্নীতি দমন কমিশনের।
সব শেষে সোহেল তাজ লিখেন, একজন নাগরিক তাহলে কি প্রক্রিয়াতে অভিযোগ করতে পারে কোনো সম্ভাব্য দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে? এই বিষয়ই আমি আগামীতে জানতে চাইবো NBR এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে- হয়ত ফেইসবুক লাইভ এর মাধ্যমে।