ভাড়াটিয়া সংকটে কুমিল্লার বাড়িওয়ালারা
মনির হোসেন, কুমিল্লা: ভাড়াটিয়া ও গ্যাস সংকটের কবলে কুমিল্লার বাড়িওয়ালারা। ‘ভাড়াটিয়া আবশ্যক! সব সুবিধা দেওয়া হবে! - শিরোনাম পড়ে অবাক হলেও সত্যি যে, বাড়ি ভাড়া ও গ্যাস সংকটে আছেন কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাড়িওয়ালারা। গত ৪-৫ মাস থেকে নগরীর হাউজিং, বাগিচাগাঁও, ঠাকুপাড়া, নতুন চৌধুরীপাড়া, রেইসর্কোস, তালপুকুর পাড়, ছোটরা, ভাটপাড়া, কাপ্তান বাজার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, চাঁনপুর, বিষ্ণুপুর, ঝাউতলা, অশোকতলা, মোগলটুটি, দক্ষিণ চর্থা, টমসনবিজ হাজীবাড়ী সড়ক, কালিয়াজুড়ি, নুরপুর, মুরাদপুরও বাদুরতলাসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বর্পূন এলাকাগুলোতে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়া ও গ্যাস সংকটে পড়ে আছে সব জানা গেছে। অপর দিকে পুরনো ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া কমিয়ে মাসুল গুণতে হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বাড়িওয়ালারা।
এদিকে কুমিল্লার বিভিন্ন রিয়েল এস্টট হাউজিং গুলোর ঘুরে দেখা গেছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগের অভাবে শত শত ফ্ল্যাট বর্তমানে খালি পড়ে আছে। এসব ফ্ল্যাটে হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। ফলে দেশি-বিদেশি ক্রেতা, জমির মালিক ও ডেভেলপাররা চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় আছেন।
নগরীর কালিয়াজুরী এলাকার গৃহবধু মমতাজ বেগম বলেন- র্দীঘ কয়েকদিন যাবত প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে গ্যাস চলে যায়, আর বিকেল ৩টা-সাড়ে ৩টায় আসে। তিনি আরও বলেন- গ্যাসের অভাবে রান্না-বান্নার কাজে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সংকট থেকে শীঘ্রই রেহাই পেতে চান ওই গৃহবধুসহ ভুক্তভোগীরা।
নগরীর পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকারবাসিন্দা অ্যাড. সানজিদা হক (শিপা) বলেন- সকালে বাচ্চাদেরকে স্কুলে পাঠানোর জন্য গ্যাসের রান্না করা খাবারের পরির্বতে ফাস্টফুড খাইয়ে স্কুলে পাঠাতে হয়। সকালের চা-নাস্তা তৈরী না করে আগে ভাত রান্না করতে হচ্ছে। তার পরও আধা-কাঁচা খেতে হচ্ছে।
এদিকে নগরীর কয়েকটি বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, নগরীর আশপাশে কয়েকটি স্কুলের সামনে বাসার চাহিদা বেশি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুরনোদের রাখার চেয়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা বাড়িয়ে নতুন ভাড়াটিয়া পেতে আগ্রহী হন বাড়ীর মালিকরা। গত তিন বছরে একাধিক ভাড়াটিয়া পরিবর্তন হয়েছে ওই সব বাড়িগুলোতে।
সরেজমিন জানা গেছে, গত কয়েক মাসে হাউজিং এস্টেট এলাকায় ভাড়াটিয়া সংকটের কারণে ১হাজার থেকে ২হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া কমিয়েছেন বেশ কয়েকজন বাড়ির মালিক। তারপরও কয়েক মাস ধরে ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
পুরাতন চৌধুরী পাড়া বাড়ির ভাড়া তোলার দায়িত্বে থাকা আমেনা বেগম বলেন,আগের দেখা যেত ভাড়াটিয়া চলে যাওয়ার পর বাড়ি বাড়িভাড়া দেওয়া হবে সাইনবোর্ড লাগানোর পর ভাড়াটিয়া এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যেত। আর এখন বাসাভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না।হঠাৎ ভাড়াটিয়া কমে যাওয়ার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি আরা বলেন, অন্য এলাকায় ভাড়া বাড়লে ভাড়াটিয়া কমে। কিন্তু এ এলাকায় ভাড়া কমানোর পরও ভাড়াটিয়া কমে যাওয়া যাচ্ছে এটা আসলেই অবাক হচ্ছি!
নগরীর ঝাউতলা এক বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ভাড়া বাড়ানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ভাড়াটিয়া যাচ্ছে। তাহলে ভাড়া কমিয়ে হলেও ভাড়াটিয়া ধরে রাখতে হবে। শুধু বাড়ি ভাড়াই নয়, ভাড়াটিয়া কমে যাওয়ায় দোকানদারদের ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বর্তমানে গ্যাসের যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে শিল্প-কারখানা ও সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। আর বাসা-বাড়িতে দিনের বেলায়ই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস থাকলেও গ্যাসের লো-প্রেসারে রান্নার কাজ চালিয়ে নেওয়াটা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এতে অনেককেই অতিরিক্ত ব্যয়ে বাইরে খেতে হচ্ছে। বাগিচাগাঁও এলাকার দেলোয়ার হোসেন জানান, শীত শুরুতেই বাগিচাগাঁওসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসসংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় রাত জেগে গৃহস্থালি কাজ করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গ্যাসসংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নাস্তাটুকুও বানানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা চাপাপুরস্থিত বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের এক কর্মকর্তা এ প্রতিনিধিকে জানান- প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণেই এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার সময় গ্যাস আস্তে আস্তে সরবরাহ হচ্ছে, যতটুকু গ্যাস পাচ্ছি পুরাটাই সরবরাহ করছি। শীতের প্রকট কমলেই এ সমস্যা আর থাকবে না।
অন্যদিকে, গ্রাহকরা বলছেন- প্রতিদিন সকাল ৮টার পর গ্যাস আস্তে আস্তে চলে যায়, আর বিকেল ৩টা/ সাড়ে ৩টায় আসে। গ্যাস চলে গেলে অস্থায়ীভাবে ৩টি ইট দিয়ে ছুলা তৈরী করে গাছের পাতা/ কাঠের লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না-বান্না করতে হচ্ছে। এ সংকট হতে অচিরেই পরিত্রাণ পেতে চান কুমিল্লাবাসী।