রবিবার, ২১ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি » অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ
অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ
পক্ষকাল সংবাদ-
ইউরোপে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়াবলীতে আরও জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক কূটনৈতিক বিষয়ের বাইরেও আমাদের অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে। গতকাল শনিবার (২০ জুলাই) লন্ডনে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এনভয় কনফারেন্সে বা দূত সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশের ১৫ জন রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং স্থায়ী প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনও। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। সম্মেলনে রোহিঙ্গা, অভিবাসন এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন নিয়েও কথা হয়। কথা হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনেরও।
প্রধানমন্ত্রী দূতদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেন ও পরামর্শ দেন। ইউরোপে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করা, সেখানে বাণিজ্য প্রসার এবং দেশে বিনিয়োগে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করার ব্যাপারে পরামর্শ দেন তিনি।
দ্রুত পরিবর্তনের পৃথিবীর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আরও গভীর ও শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপনের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, কিভাবে আমাদের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানো যায় এবং বিদেশি বিশেষ করে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোতে দক্ষ জনশক্তি রফতানি করা যায় সেই বিষয়ে আমাদের সুযোগ খুঁজে দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন দক্ষ তরুণ প্রজন্ম আছে যারা বিশ্ব বাজারে কাজ করার জন্য যোগ্য।
দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে এমন একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে নয়টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হবে। দূতদের তিনি সংশ্লিষ্ট দেশের বাজার যাচাই করে অর্থনৈতিক উন্নতির ব্যাপারে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন দূতদেরও তিনি এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করার তাগিদ দেন। একইসঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ৮ শতাংশের ওপর জিডিপি নির্ধারণ করেছি। আগামী অর্থবছরে এর হার ৮.১২ শতাংশ করার লক্ষ্য আমাদের। একইসঙ্গে ২০২০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় হবে ২ হাজার মার্কিন ডলার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আর কারও ওপর নির্ভর করতে হয় না। আমরা বাজের ৯০ শতাংশেই নিজেদের অর্থ থেকে ব্যয় করতে পারছি। তিনি বলেন, তবে নির্বাচনে হেরে গেছে এমন কিছু দলসহ কয়েকটিপ গোষ্ঠী বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যহত করতে চায়। বিশেষ করে বিএনপির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অংশ না নিয়ে তারা নির্বাচনি ব্যবসা করতে চেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর এসব প্রচারণায় বিশ্বাসী নয়। বরং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের ওপর আস্থা রেখেছেন তারা।
পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গিয়েছেন সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কাও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই দর্শন অনুসরণ করেই বাংলাদেশে বিশ্বের কাছে সম্মানের আসন অর্জন করেছে। এই পররাষ্ট্র নীতিতে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনায় সমাধান হয়েছে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল চুক্তির। একইভাবে রোহিঙ্গা সংকটও সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্মেলনে যে সব দূত যোগ দেন তারা হলেন- আবু জাফর (অস্ট্রিয়া), মো. শাহাদৎ হোসেন (বেলজিয়াম), মুহম্মদ আবদুল মুহিত (ডেনমার্ক), কাজী ইমতিয়াজ হোসেন (ফ্রান্স), ইমতিয়াজ আহমেদ (জার্মানী), জসিম উদ্দিন (গ্রীস), আবদুস সোবহান সিকদার (ইতালি), শেখ মোহাম্মদ বেলাল (নেদারল্যান্ডস) , মুহম্মদ মাহফুজুর রহমান (পোল্যান্ড), রুহুল আলম সিদ্দিক (পর্তুগাল), ড. এস এম সাইফুল হক (রাশিয়া), হাসান মোহাম্মদ খন্দকার (স্পেন), নাজমূল ইসলাম (সুইডেন), শামিম আহসান (সুইজারল্যান্ড) এবং সাইদা মুনা তাসনীম (যুক্তরাজ্য)। তারা প্রত্যকেই বিভিন্ন কার্যাবলীর উপস্থাপনা করেন। একইসঙ্গে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তারা।
আগামী ৫ আগস্ট দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।